টাকা ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষার খাতা স্বাক্ষর না করার অভিযোগ ওঠেছে লালমনিরহাটের সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রী কলেজের বিরুদ্ধে। টাকা ভাল দিলে নম্বরও ভাল, না দিলে কম, প্রতিবাদ করলে ফেল করে দেয়ার হুমকী দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও কলেজ অফিস জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রী কলেজ থেকে চলতি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২৩৩জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জন্য ১০০ নম্বরের তথ্য প্রযুক্ত বিষয় বাধ্যতামুলক করা হয়। এ বিষয়ের পাশ নম্বর ৩৩। যার ব্যবহারিকে রয়েছে ২৫ নম্বর। তাই ভাল ফল বা পাশ করতে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরটি পরীক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন।
পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় এবং পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শুধুমাত্র তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কলেজের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ পরিক্ষা গ্রহন করে কেন্দ্রে নম্বরপত্র পাঠাবেন। এ জন্য বোর্ড থেকে খরচ বাবদ পরীক্ষার্থী প্রতি ১৫ টাকা হারে পাবেন ওই শিক্ষক। অপর দিকে ব্যবহারিকের বাকী সকল বিষয়ের পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। লিখত পরীক্ষা শেষ হলে লালমনিরহাটের কলেজগুলোতে শুরু হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা। চলতি মাসেই শেষ করতে হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।
এ সুযোগে সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রী কলেজের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দিন প্রতি শিক্ষার্থীর কাছে প্রকাশ্যে আদায় করছেন ৩শত টাকা। টাকা না দিলে বা প্রতিবাদ করলে ফেল করে দেয়ার হুমকী দেয়া হচ্ছে। আবশ্যকীয় বিষয়টিতে অকৃতকার্য হলে পাশ হবে না এইচএসসিতে। এ ভয়ে পরীক্ষা শুরুর আগেই টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের আগে এ টাকা জমা দিতে হবে বলে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শুধু তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে নয় এ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের সকল বিষয়ের সাথে মনোবিজ্ঞান, ভূগোল ও কৃষি বিষয়ে ব্যবহারিকের জন্য নেয়া হচ্ছে টাকা। তবে এসকল বিষয়ের শিক্ষকদের দাবি তাদের বিষয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। তাই কেন্দ্র কলেজে পরীক্ষার্থী প্রতি বিনা রশিদে একটা খরচ দিতে হয়। এ খরচ যোগাতে তারা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রী কলেজের একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, অন্য বিষয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে হবে তাই কেন্দ্র ফি'র অজুহাতে ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা নেন বহিরাগত শিক্ষককে ম্যানেজ করতে। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা তো নিজ কলেজের শিক্ষকই গ্রহন করে নম্বর দিবেন। সেখানেও তিনশত টাকা গুনতে হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে ফেল করে দেয়ার হুমকী দিচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক নিজেই এবং ভূগোল বিষয়ের টাকা অফিস সহকারীর মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে ব্যবহারিক খাতায় স্বাক্ষর দিচ্ছেন না। এমন কি খাতাটা জমাও নিচ্ছেন না শিক্ষকরা।
সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রী কলেজের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক লিমন মিয়া জানান, তার এক পরীক্ষার্থীর তিন বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে এক হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এ ঘুষের টাকা যোগাতে তাকে আড়াই মণ ধান বিক্রি করতে হয়। টাকা না দিলে বা প্রতিবাদ করলে ফেল করে দেয়ার হুমকী দেয়ায় বাধ্য হয়ে টাকা দিচ্ছেন সবাই। তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা নিজ কলেজের শিক্ষকই গ্রহন করবেন। তবুও তাকে টাকা না দিলে ফেল করে দেয়ার হুমকী দেন। তবে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন কলেজ শিক্ষক দাবি করেছেন, শুধুমাত্র লালমনিরহাট সরকারী কলেজ ব্যতিত জেলার অধিকাংশ কলেজে ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে টাকা আদায় করেছেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ, অন্যথায় মেধার মূল্যায়ন হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রী কলেজের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের প্রভাষক জালাল উদ্দিন জানান, একটা পরীক্ষা চালাতে কিছু খরচ হয় তাই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাত্র ৩শত টাকা চাওয়া হয়েছে। সামান্য কয়েকজন দিয়েছেন। গরিব এলাকা সবাই টাকা দেয় না। কলেজ অধ্যক্ষের অনুমতিতে টাকা আদায় করে তাকেই জমা দিচ্ছেন। শুধু তিনিই নন, জেলার প্রায় সকল কলেজে আইসিটি ব্যবহারিকে টাকা নেয়া হচ্ছে। গরিব এলাকা বলে তিনি ৩শত নিলেও অনেক কলেজে ৫শত টাকাও আদায় করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাপ্টিবাড়ি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সুদান চন্দ্র বলেন, গরিব এলাকা হিসেবে তার কলেজের অধিকাংশ পরীক্ষার্থী পরীক্ষার ফিস দেয় না। সেখানে ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য টাকা দেয়া তো ভাবাই যায় না। কেন্দ্রের কিছু খরচের জন্য চাপ দিয়ে নয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা হয়তো কৌশলে কিছু আদায় করে ম্যানেজ করেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) জহুরুল ইসলাম জানান, পরীক্ষা কেন্দ্রের খরচ ফরম পুরনের সময় নেয়া হয়। সেই অনুযায়ী শিক্ষাবোর্ড কেন্দ্রের খরচ নির্বাহ করেন। ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য কোন টাকা গ্রহন করা যাবে না। কেউ এমন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।