কথায় আছে ‘ক্যন্সার মেরেও যায় আর মরেও যায়’ এই প্রবাদ বাক্যটি সাধারন মানুষের জন্য প্রতারনার ফাদেঁ পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশে চিহ্নিত শত-শত ক্যান্সার রোগী’র ‘বায়োপ্সি টেষ্ট’ উল্টে যাচ্ছে ভারতের ঠাকুরপুকুর বা এ্যাপোলো হাসপাতালে গেলেই। অতি সহজেই ক্যান্সার নামক প্রতারনার ফাদেঁ ফেলে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা আর ঝড়ছে তরতাজা একটি করে প্রান।
বর্তমান খাদ্যে ভেজাল সহ রাসায়নিক সারের প্রভাবে আমাদের দেশের সাধারন মানুষের শরীরে নানান রকম নতুন নতুন রোগ বাসা বাধতে শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছোট/বড় টিউমার যেটা শরিরের বাহিরের অংশে বা ভিতরের অংশে সহজেই দেখা মিলছে। এটা বিভিন্ন বয়সের শরিরের মধ্যে দেখা যাচ্ছে অথবা শরীরের যে কোন অংশে অস্বাবাভীক ফোলা লক্ষ করা যাচ্ছে। আর এই টিউমার বা ফোলা অংশেই হচ্ছে “কাল”। এটাকে পুজিঁ করে নতুন ব্যবসা শুরু হয়েছে বাংলার চিকিৎসা জগতে। ‘ক্যান্সার’ ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা সবশেষে “কেমো থেরাপী” নামক বিষ এর ভুল প্রয়োগে মেরে ফেলা হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ অসহায় সাধারন মানুষকে। তবে আশার কথা হলো এই মরন ফাদঁ থেকে মুক্ত উপরের তলার মানুষ গুলো কারন তারা এই গরিব দেশে বাস করেন ঠিকই কিন্তু কানি আঙ্গুল গরম হলেই পারি জমান সিঙ্গাঁপুরে। এক কথায় বলির পাঠা আম(সাধারন) জনতা। হায়রে কপাল, কিন্তু সংবিভানের পাতায় শোভা পাচ্ছে ‘গণতন্ত্র’ তার মানে জনগনের দ্বারা+জনগনের জন্যে+জনগনেরই অর্থাৎ সবার আগে জনগন।
বর্তমান আমাদের চিকিৎসা জগতে, যে কোন টিউমার বা ফোলা অংশ ধরা পরলেই তড়িঘড়ি করে নেয়া হচ্ছে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্দোগ যার প্রথম ধাপ “FNAC TEST” বা নিডিল BIOPSY আর সহজেই ধরা পরে যাচ্ছে মরন ব্যাধি “ক্যান্সার”। প্রাথমিক রির্পোটে ক্যান্সার ধরা পরায় পাগল প্রায় অবস্থায় পড়ছে রোগী এবং রোগীর পরিবার।
তারপর শুরু হচ্ছে দৌড় ঝাপ আর দ্রুত চিকিৎসা। প্রাথমিক রির্পোটে অর্থাৎ FNAC রির্পোটে ক্যান্সার পাওয়ার পরে শুরু হচ্ছে জমদুত এর আতঙ্ক আর মৃত্যুর ভয়ে অসহায় মানুষ ছুটছে ‘ক্যান্সার অঙ্গের’ নিকট তথা কথিত বিশেষজ্ঞ। তার পরেই চক্রের ফাঁদে পড়তে বাধ্য রোগী ও তার অসহায় পরিবার। প্রথম পরামর্শ দেয়া হচ্ছে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে নইলে পুরো শরিরে মানে রক্তে ছড়িয়ে পড়বে ক্যান্সার তার পরেই নিশ্চিত মৃত্যু। প্রশ্ন আশে কি করবেন? চিকিৎসা শুধু করবেন না ভেবে সময় নষ্ট করবেন? জমদূত তথা মৃত্যুর ভয়ে – অসহায় পরিবার দ্রƒত ২/৩ ঘন্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে কোন মূল্যে চিকিৎসা শুরু করার তার পরেই ২য় ধাপ টিউমার অপারেশন এবং দুুই জায়গায় “BIOPSY TEST”। রোগী বা রোগীর পরিবারের মাথা নত করে সব মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় না থাকায় হ্যাঁ সুচক বক্তব্যের পরেই শুরু হয় চিকিৎসা। টিউমার অপারেশন বাবদ নগত গুনতে হয় ২০/৩০ হাজার টাকা তারপর “BIOPSY TEST” আর ফলাফল তো আগের টাই বহাল মানে “ক্যান্সার” তথা নিশ্চিত স্বল্প সময়ে মৃত্যু।
রোগী আর রোগীর পরিবারের পাগলামী এমন তুঙ্গে আর ঠিক এরই সুজোগে পরামার্শ আসে ৬ টি ‘ক্যামো থেরাপী’ দিতে হবে কিন্তু সময় হাতে কয়েক ঘন্টা আবার দ্রুত সিদ্ধান্ত ঐ মাথা নেড়ে হ্যা সম্মতী। তারপর আসল খেলা শুরু প্রতি ক্যামো ১০/২০ হাজার টাকা এতে করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে এক মাসের মধ্যে কয়েক লক্ষ টাকা তার পরে বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে ফলাফল ঐ পূর্ব নির্ধারীত ৯০ দিন বা তার কম সময়ের মধ্যে মৃত্যু। এ যেন মৃত্যুকে আলীঙ্গন করা বা সময় এগিয়ে নিয়ে দ্রুত মৃত্যু বরন করানো।
ভাগ্যের জোড়ে কেউ কেউ একটু চিন্তা করে পাশের দেশ ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য। ক্যামো নামক বিষ প্রয়োগের পূর্বে যারা ভারতে যাচ্ছে, সেখানে তাদের আবারও করা হচ্ছে নতুন করে “BIOPSY TEST” কিন্তু বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেতেই এবার ফলাফল ভিন্ন “কোন প্রকার ক্যান্সার নেই”। তারমানে পার্থক্য উত্তর মেরু আর দক্ষীন মেরু। এখন দায় কার? প্যাথলজি নাকি ডাক্তার নাকি সরকারের আসলে কারই কোন দায় নেই দায় কেবল অসহায় সাধারন মানুষের মানে আম জনতা। অকালে দিতে হচ্ছে গরিবের জীবন। তাও ভালো উপরের তলার মানুষ গুলো চিন্তামুক্ত। ফাইনালি গরিবের বেচেঁ থেকেই বা কি কাজ, কেবল মূল্যবান এই দেশের এক টুকরো মাটি দখল করে থাকা।
তারপরে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞাতার শেষ নেই কারন বাংলাদেশ থেকে ভারত পৌছতে পৌছতে ক্যান্সার উধাও হয়েছে। সবশেষে সুচিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরা আর এক বুক ঘৃনাভরে ধিক্কার বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি বেড়েই চলছে নিয়মিত। কিন্তু কয়জন পাচ্ছে ভারতে গমনের সুযোগ? তার আগেই সব শেষ ‘রোগী মেরেত্ত গেল আর মরেও গেল’। হায়রে গরিবের কপাল ‘বরাতে’ সৃষ্টিকর্তা যেন ভালো কিছু লিখতে ভুলেই গেছেন।
লেখক- প্রভাষক ইংরেজী, মাহিগঞ্জ কলেজ রংপুর