ওসি’র নির্দেশে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দিয়ে রিকশা চালকের নামে মাদকের মামলা দিল এসআই আবদুর রহমান শিরোনামে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে থানায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মো. আবু বকর মিয়া অসত্য সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ জুন বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে আমাকে ও উপ-পরিদর্শককে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি এবং প্রকৃত ঘটনা জানানোর জন্য সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গত ২০ জুন দিবাগত রাতে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছৈলাদি গ্রামে মোন্তাজ উদ্দিন দর্জির ছেলে মাদক কারবারি রাসেল ৫০পিস ইয়াবা আনতে যায়। তার সঙ্গী ছিল মোক্তারপুর ইউনিয়নের পোটান গ্রামে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আয়েজ আলীর ছেলে রিকশাচালক কাউছার (২৭)। ৫০পিস ইয়াবা নিয়ে ফেরার সময় ছৈলাদি গ্রামের চৌকিদার বোরহান শেখ তাদেরকে আটক করে। আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় চৌকিদার। পরের দিন ২১ জুন সকালে তারা বিকাশের মাধ্যমে চৌকিদারের নিকট টাকা পাঠায়। পরে এ বিষয়টি জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান খান ফারুক মাষ্টার কালীগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করেন। পরে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আবদুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে চৌকিদার বোরহানকে সাথে নিয়ে অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারি রাসেল ও মাদক বহনকারী রিকশা চালক কাউছারকে আটক করে থানা হাজতে রাখে। ২২ জুন ওই এস আই আবদুর রহমান বাদী হয়ে ৪৪ পিস ইয়াবা দেখিয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ২৩। তাতে শুধু আসামি করা হয় মাদক বহনকারী কাউছারকে।
কাউছারের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের গাড়িতে করে থানা থেকে রাসেল ও কাউছারকে গাজীপুর আদালতের উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলেও পথে কাপাসিয়া মোড় নামকস্থানে রাসেলের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করে এসআই আবদুর রহমান রাসেলকে ছেড়ে দেন। চৌকিদার বোরহানকে দিয়ে বাণিজ্য করলেও তাকে ওই মামলার সাক্ষী করা হয়।
ওসি আবু বকর মিয়া বলেন, এ তথ্য দিয়ে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। প্রকৃত ঘটনাটি হলো রিকশা চালক কাউছার আসল ইয়াবা বিক্রেতা। সে রিকশা চালায় আর মাদক বিক্রি করে থাকে। চৌকিদার বোরহান থানাকে অবগত করেনি। জামালপুরের সিদ্দিক চৌকিদার থানাকে অবগত করলে তাৎক্ষনিক থানার উপপরিদর্শক আবদুর রহমানকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এসআই আবদুর রহমান ৫০ পিস ইয়াবাসহ কাউছারকে আটক করে এবং রাসেলকে বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ৬ পিস ইয়াবা বিনষ্ট হওয়ায় ৪৪ পিস ইয়াবা দিয়ে কাউছারের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। রাসেলের কাছে কোনো ইয়াবা না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ৩৪ ধারায় আটক দেখিয়ে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়। পরে ওই দিনই রাসেল আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়। পাশাপাশি প্রকাশিত সংবাদে জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান থানাকে অবগত করেছে বলে প্রকাশ করে। কিন্তু চেয়ারম্যান কোনো তথ্য থানাকে জানায়নি।
থানা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, সাংবাদিকরা জাতির দপর্ণ। তারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করবে এটা সবারই প্রত্যাশা। প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যে সে বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করায় পুলিশের ভাবমূতি ক্ষুন্ন হয়েছে।