ঈদ বা কোন পূজা পারবস এলেইে মনে হয় এটি কোন পর্যটন কেন্দ্র। প্রিয়জন ও পরিবারের সবার জন্য বিনোদনের অন্যতম স্থান হচ্ছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা শালবন। বিশাল বিশাল এ শালগাছ আর ঝাউগাছের মাঝে রয়েছে সুন্দর মেঠপথ। এ পথ ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে গভীর এক অরণ্য। ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে পরিবার ও প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসুন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নওদাবাস এলাকায় প্রকৃৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা এই শালবনে। সাড়ি সাড়ি বিশাল শালগাছ, ঝাউগাছ আর পাখির কলকাকলি যে কারো মনকে আকৃষ্ট করবে শত ভাগ নিশ্চিত। প্রকৃতি প্রেমিদের বিনোদনের প্রথম তালিকায় থাকে হাতীবান্ধার এ শালবন।
বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে সার্বক্ষনিক মুখরিত থাকে প্রাকৃতিক নিয়মে গড়ে ওঠা এ শালবন। এই শালবনে গাছের নিচে আলাদা করে লাগানো হয়েছে বেতগাছ। পাখির কিচির মিচির ডাকের সঙ্গে একটু পর পর ডেকে যাচ্ছে ঝিঁঝি পোকা। নানা রঙের ফড়িং, ভিমরুল, মাকড়্সা, বুনো ফল দেখে অন্য রকম এক মানুষিক স্বাদ পাওয়া যায় শালবনে।
তাই প্রাকৃতি প্রেমিরা একটু অবসর পেলেই পশোন্তির খোঁজে ছুটে আসেন হাতীবান্ধার এ শালবনে। ঈদের ছুটিতে অবসর সময় কাটাতে অনেকেই ভির জমায় এই শালবনে। ঈদসহ যেকোন দীর্ঘ ছুটিতে এখানে বসে প্রকৃতি প্রেমি ও বিনোদন প্রেমিদের মিলন মেলা। দিনভর তারা উপভোগ করেন প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যকে।
এক সময় অরক্ষিত থাকলেও ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তা ও বন রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগ এই শালবনকে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। ভ্রমন পিপাসুদের বসার জন্য তৈরী করা হয়েছে বেশ কিছু বিশ্রামাগার ও বসার আসন, সেখানে বিনোদন প্রেমিদের জন্য রয়েছে শৌচাগারও। মুখরোচক খাবরের পসরা নিয়ে শালবন এলাকার চারদিকে অনেক দোকান থাকলেও নেই কোন আবাসিক হোটেল বা রেস্টুরেন্ট। শালবনে আগুন্তুকরা প্রয়োজনীয় খবার সঙ্গে নিয়েই যান এ বনে। তবে এ বনে ঘুরতে বা প্রবেশ করতে কোন গেটপাশের প্রয়োজন হয় না।
লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরে হলেও সেখানে যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যান্ত ভাল। সড়ক পথে বলুন ও রেলপথেই বলুন খুব সাচ্ছন্দেই যাওয়া যাবে এ শালবনে। রাজধানী ঢাকা থেকে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন অথবা সড়ক পথে বাস যোগে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা শহরে পৌছতে হবে। এরপর প্রাইভেট কার, বাস, মিনিবাস, রিক্সা, ভ্যান ভাড়া করে মাত্র ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই পৌছে যাবেন এ জেলার অন্যতম বিনোদনের স্থান হাতীবান্ধার শালবনে। বনে রাত্রী যাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে হাতীবান্ধা শহরে সুলভ মুল্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে ডাকবাংলো ও ব্যক্তি মালিকানাধিন রেষ্টহাউস বা আবাসিক হোটেলে। বনে ঘুরে ক্লান্ত হলে বিশ্রামের জন্য বসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নেই ভারি খাবারের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট। এজন্য হাতীবান্ধা শহরে রয়েছে নানান স্বাদের হোটেল। এ শহরের এসএস স্কুল গেটে রয়েছে নাইওরী হোটেল এ- রেস্টুরেন্ট। সেখানে পাবেন গ্রামীন নানান খাবারের বাড়ির রান্না করা স্বাদ। ঈদের দীর্ঘ ছুটি আনন্দময় করতে ঘুরে আসুন শালবনে।
শালবনটিকে ঘিরে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও সরকারী কোন পৃষ্ঠপোশকতার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। সীমান্তবর্তি এ জেলার বিনোদন প্রিয় মানুষের জন্য নেই কোন পর্যটন কেন্দ্র। ফলে মানসিক প্রশান্তির খোঁজে জেলাবাসী এ শালবনে ভিড় জমান। দৈনিক হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হলেও ঈদসহ বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে তা বেড়ে যায় কয়েকগুন।
প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা এ শালবনটি সংস্কার করে বন্য প্রানীর অভায়শ্রম ঘোষনা করে বিনোদন স্পট করতে এলাকাবাসী দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
স্থানীয় কলেজ ছাত্র নুর আলম বলেন, প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভিড় জমান এ শালবনে। ঈদসহ বিভিন্ন ছুটির দিনে বিনোদন প্রিয় মানুষের সমাগমে ভরে উঠে শালবন। বন্যপ্রানীর অভায়শ্রাম ঘোষনা করে এ শালবনকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
নওদাবাস ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অশ্বিনী কুমার বসুনিয়া জানান, প্রায় অর্ধশতাধিক একর আয়তনের এ শালবনটি রক্ষায় বনবিভাগের এই বিটে অনেক জনবল সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত বনরক্ষী না থাকায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বনটি সংস্কার করে পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে বন্যপ্রানীর অভায়শ্রাম করলে এখানে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। সেই সাথে পর্যটনসেবা বঞ্চিত বিনোদন প্রিয় জেলাবাসীর চিত্তবিনোদনের একমাত্র স্পট হতে পারে এই শালবন। এজন্য সরকারের ঊর্দ্ধমহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।