ঈদ-উল ফিতরের মৌসুমে নৌপথে ঢাকা থেকে দুরপাল্লা রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রী থাকে টইটুম্বুর অবস্থায়। সরকারের নির্ধারন করে দেয়ার অজুহাত দেখিয়ে ভাড়াও নেয়া হয় বেশি। প্রতিটি লঞ্চ ডাবল ট্রিপ দিয়ে থাকে। সবমিলিয়ে ঈদের বিশেষ সার্ভিসে লঞ্চ মালিকদের ব্যবসায় পোয়াবাড়ো হলেও উৎসব উদ্যাপন করতে নৌপথে যারা যাত্রীদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেন, সেই নৌযান শ্রমিকদের পরিবার এবার ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
বরিশাল থেকে স্থানীয় ও দূরপল্লা রুটের বেশিরভাগ নৌযান শ্রমিককে এবার বেতন ও বোনাস দেয়নি লঞ্চ মালিকরা। বিষয়টি ঈদের আগে গোপন থাকলেও ফাঁস হয়ে যায় এক নৌযান শ্রমিককে নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের অভিযোগে আটক করার পর।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নৌযান শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা না হলে গার্মেন্টস্ সেক্টরের মতো নৌযান সেক্টরেও অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হয় ওই সভায়।
বরিশাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃংখলা বিষয়ক সভায় মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে, ঈদে লঞ্চের বেশিরভাগ শ্রমিক-কর্মচারীকে বেতন ও বোনাস দেয়া হয়নি। শ্রমিক অসন্তোষ রোধে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সভায় উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠুও এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে একমত পোষণ করেছেন। জবাবে সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ঈদের সময়ে এমনটা হলে লঞ্চের শ্রমিকরা গার্মেন্টস্ শ্রমিকদের মতো আন্দোলন করতে পারেন। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগে অতিসত্তর লঞ্চ মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে তিনি সভা করবেন বলেও জানিয়েছেন।
বুধবার সকালে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু বলেন, গত শনিবার বরিশাল-ঢাকা রুটের কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের ডেকে (তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের নির্ধারিত স্থান) চাদর বিছিয়ে জায়গা দখল করে পরে যাত্রীদের কাছে বিক্রির অভিযোগে ওই লঞ্চের গ্রিজার মনির হোসেনকে আটক করা হয়। তখন তিনি (মনির) বলেন, মালিকরা বেতন ও বোনাস দেননি। তাই পেটের দায়ে এ অন্যায় কাজ করছি। মনির হোসেনই তথ্য জানিয়েছে, বেশিরভাগ লঞ্চের শ্রমিকরা বেতন ও বোনাস পায়নি। পরবর্তীতে এনিয়ে গত সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃংখলা বিষয়ক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে জেলা প্রশাসক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল শাখার সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের প্রায় ২০টি লঞ্চে মাস্টার, ড্রাইভার, সুকানীসহ কমপক্ষে ৯০০ শ্রমিক ও কর্মচারী রয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটের ৪০টি লঞ্চে প্রায় ৪০০ জন শ্রমিক ও কর্মচারী আছে। এবারের ঈদে লঞ্চের এসব শ্রমিক ও কর্মচারীরা ঈদ বোনাস তো দূরের কথা মাসিক বেতনও পাননি। ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল এমভি মানামি, পারবত লঞ্চের শ্রমিক ও কর্মচারীরা ঈদের বোনাস এবং কীতর্নখোলা লঞ্চের কাউকে ঈদ বোনাস কিংবা বেতন কিছুই দেয়া হয়নি।
আবুল হাশেম আরও জানান, দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীন রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চের ৯০ভাগ শ্রমিক ও কর্মচারী বেতন কিংবা বোনাস পাননি। তবে চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না। এ ঘটনার প্রতিবাদে খুব শীঘ্রই আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন নেতা একিন আলী মাস্টার জানান, প্রাথমিকভাবে তারা বিষয়টি সমাধান করার জন্য মালিকপক্ষের সাথে একাধিকবার আলোচনা করেও কোন সুফল পাননি। ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুন্দরবন লঞ্চের স্বত্বাধিকারী ও লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, কোন কোন লঞ্চ মালিক ঈদে বেতন-বোনাস দেননি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।