ঈদগাঁওতে আদালতের ডিক্রি মূলে মালিক কে জমি বুঝিয়ে দিতে গিয়ে বিপাকে পড়লেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার মুক্তার। ১২ জুন দুপুরে বাজারের কেন্দ্রীয় কালী বাড়ি সংলগ্ন স্থানে পরিত্যক্ত এই জমিটি বুঝিয়ে দেয়া কালে এর মালিকানা দাবি করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন একাধিক লোকজন। বাক বিত-ার একপর্যায়ে প্রচুর মানুষ উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে। শেষে দখল বুঝিয়ে দিতে আসা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিবাদকারী পক্ষকে তাদের বক্তব্য আদালতে দাখিলের পরামর্শ দেন। তিনি আদালতের নির্দেশনা মতে জমির মালিক কে দখল বুঝিয়ে দিয়ে ওই স্থানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এ সময় দখল পাওয়া মালিক পক্ষের লোকজন জমির চতুর্দিকে টিনের বেড়া দিতে চাইলে উপস্থিত একাধিক প্রতিবাদী লোকজন তার কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলেন। অবশ্যই বুঝে পাওয়া মালিকপক্ষ কে জমির সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি গেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন ওই সহকারি কমিশনার (ভূমি)।
জানা গেছে, ঈদগাঁও বাজারের কেন্দ্রীয় কালী বাড়ি সংলগ্ন ১০ শতক জমির মালিকানা দাবিদারদের মধ্যে দীর্ঘদিন বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এর মালিকানা দাবি করে জালালাবাদ ইদ্রিসপুর এলাকার মাওলানা
আমানুল হক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঈদগাঁও উত্তর মাইজপাড়ার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাগির পাড়ার ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারী, জিয়াউল হক, দিদারুল ইসলাম সহ অনেককে বিবাদী করা হয়। কক্সবাজার বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত এর অপর ১৮০/১৩ ইংরেজি এবং অপর জারি ০২/১৭ ইংরেজি মামলার ডিক্রি মূলে এর মালিক মাওলানা আমানুল হক কে দখল বুঝিয়ে দিতে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বুধবার ঈদগাঁওতে আসেন। এ সময় ওই জমির মালিকানা দাবিদার স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মালিকানা বুঝিয়ে দেয়ার প্রতিবাদ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই কর্মকর্তা তাদেরকে তাদের বক্তব্য সমূহ আদালতে উপস্থাপনের পরামর্শ দিয়ে আমানুল হক কে দখল বুঝিয়ে দেয়ার কাজ সম্পাদন করে জমির মাঝখানে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন এবং চতুর্দিকে মালিক পক্ষের লোকজনের সহায়তায় খুঁটি গেড়ে দেন। এতে উপস্থিত অন্য দাবিদাররা ভূমি কর্মকর্তা ও মাওলানা আমানুল হক গং এর সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন। পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবার আগেই উপস্থিত ভূমি কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশনা তামিল করেন। মাওলানা আমানুল হক গং জানান, সহকারি কমিশনার (ভূমি ) সরেজমিন আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বিরোধীয় জমিতে আসলে বেশ কয়েকজন লোক তার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। তারা বুঝিয়ে দেয়া জমিতে স্থাপিত টিনের ঘেরা র একাংশ ভেঙ্গে ফেলে। ম্যাজিস্ট্রেট তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চাইলেও তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। দীর্ঘদিন পরে মহামান্য আদালতের নির্দেশনা মতে তারা মূল্যবান এই জমিটির দখল বুঝিয়ে পেলেও পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না। কারণ প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ আইনকে তোয়াক্কা না করে কর্মকর্তার সামনেই তাদেরকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে এবং ঘেরা বেড়ার একাংশ প্রকাশ্যে জনসম্মুখে তুলে ফেলেছে। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গং জানান, জমির মালিকানা নিয়ে যেহেতু এখনও আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে এবং যেহেতু মৌলভী আমানুল হক এর খতিয়ান বাতিল চেয়ে আপিল করা হয়েছে। আদালতে যা এখনো বিচারাধীন। ওই বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন তথ্য গোপন করে আমানুল হক যে ডিক্রি মূলে কর্মকর্তার মাধ্যমে জমির দখল নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি ওই ডিক্রি স্থগিত চেয়ে আদালতে আপিল করবেন। তিনি মন্তব্য করেন,আইনের বিরুদ্ধে আইন কর্মকর্তার এ কোন ধরনের আইন বাস্তবায়ন? তিনি মামলা চলাকালে প্রশাসনের উচ্ছেদ কার্যক্রম নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজশে দখল বুঝিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা চালানো হয়েছে। যা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। সহকারি কমিশনার ভূমি শাহরিয়ার মুক্তার জানান আদালতের নির্দেশনা তামিল করতেই তিনি যথানিয়মে মালিকপক্ষকে দখল বুঝিয়ে দিতে আসেন। এ নিয়ে কারো কোনো বক্তব্য থাকলে তা মাননীয় আদালতের নিকট পেশ করা যেতে পারে শুনানি শেষে আদালত যা সিদ্ধান্ত দেন তাই চূড়ান্ত হবে। এদিকে বিবদমান পক্ষ তাদের দাবির সপক্ষে আবারো আইনের আশ্রয় চাইবেন বলে জানান ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এ প্রতিবেদককে। মাওলানা আমানুল হক বলেন, প্রতিপক্ষের হুমকি-ধমকি এবং আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করবেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, তিনি অপর জারি মামলায় উচ্ছেদ ও দখল বুঝিয়ে দেয়া সংক্রান্ত ডিগ্রী বাতিল চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হবেন।