The Police Act, 1861 এর ধারা ২ নং প্রভিশন অনুযায়ী "পুলিশ ফোর্স" বা পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়েছিলো। যেমন টি আইনে বলা আছে- " The entire police-establishment under Government shall, for the purposes of this Act, be deemed to be one police-force, and shall be formally enrolled; and shall consist of such number of officers and men, and shall be constituted in such manner, as shall from time to time be ordered by the Government"। এই আইন বাস্তবায়নে বিধিমালা হিসেবে পরবর্তিতে, পুলিশ রেগুলেশন অফ বেঙ্গল, ১৯৪৩ গৃহিত হল। পুলিশ রেগুলেশন এক্ট এর মাধ্যমে একটি বাহিনী তার কর্মকান্ড পরিচালনা করে। বাংলাদেশ পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জননিরাপত্তা বিভাগের আওতায় একটি দপ্তর। মূলত, সরকারের অন্যান্য বিভাগের অধীন যেমন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর,আনসার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স,জেল কর্তৃপক্ষ প্রভৃতির মত একটি বাহিনী। মৎস বিভাগ, বিজিবি প্রভৃতির মতই তারা একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
বাহিনী হিসেবে, তাদের দায়িত্ব মূলত আইন শৃংখলা রক্ষায় সরকার কে সহায়তা করা। কোন বাহিনী কাজ হলো সিভিল কর্তৃপক্ষের আদেশ প্রতিপালন করা, এবং আইন শৃংখলা রক্ষা ও অপরাধ দমনে সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে গৃহিত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। এছাড়া, সরকারি বিধিবদ্ধ উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা। এছাড়া, আদালত এর জুডিশিয়াল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন,আদালতের নির্দেশে তদন্তের মাধ্যমে আদালত কে সহায়তা করা করা।
সারা পৃথিবীতেই অস্ত্রধারীদের হাতে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয় না, কেবল নিজের ব্যক্তি জীবন ও সম্পদ এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবহার ব্যতীত।
একটি বাহিনীর কাজ হলো সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আদেশ, নির্দেশনা এবং সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করা। বাহিনী কেবল তার দায়িত্ব পালনে নিজস্ব ফোর্স এর ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে,চেক এন্ড ব্যলেন্স রক্ষার জন্য অভ্যন্তরীণ কাজের বাইরের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাহিনীর আওতার বাহিরে রাখা হয়।
সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পুলিশ বাহিনী-কে প্রা:য়শ, পুলিশ প্রশাসন বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, সংবাদ কর্মী, সাধারণ জনগণ, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা / দপ্তর। উল্লেখ্য যে, পুলিশ এক্ট, ১৮৬১ এবং পুলিশ রেগুলেশন অফ বেঙ্গল, ১৯৪৩ এ "পুলিশ প্রশাসন" নামে কোন শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। সেখানে বাহিনী হিসেবেই আইনী পরিভাষাগত নাম- পুলিশ ফোর্স বা পুলিশ বাহিনী।
হ্যা এটা সত্য, পুলিশ বাহিনীর কাজের পরিধি, ক্ষমতা, আইনগত দায়-দায়িত্ব এর পরিমান অনেক বেশি হওয়ায়, এটি আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে, শুরু থেকেই। প্রশাসনিক ব্যবস্থায়,যে প্রতিষ্ঠানের উপর অর্পিত দায়িত্ব,দায়, কর্তৃত্ব,ক্ষমতা বেশি,সেই প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা ও সেচ্ছাচারিতা রোধে নিয়ন্ত্রণ ও সুপারভিশনও একইভাবে বেশি। তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দিয়ে চেক এন্ড ব্যালেন্স রাখা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে, মানুষের অপরাধের প্রকৃতি ও অপরাধীদের আচারণের ধরণ বিবেচনায় নিয়ে অপরাধ ও অন্যায় কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাহিনীকে সিভিল প্রশাসনের আওতাধীন রাখা হয়েছে। পুলিশ বাহিনী কে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে জেলা আইন শৃংখলা কমিটি সদস্যদের নিকট তাদের কর্মকান্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে,যাতে করে, পুলিশ বাহিনীকে সুষ্ঠু ও শৃংখলাবদ্ধভাবে সাধারণ প্রশাসন এবং সরকারের নিকট তথা আল্টিমেটলি পার্লামেন্টের মাধ্যমে জনসাধারণের প্রতিনিধির নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কে এজন্য অস্ত্র দেয়া হয়নি, কলম দেয়া হয়েছে। অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান এর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর কোন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
আইনের ৩৬ নং প্রভিশন "Any charge against a police-officer above the rank of a constable under this Act shall be enquired into and determined only by an officer exercising the powers of a Magistrate"
পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ব্যতীত সকল কর্মকান্ডে পুলিশ বাহিনী আইন মোতাবেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নির্দেশনা এবং প্যানাল কোড এর প্রিভেন্টিভ সেকশন গুলোর অধীনে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে " কমিশনার" এর নির্দেশনা কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিপালন করবে মর্মেই আইনের ভাষ্য। ১৩(বি) তে বলা হয়েছে- "The Commissioner as the local head of the administration, shall exercise supervision and control over the action of the District Magistrate in police matters.(b) Any order received from the Commissioner either direct or through the District Magistrate shall be promptly executed by the Superintendent, who shall, however, report it through the Deputy Inspector-General of the Range to the Inspector-general if it is of an unusual
nature."
ভারতে মহাকুমা শাসক এর নিকট পুলিশের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার রীতির চর্চা কার্যকর ভাবেই এখনো চলমান, এবং খুব সফলতার সাথেই চলমান। পাকিস্তানে মাঝে জেলা প্রশাসক পদ টি কে সংস্কার করতে চেয়েছিলো,করেছিলোও বটে, শেষ পর্যন্ত আইন শৃংখলা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ায়,সরকার আগের অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছে সরকার। জেলা প্রশাসক পদটিকে আরো শক্তিশালি করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা যে খুবই কার্যকর ও ফলপ্রসূ তা বর্তমান প্রশাসনিক পরিমন্ডলের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জোর দিয়েই বলা যায়। কিন্তু, জেলা পুলিশ বাহিনীর উপর আইনত নিয়ন্ত্রণ ও কার্যকর সুপারভিশন বেশ দুর্বল হয়ে পড়ার দরুণ পুলিশ বাহিনীর স্থানীয় জবাবদিহিতার ক্ষেত্র ও নিশ্চয়তা প্রশ্নবিদ্ধ অনেকটা। একটি বাহিনী যখন তার বাহিনীর কার্যক্রমের সীমা পেরিয়ে "পুলিশ প্রশাসন" হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার অভিপ্রায় বা ভাবনায় থাকে তখন, আর দশটি বাহিনীর মত পুলিশের উপর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম কোন না কোন আইনের অধীন, সেই আইনে যেভাবে, যতটুকু ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেয়া থাকে, সেভাবেই সকলের সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে ততটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, সেই নামে অবিহিত হবে, এটাই আইন। রাষ্ট্র যখন আইনের দৃষ্টিতে কাউকে অসমভাবে সুবিধা দেয়, সেটার দায়-রাষ্ট্রকে কোন না কোন ভাবে ভোগ করতে হয়।
বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি কর্মসূচী পালন কালে,আনুষ্ঠানিক আয়োজনে, জাতীয় পত্রিকা, স্থানীয় সাংবাদিক,জাতীয় ইলেক্ট্রিক মিডিয়া, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ এবংদায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ, এই বাহিনীকে "পুলিশ প্রশাসন" বলে উচ্চারণ করছে, তখন আল্টিমেটলি প্রকাশ পাচ্ছে, যে তারা বাহিনী নয়। সেটিকে প্রতিষ্ঠা করা আরো সহজ হয়ে যায়। সরকারি কোন বাহিনী বা কোন প্রতিষ্ঠান নিজেরা নিজেদের মত করে পদের নাম বা প্রশাসনিক পরিভাষা তৈরী করতে পারে না। আইনে এই টার্মের ব্যখ্যা ও সংজ্ঞায় সেটার উল্লেখ থাকতে হয়।
গত পরশু একটি বেসরকারি চ্যনেলে ঢাকার দক্ষিনের মেয়র-এর মুখে একটি সাক্ষাতকারে শুনছিলাম। সেখানে তিনি পুলিশ বাহিনীকে "পুলিশ প্রশাসন" বলে উল্লেখ করেছেন। একটু বিস্মিত হয়েছি এই ভেবে যে, দায়িত্বশীল পদে থেকে একটা বাহিনীর নাম যখন স্রোতে গা ভাসিয়ে সকলেই ভুলভাবে উপস্থাপন করেন এবং পরিবর্তন করে ফেলা হয়, তখন সরকারের বাইরের গোষ্ঠিগুলোর মধ্যে এই ভুল শুদ্ধরুপে প্রতিষ্ঠা পায়। ভুল নাম এবং ভুল পদে অভিহিত করা আইন সম্মত নয়।
হ্যা এটি সত্য যে, Administration of Police Force টার্মের ব্যবহার হয়েছে কেবল অভ্যন্তরীণ শৃংখলা ও ফোর্স ব্যবস্থাপনার বিষয় বোঝাতে, সেটা ইন্টার্নাল এডমিনিট্রেশন মিন করে। এটা মূলত পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ কর্মচারী/কর্মকর্তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। পুলিশ এডমিনিট্রেশন শব্দটি আইনে নেই, তাহলে এটা ব্যবহার করা আইন সম্মত নয়। তথাপি পুলিশ বাহিনী, সেটি নিয়ে কথা বলছেনা কেন? যেমন: পুলিশ বাহিনীর অন্যন্য পদের নাম। আবার, মেট্রো এরিয়াতে ডিসি উত্তর, ডিসি পূর্ব। এই পদগুলোর অস্তিত্ব মূল আইনে নেই। মূলত হবে, ডিপিসি (উত্তর) এবং এডিপিসি উত্তর। মূলত, ডি এম পি পুলিশ কমিশিনার ব্যবহার করার পরিবর্তে, ডি এম পি কমিশিনার ই বেশি ব্যবহার করছে প্রায় সকলেই।
এটি আইনের ব্যত্যয়। মূলত, এর ঐতিহাসিক একটা দিক আছে, ভারতীয় উপমহাদেশে মূলত কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব বরাবরই নিশ্চিত করা হতো, ডিসি ( জেলা প্রশাসক), জেলা ম্যাজিস্ট্র্বট বা ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর এর মাধ্যমে। জেলা ম্যজিস্ট্রেট এক সময় পুলিশ সুপারগণের এসিআর ইনিশিয়েটিং কর্মকর্তা ছিলো। এখন একুশ শতকের প্রশাসনিক কাঠামোতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থার বিবেচনায় ব্যবস্থাপনায় অনেক পরিবর্তন আসতেই পারে। পুলিশের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ এক সময়ে সিভিল প্রশাসনের হাতে ছিলো,তখনকার সামাজিক বাস্তবতায় সেটি করা হয়েছিলো। বৃটিশ আমল থেকে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর এর পদের কাজ এর অতিরিক্ত আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদ সৃজনের মাধ্যমে। কিন্তু, তাই বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়িন্ত্রণ ও জবাবদিহিতার প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়নি।
প্রশাসন বরাবরই সরকারের মূল প্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতো ।দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব আইনে এখনো আছে, কিন্তু, তার প্রয়োগ নেই।
এ কারণে, প্রশাসন কর্তৃপক্ষ যেহেতু সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মূল কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করে, তাই পুলিশ বাহিনী নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা করতে চাই, এবং তারা চাই না, রাজনীতিক নেতৃত্ব ও পুলিশ বাহিনীর মাঝখানে কোন কর্তৃপক্ষ থাকুক। একারণে, পুলিশ বাহিনী স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ ঘঠনের দাবী করে আসছে বেশ আগে থেকেই। ইদানিং, পুলিশ সুপার এর কার্যালয়ে বিশেষ আইন শৃংখলা সভা পরিচালনার রীতিও এই স্বনিয়ন্ত্রিত ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার অংশ বলা চলে। বিশেষ আইন শৃংখলা সভা নামে কোন আইনী কাঠামোর অধীন কোন সভা আছে কিনা আমার জানা নেই।
আমাদের এই কন্টিনেন্টের মানুষের জীবনাচার, অপরাধ প্রবণতা ও প্রকৃতি প্রভৃতির বিবেচনায় গবেষনার মাধ্যমে এই বিধান গুলো প্রণয়ন করা হয়েছিল, কিন্তু, সেগুলো আইনের মধ্যেই অনেকটা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ইস্যুতে পুলিশ বাহিনীর কাজ মূলত,জুডিশিয়াল কর্তৃপক্ষের আদেশ প্রতিপালন করা। কমিশিনার, ডি আইজি, রেঞ্জ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ( জেলা প্রশাসক) এবং পুলিশ সুপার এর একে অপরের অসাধারণ সমন্বয়ের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনা করার বিধান রাখা হয়েছে আমাদের সামাজিক বাস্তবতায়। যখন এই সমন্বয় ও মনিটরিং এর ক্ষমতা খর্ব হয়, তখন যে, অব্যবস্থাপনা চলে, তার বাস্তব রুপ আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। ফেনীর ঘটনা তার বাস্তব প্রমান।
এটি সত্য যে, এডমিনিস্ট্রেশিন অফ পুলিশ কনোটেশন টি আইনে আছে যেমন- "The administration of the police throughout a general police-district shall be vested in an officer to be styled the Inspector-General of Police and in such Deputy Inspectors-General and Assistant Inspectors-General as to the Government shall seem fit.The administration of the police throughout the local jurisdiction of the Magistrate of the district shall, under the general control and direction of such Magistrate, be vested in a District Superintendent and such Assistant District Superintendents as the Government shall consider necessary."
পুলিশে অভ্যন্তরীণ সকল কর্মকান্ডের বিষয়ে ইন্সপেক্টর "জেনারেল অফ পুলিশ" পদটিকে সর্বোচ্চ ডিস্ক্রিশিন দেয়া হয়েছে। আবার জেলা ও থানা পর্যায়ে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোন পুলিশ কর্মকর্তার কাজের মূল্যায়ন করে সরকার তথা, পুলিশ বাহিনীর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের গোচরে আনার বিধানও সেখানে আছে।
পুলিশ রেগুলেশন এর 15. (a) তে রয়েছে-" The Superintendent is the immediate head of the police force of the district and is responsible for all matters concerning its internal economy and management and for its efficiency and discipline. He is also responsible, subject to the general control of the District Magistrate, for the criminal administration of the district, and for the proper performance by officers subordinate to him of all preventive and executive duties.
(b) The District Magistrate has no authority to interfere in the internal organisation and discipline of the police force, but it is his duty to bring to the notice of the Superintendent all cases in which the conduct and qualifications of a police officer affect the general administration of his district" এখানে,
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কে এখানে অনেক ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের এই ক্ষমতার রুপ ও প্রকৃতি দেখতে দেখতে পুলিশ বাহিনী নিজেও হয়ত প্রশাসন হিসেবে নিজেদের দেখতে চাইছে সম পদমর্যাদায় আসতে চাইছে। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে,যে কোন বাহিনী কে কোন না কোন কর্তৃপক্ষের অধীনে তো থাকতেই হবে। স্বাধীন ভাবে চলার সুযোগ আইনগতভাবে নেই। তাহলে, দেশে সেচ্ছাচারিতা ও অরাজকতা সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকে যায়।
আইনে "এডমিমিস্ট্রেশন অফ পুলিশ ফোর্স" টার্মগুলোর ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ কাজের বাহিরে কোন ডিপার্টমেন্ট যুক্ত থাকলে, এডমিনিস্ট্রেশন অফ পুলিশ টার্মিনলজি কোনভাবেই প্রযোজ্য নয়। যখন পুলিশ নির্বাহী কর্মকান্ড এবং কোর্টের আদেশ প্রতিপালন করছে, সেক্ষেত্রে "পুলিশ বাহিনী" শব্দটি প্রযোজ্য। আবার পুরো বাহিনীর একটা এন্টিটি বুঝাতে পুলিশ বাহিনী " কে বাংলাদেশ পুলিশ " নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে, মূল আইনে যদিও কোথাও "বাংলাদেশ পুলিশ" বলা নেই, যতদুর জানি।পরবর্তিতে হয়তো এটি পরিপত্র বা কোন বিধি মোতাবেক নামটি অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকবে।
ফেনীর সোনাগাজী থানার নুসরাত জাহান রাফির হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওসি ( মোয়াজ্জেম হোসেন কে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমন রাফির সংখ্যা শত শত, থানায় কোন অভিযোগ মামলায় রুপ নিতে তদবির ও ক্ষমতা দুটোই আবশ্যিক। এমন অনেক নুসরাত রাত দিন, থানার বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে ঘুমিয়ে যায়, ,তারপরও বিচার পাইনা।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ নিতে চাইলে, ভুক্তভোগী জনসাধারণ কে জুডিশিয়াল সিস্টেমে এন্ট্রি নেয়ার পথ সুগম করা জরুরী। যেমন ধরুন, নিয়ম করা হলো, ল সিনেমা হলে একবার ঢুকলে আপনি ফ্রি টিকেটে সিনেমা দেখার সুযোগ পাবেন, কিন্তু, হলে ঢুকতেই যদি পৃথক টিকিটের সিস্টেম থাকে,তাহলে তো কেউ সিনেমায় যাবেনা। যত মানুষ কে বিচারিক কাঠামোর আওতার যাবার পথ প্রশস্ত হবে, তত মানুষ সুষ্ঠু বিচার পাবে। সুশাসন ও ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী অনেক গুরুত্ববহ ভূমিকায় অবতীর্ণ।
যায়হোক, যেটি বলছিলাম, এই ঘটনায় তদন্ত করলো পুলিশ হেডকোয়ার্টার। পুলিশ হেডকোয়ার্টার ইন্টার্নাল এডমিনিস্ট্রেশনের শৃংখলার স্বার্থে নিজের বাহিনীর কর্মকর্তা/ কর্মচারীর দায়-দায়িত্ব নিরুপণে এই তদন্ত কমিটি করতেই পারে। কিন্তু, প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে( সূত্র: প্রথম আলো) সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে "অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল কবিরের বিরুদ্ধেও দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে"
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর কোন দায়-দায়িত্ব থাকলে সেটা তদন্ত করার দায়িত্ব মন্ত্রণালয় বা সরকার, কমিশনার এবং জেলা ম্যাজিস্ট্র্বটের। পুলিশের নিজস্ব তদন্ত কমিটির জুরিসডিকশন এর বাইরে এটি, পুলিশ সদর দপ্তর স্বপ্রনোদিত হয়ে তার জুরিসডিকশিন এর বাইরের কর্তৃপক্ষের বিষয়ে কথা বলতে পারেনা। একমাত্র সরকারের অনুমোদন এবং আদালতের আদেশ প্রতিপালনে এর ক্ষেত্রেই এই ক্ষমতার প্রয়োগ পুলিশ বাহিনী করতে পারে। এখন " পুলিশ বাহিনী, প্রশাসনিক দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের মত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব নিরুপণ করছে তদন্ত করে। অথচ আইনের ভাষ্য উলটো, রেগুলেশন এর 20(b)- রয়েছে-" If the Magistrate observes in any police officer above the rank of Inspector incompetence or unfitness he may communicate with the Inspector-General, who after paying careful attention to the views of the District Magistrate"
আবার ফেনীর সোনাগাজীর ঘটনায় তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জনাব সোহেল রানা- এর সহজ স্বীকারোক্তি মূলক নিজস্ব মতামতের মধ্যে ফেনির পুলিশ বাহিনীর প্রসঙ্গ টেনে সমালোচনা হওয়ার প্রেক্ষিতে তৎকালীন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা " ফেসবুকে নিজের ওয়ালে লিখলেন, " এমন ম্যাজিস্ট্রেট এর মুখে থু থু!
অথচ, রেগুলেশন এর ৩০ নং বিধিতে বলা হয়েছে-
30. Police officers shall treat all courts and Magistrates with due respect. They shall not make reflections on them in public or insert disparaging criticisms of their acts in departmental reports or similar documents which are or may be published ; but, if a Superintendent has reason to believe that there has been a failure of justice or that police officers have received unfair treatment, he may bring the case to the notice of the District Magistrate" এখানে তিনি জনস্বমক্ষে আইন ভেংগেছেন। এইভাবে আইনত সম্মানিত, উর্ধবতন কর্তৃপক্ষ ও চেইন অফ কমান্ড এর সুপেরিয়র অথোরিটি যদি নিয়মিত অসম্মানিত হতে থাকে, তাহলে আন্তঃ এবং অন্তঃ বিভাগীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন ও জটিলতা বাড়বে। এর ফলে প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ।
বাহিনী যখন "প্রশাসন" হয়ে উঠতে চাই, তখন এমন ভাবেই লাঞ্ছিত ও মর্মাহত হতে হয় রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা/কর্মচারীকে।
"পুলিশ প্রশাসন" ব্যবহার দেখে, অন্যান্য দপ্তর, আনসার প্রশাসন, বিজিবি প্রশাসন,ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রশাসন প্রভৃতি পদের নামের সাথে ইচ্ছেমত শব্দ জুড়ে দিয়ে নানান নাম ব্যবহার শুরু করবে, এটার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। আসলে,সরকারী সকল দপ্তর কোন না কোন আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত, সেই আইনে যে শব্দগুচ্ছ ব্যবহার হয়েছে, সেগুলোই ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
আগেও বলেছি, প্রশাসন শব্দটি সরকারী, বেসরকারী সকলেই ব্যবহার করতে পারে,তবে সেটি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা বোঝাতে, অন্যান্য বিভাগের সাথে সম্পর্কের জায়গায় এই শব্দ ব্যবহার এর সুযোগ নেই।
পুলিশ বাহিনীর কাজের সাথে যখনই সরকারের অন্য সংস্থা বা দপ্তর সংশ্লিষ্ট,জনগন,আদালত,প্রভৃতি জড়িত, মোট ক তখন এ প্রতিষ্ঠান টি একটি বাহিনী হিসেবেই আখ্যায়িত হবে আইনত। আইনে অভ্যন্তরীণ শৃংখলা আনায়নে পদক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ কে পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ প্রশাসন বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এটি তাদের নিজস্ব গন্ডির মধ্যেই ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু,কোন দপ্তর, কোন ব্যক্তি, পত্রিকা, অন্যান্য রাজনীতিবিদ, বা যে কেউ এই শব্দটা ব্যবহার করতে পারে না আইনত,কেননা এটি ভুল। কারণ আইনে এই দপ্তরকে "পুলিশ ফোর্স"হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
একটি বাহিনীর আইনী কাঠামোতে তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ও জুরিসডিকশন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে হয়তো এই ধরণের পদ,সম্বোধন এর ভুল ব্যবহার এড়িয়ে চলা সহজ হবে। প্রতিটি দপ্তর এর তার নিজস্ব জুরিসডিকশন ও অথোরিটির সঠিক চর্চা হলে, সবার জন্যই সেটি মঙ্গল।
এটি খুব অসম্মানের যখন একজন "থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা" তার জুরিসডিকশিনের নির্বাহী ম্যজিস্ট্র্বট বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনসমক্ষে বেমানান শব্দ ব্যবহার কে সমালোচনা করে। নিজেকে সমমর্যাদার কর্মকর্তা মনে করে কাউকে ছোট করার জন্য উদ্ধত হয়।
যে কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা রাখে তাকেই একটি বাহিনীর সদস্য সম্মান করে কথা বলবে এটাই প্রত্যাশিত। একজন ওসি যখন সিভিল সার্ভিস এর আদালত (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) বা উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভাপতি কে নিয়ে সমালোচনা করতে সাহস করেন এবং নিজেকে তার সমমানের ও সম পদ মর্যাদার কর্মকর্তা মনে করে, তখন স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্বলতাই প্রকাশিত হয়।
আইনে " কমিশনার" পদটিকে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকান্ডের ও অন্য বিভাগের সাথে কাজের ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা মানবেন এটাই আইনের ভাষ্য।
প্রতিটি মানূষের কমন সাইক্লোজি জুরিসডিকশন এর বাইরে যাবার ফাক ফোকড় চাইবে, চেষ্টা করবে, ডোমিনেটিং হবে। কিন্তু, এই ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে যেন যথেচ্ছা ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য একটা মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করা হয়। "পুলিশ যখন অন্যান্য বিভাগের সাথে কোন কাজে সম্পৃক্ত হবে, তখন সেটা স্থানীয় গার্ডিয়ান হিসেবে কমিশনার" এর মাধ্যমে হতে হয়। এডি এম, বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কোন কাজে দায়িত্ব অবহেলা করলো কিনা, এটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের নয়। কমিশনার বা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির, পুলিশ বাহিনী কেবল তাদের অভ্যন্তরীণ কর্মচারী / কর্মকর্তার দায়-দায়িত্ব দেখবে, এর বাহিরে নয়, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর কার্যালয়ের কর্মকর্তাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে একমাত্র আদালত সেটা করতে পারবে। আদালত যদি তাদের কে ক্ষমতায়ন করে, কোন মামলা বা অভিযোগের প্রেক্ষিতে, তখন সেটি আর এআডমিনিট্রেশন থাকেনা, তখন আদালতের ইস্যু হয়ে যায়। আর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্স এন্ড ইনক্লুডস জেলা প্রশাসক। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, পুলিশ বাহিনী কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর কর্মকান্ড মূল্যায়ন করার ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব রাখে? না। তবে,আদালত এবং সরকারের অনুমোদন স্বাপেক্ষে।
সুতরাং স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশ বাহিনীকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে এবং জবাবদিহিতা ও সচ্ছতা নিশ্চিত কল্পে স্থানীয় সিভিল প্রশাসনের আইনত ক্ষমতার চর্চার রীতি ও সংস্কৃতি গড়ে ওঠা দরকার। এবং এভাবেই, পুলিশ বাহিনী অন্যান্য বাহিনীর মত সত্যিকারের, চৌকশ, দক্ষ, জনবান্ধব এবং নিরপেক্ষ বাহিনীতে পরিণিত হয়ে উঠতে পারবে।
লেখক: কলামিস্ট