দর্শকের ঈদ আনন্দে বিশেষ মাত্রা যোগ করতে টিভি চ্যানেলগুলো আয়োজন করে থাকে তিন থেকে ১০ দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। যেখানে থাকে নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, তারকা আড্ডা, সিনেমা ইত্যাদি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঈদের এই বিশেষ আয়োজন কতটা বিনোদিত করতে পেরেছে দর্শকদের? দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে আমাদের নাট্যাঙ্গনের মানুষের কর্মব্যস্ততা। যার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন উৎসব-আয়োজনে। বিশেষ করে ঈদে। বলা বাহুল্য, দুই ঈদেই আমাদের টিভি-চ্যানেলগুলোর জন্য তৈরি হয় রেকর্ডসংখ্যক নাটক ও টেলিছবি। যেখানে আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গন খরাক্রান্ত, সেখানে নাট্যাঙ্গনের এই 'সুজলা সুফলা' অবস্থা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে এ ইতিবাচকতাই নেতিবাচকতায় রূপ নেয়, যখন দৃশ্যমান হয়ে পড়ে মানহীনতার বিষয়টি। বরাবরের মতো এবারও টিভি চ্যানেলগুলো তাদের ঈদ আয়োজন সমৃদ্ধ করেছিল নাটক ও টেলিছবি দিয়েই। কিন্তু এই 'নাটক ও টেলিছবি' এর আগে 'মানসম্পন্ন' শব্দটি ব্যবহার করতে গেলে দর্শকের অসন্তোষের মুখে পড়ার ভয় থেকে যায়। কারণ ওই একটাই- মানহীনতা। আর এই মানহীনতার প্রতিশব্দ হিসেবে অবলীলায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায় কিছু শব্দকে।
যেমন- একঘেয়েমি, বৈচিত্র্যহীনতা, ভাঁড়ামি, গল্পহীনতা ইত্যাদি। দিনের প্রথম সূর্য দেখে বুঝে ফেলা যায় দিনটি কেমন যাবে। না, এখানে দোষের কিছু নেই। তবে নাটক ও টেলিছবির প্রথম অঙ্ক দেখেই যদি বুঝে ফেলা যায় নাটকটি কেমন হবে বা গল্পটা কোনদিকে যাবে- অবশ্যই এটা দূষণীয়। কারণ, এই ধরনের গল্প দিয়ে দর্শককে পাঁচ মিনিট বসিয়ে রাখা যেতে পারে, ৪০ মিনিট নয়। তাহলে বাকি ৩৫ মিনিট কে দেখবে? আদৌ কি কেউ দেখবে বা দেখে? মনে হয় না। যদি দেখত, তাহলে এই অপ্রিয় কথাটা আমাদের আর শুনতে হতো না- মানুষ এখন টিভি দেখে না। 'ঈদে দর্শক হাসির নাটক খুব খায়'- এমন একটা কথা বহু আগে থেকেই প্রচলিত আমাদের নাটকপাড়ায়। উৎস খুঁজতে গেলে হয়তো দেখা যাবে কথাটা এসেছে চ্যানেলের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে। ভালো কথা। ঈদে দর্শক হাসির উপাদান খুঁজবে, এখানে দোষের কিছু নেই। তবে 'দোষের কিছু' অবশ্যই আছে, যদি হাসির উপাদান হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয় কাতুকুতু কিংবা ভাঁড়ামিকে। ঈদের নাটক দিয়ে হাসাতেন হুমায়ূন আহমেদ, আমজাদ হোসেনরাও। কিন্তু সেখানে ভাঁড়ামি থাকত না। এখন ভাঁড়ামি হয়ে পড়েছে ঈদের নাটকের প্রধানতম অনুষঙ্গ, যা ভাঁড়ে পরিণত করছে সংশ্নিষ্ট নাটকের কলাকুশলীদেরই। তবে কিছু নাটকে সত্যিকার অর্থেই হাসির উপাদান ছিল না, এমনটা বলা যাবে না।
বাংলাভিশনে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক 'মাফ কইরা দেন'-এর কথাই ধরা যাক। মোশাররফ করিম অভিনীত এই নাটকের দৃশ্যে হাসির খোরাক ছিল। এমনকি টাইটেল সঙেও। আরটিভির 'যমজ' নাটকটি দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে প্রতি ঈদেই। এবার প্রচার হয়েছে নাটকটির ১১তম নির্মাণ। কিন্তু পুরো নাটকে হাসির জায়গাটি খুঁজে পেতে একটু কষ্টই হয়েছে বৈকি। সিরিয়াস গল্পের নাটক-টেলিছবির কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে এনটিভিতে প্রচারিত '২২ শে এপ্রিল' টেলিছবির কথা। অগ্রিকা-ের হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে নির্মিত এই টেলিছবি প্রমোশনালটি ছিল করুণ এবং কৌতূহল জাগানিয়া। কিন্তু গল্প বলার ঢংয়ে কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। মনে হয়েছে একটু বেশিই প্রসারিত হয়ে গেছে গল্পের ডালপালা; যা গল্পটাকে টানটান উত্তেজনাময় থাকতে দেয়নি। আর কোনো কোনো নাটক দেখে মনে হয়েছে, গল্প নিয়ে পরিচালক ভাবারই প্রয়োজন মনে করেননি।
এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে চ্যানেল আইয়ে ঈদের ষষ্ঠদিন প্রচারিত 'মাই নেম ইজ জনি'র কথা। এই নাটকের পুরোটা দেখেও কোনো গল্পের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমন গল্পহীন নাটকের সংখ্যা এই ঈদে নিতান্ত কম ছিল না, যা দর্শকমনে কেবল বিরক্তিরই উদ্রেক করেছে। অবশ্য বিশ্বকাপ খেলার কারণে এমনিতেই দর্শক খেলামুখী ছিল। তবু যতটুকু সময় পেয়েছে, ভালো নাটকগুলোই দেখেছে। আর বিরক্তির উদ্রেক করে, এমন নাটক দেখে চ্যানেল পরিবর্তন করেছে দ্রুত।