ফুলকপি-বাঁধাকপি রবি মৌসুম অর্থাৎ শীত মৌসুমের প্রধান সবজি হলেও দিনাজপুরের বীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় খরিপ-১ মৌসুম অর্থাৎ গ্রীস্মকালীন মৌসুমে এর চাষ শুরু হয়েছে।
এই অসময়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে ঘুরে গেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামের কৃষক মোঃ আবদুল মালেকের ভাগ্যের চাকা। বাজারে আসা ফুলকপি-বাঁধাকপি রমজান মাসে ব্যাপক চাহিদা থাকায় আশানুরূপ দামে বিক্রি হওয়ায় পুজির পাশাপাশি দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তিনি। ধান, আলু, ভূট্টার দাম নিয়ে কৃষকরা যখন দিশেহারা তখন অসময়ে ফুলকপি-বাঁধাকপি চাষে করে বাজিমাত করেছে কৃষক মোঃ আবদুল মালেক।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এ বছর এই উপজেলায় খরিপ-১ মৌসুমে ১০একর জমিতে ফুলকপি এবং বাঁধাকপি আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা দ্বিগুন। অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় বাজারে চাহিদা থাকায় আগামীতে এর পরিধি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
কৃষক মোঃ আবদুল মালেক জানান, স্থানীয় কৃষি খামার মালিক সীডস হতে ফুলকপি (জাত-১১১) বাঁধাকপি (জাত-কুইকার) বীজ সংগ্রহ করে ওই কৃষি খামারের সাড়ে ৩একর জমি চুক্তি নেয়। ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে জমিতে বীজ বপন করা হয়। এরপর মার্চ ২৫তারিখে বীজতলা হতে চারা তুলে জমিতে রোপন করে। চুক্তির অর্ধেক জমিতে ফুলকপি আর বাকি অর্ধেক জমিতে বাঁধাকপির চারা রোপন করা হয়। সাড়ে ৩একর জমিতে প্রায় ৭৫হাজার চারা রয়েছে।
চারা রোপনের ৪৫-৫০দিন পর থেকে ক্ষেতের ফুলকপি-বাঁধাকপি বিক্রয় শুরু করে। পাইকারী প্রতিপিছ ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১১টাকা এবং কেজি হিসেবে ৩৫টাকা দরে এ পর্যন্ত প্রায় ১লক্ষ ৫০হাজার টাকার ফুলকপি এবং ৫০হাজার টাকা বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন।
তবে এসব চাষাবাদে সার,বীজ, বালাইনাশক এবং শ্রমিক খরচসহ সর্বসাকুল্যে ব্যয় হয়েছে ২লক্ষ টাকা। প্রকৃতি বৈরী না হলে এবং বাজার দর ভালো থাকলে আরো ১লক্ষ টাকার ফুলকপি এবং ৩লক্ষ টাকার বাঁধাকপি বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল কাসেম জানান, ফুলকপি-বাধাকপি শীতকালীন সবজি হওয়ায় গ্রীস্মকালীন মৌসুমে এর চাষাবাদ বেশ কঠিন। কারণ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে বেড়ে উঠতে হয় চারাগুলিকে। সঠিক সময়ে সার, বালাইনাশক প্রয়োগ ও অন্যান্য পরিচর্যা করা না হলে ক্ষতির ঝুকিতে পড়তে পারে কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিগত দুই বছর ধরে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা ও টমেটোসহ বেশ শীতকালিন সবজি খরিপ মৌসুম অর্থাৎ গ্রীস্মকালীন মৌসুমে পরীক্ষা মুলক ভাবে এই এলাকার চাষ শুরু হয়। এসব সজবি চাষে সফলতা লাভে বর্তমানে তা বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। মাঝারী উঁচু জমিতে বৃষ্টি ও তাপ সহনশীল জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে এই এলাকার অধিকাংশ কৃষক। তবে এ সময় এই সবজি চাষ বেশ ঝুকিপুর্ণ। কারণ অতিবৃষ্টি হলেই ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা বেশী।