অবশেষে চিত্র নায়িকা সামসুন নাহার সিমলা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের মুখোমুখি হবেন। রোজার ঈদের পরেই কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এতে তিনি সময় দিতেও আগ্রহী হয়েছেন। বাংলাদেশ বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় গত ৩ মাস ধরে তাঁর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছিল। বর্তমানে তিনি ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থান করছেন। সিমলার জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে ওই মামলাটির অগ্রগতি সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছবে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা রাজেস বড়-য়া গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, নায়িকা সিমলার সাথে আমরা যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছি। এ সময় তিনি জিজ্ঞাসাবাদে জন্য সময় দিতে রাজি হয়েছেন। বর্তমানে সিমলা শুটিংয়ের কাজে ভারতে অবস্থান করছেন। এরআগে সিমলার বাড়ির ঠিকানায় নোটিশও পাঠানো হয়েছে। তাঁর মা, ভাই ও বড় বোনের মাধ্যমেও যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এতোদিন তাঁর কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
একাধিক সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ ময়ূরপক্সখী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকেলে ঢাকা থেকে বিমানটি উড্ডয়নের পরেই পলাশ আহমেদ নামে এক যাত্রী এটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। পরে ৮মিনিটের কমান্ডো অভিযানে নিহত হন সেই পলাশ। অবসান ঘটে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা। নিহত যুবক পলাশ আহমেদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ঘটনার পর সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। নানা গুঞ্জনের ডালপালা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় শহরের পতেঙ্গা থানায় ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা করা হয়। যার বাদী হলেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার। শুরু থেকেই এ মামলাটির তদন্তের স্বার্থে বিমানের পাইলট, কেবিন ক্রু’সহ মোট ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বিমানবন্দরে নিয়োজিত এপিবিএন সদস্যসহ আরও ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরমধ্যে নিহত পলাশের বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক কিছুই পাওয়া গেছে। এখন তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাচ্ছেনা। তবে এবার সিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে মামলাটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে। সূত্র জানায়, ঘটনার শুরু থেকেই এ মামলাটির তদন্তের স্বার্থে সিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছিল কাউন্টার টেরোরিজমের কর্মকর্তারা। চিত্রনায়িকা সিমলার সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের পরে পলাশ উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশ পেয়েছিল। এ বিষয়ে কিছু ধারণাও পায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তদন্ত দল। তদন্তে ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সিমলার সঙ্গে পলাশের বিয়ে হয়। পরে একই বছরের ৬ নভেম্বর তাদের বিচ্ছেদও হয় বলে জানা যায়। শুরু থেকেই কয়েক দফা সিমলার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দেশে তার অবস্থানের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপায় বাবার বাড়ির ঠিকানায় তাকে হাজিরের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোনও করা হয়। কিন্তু তিনমাসেও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে সিমলার বড় বোনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বার্তা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। একইসঙ্গে দ্বিতীয় দফা নোটিশও পাঠানো হয়। এরপরই সিমলা যোগাযোগ শুরু করেন। ওই ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ওই উড়োজাহাজ থেকে উদ্ধার করা পিস্তল ও বিস্ফোরকসদৃশ বস্তুসহ আলামত জমা দেয় র্যাব ও নোবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম।
এরপর ১৩ মার্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি পিস্তলটি খেলনার ছিল বলে প্রতিবেদন দেয় কাউন্টার টেরোরিজমের কাছে। গত ২০ মার্চ বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপক্সখী উড়োজাহাজের পাইলট, কেবিন ক্রু’সহ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের কাজ শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। একইদিন চট্টগ্রামে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কার্যালয়ে ডেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ওই জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রে জানাগেছে, উড়োজাহাজে যাত্রী পলাশ আহমেদ ১৭-ডি নম্বর আসনে বসা ছিলেন। উড্ডয়নের আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পলাশ তার নির্ধারিত আসন থেকে উঠে সামনের একটি আসনে গিয়ে বসেন। সিনিয়র কেবিন ক্রু’ শফিকা নাসিম বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তিনি জুনিয়র হোসনে আরাকে নির্দেশ দেন। পলাশকে যেন তার নির্ধারিত আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়। হোসনে আরা অনুরোধ করার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে ওঠে পলাশ। ডান হাতে পকেট থেকে পিস্তল বের করে হোসনে আরার মাথায় ধরে ককপিটের দরজা খুলতে বলেন। এরপর বলেন, আমি পাইলটের সঙ্গে কথা বলব। এ সময় পলাশ কয়েক দফা অস্থিরভাবে পায়চারী করে। তখন ককপিটের সামনে বসা ছিলেন পাইলট ও ফার্স্ট অফিসার। শফিকা নাসিম একটি গোপন কোড ব্যবহার করে তাদেরকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। পাইলট ও ফার্স্ট কর্মকর্তা লাইভ স্ক্রিন অন করে সেখানে পলাশের গতিবিধি দেখতে পান। তার ডান হাতে পিস্তল এবং বাম হাতে বিস্ফোরকসদৃশ বস্তু দেখা যায়। সাথে সাথে এ ঘটনাটি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানিয়ে দেওয়া হয়।