জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এবং ধান ও আলু চাষের জন্য খ্যাতি প্রাচীনকাল থেকেই। কিন্তু নতুন করে, নতুন ভাবে জয়পুরহাট জেলার এই প্রথম ও বড় পরিসরে বাণিজ্যিক ভাবে বিদেশী জাতের গ্রীস্মকালীন চেরি-টমেটো চাষের সাফল্যর দ্বার খুলে দিয়েছে উপজেলার ঘোশালপুর-নওপাড়া গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত ও উদ্যমী আদর্শ কৃষক শাহরিয়ার রহমান সাগর। তিনি নিজস্ব উদ্যেগে ৩৩ শতক বন্যামুক্ত উঁচু জমিতে উন্নত বিদেশী জাতের “বারি-১১”চেরি-টমেটো চাষ করছেন। এই চেরি-টমেটো রূপে ও গুনে অতুলনীয় এবং স্বাদে অনন্য। তার নিবেদিত শ্রম, সততা আর ঘামের প্রতিফলনে সুরভিত হয়ে বর্তমান কাঙ্খিত চেরি-টমেটোগুলো লাল হয়ে পাকে গাছে গাছে বাতাসে দুলছে। এই টমেটোর ভারে গাছ গুলো মাটিতে নুয়ে পড়ছে। নতুন জাতের এই গ্রীস্মকালীন টমেটোর চাষ করে তিনি অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন।
সরেজমিনে ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালাই বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার উত্তর-দিকে উপজেলার ঘোশালপুর-নওপাড়া গ্রাম। সেই গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত ও উদ্যমী আদর্শ কৃষক শাহরিয়ার রহমান সাগর এসএস এগ্রিকালচার নামে তিনি এই বছরে এপ্রিল মাসে বাণিজ্যিক ভাবে ৩৩শতক বন্যামুক্ত উঁচু জমিতে উন্নত বিদেশী জাতের ও বাংলাদেশে নতুন উদ্ভাবিত “বারি-১১” গ্রীস্মকালীন চেরি-টমেটো চাষ শুরু করেন। বর্তমান এই কাঁচা টমেটোগুলো আঙ্গুর ফলের মতো থোকায় থোকায় গাছে গাছে ঝুলে আছে। দেখতে কিছুটা আঙ্গুর ফলের মতো হলেও সেই চেরি-টমেটোগুলো পাকলে লালা-টুকটুকে হয়ে থাকে। তবে এই টমেটোগুলো পুষ্টিমান আঙ্গুরের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাতে রয়েছে অসাধারণ স্বাদ। এই সবজী অতি উচ্চ-ফলনশীল, কম পচনশীলতা, রোপনের স্বল্প সময়ে ও দীর্ঘ সময় ধরে ফসল পাওয়া এবং বাজারে উচ্চ দামে চাহিদা থাকার কারণে চেরি-টমেটো চাষের সাফল্যর দ্বার খুলেন তিনি। তার কাঙ্খিত গ্রীস্মকালীন চেরি-টমেটোগুলো লাল হয়ে পেকে গাছে গাছে বাতাসে বাতাসে দুলছে। তার এই দৃষ্টি নন্দীত বিদেশী জাতের গ্রীস্মকালীন চেরি-টমেটো ক্ষেত এখন সবার মুখে মুখে। তার বিদেশী চেরি-টমেটো ক্ষেত প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা এক নজর দেখতে আসেন। বর্তমান তিনি বানিজ্যিক ভাবে বিক্রি জন্য সংগ্রহ করছেন। তিনি উচ্চ দামে সপ্তাহের দুই থেকে তিন দিন ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলার পাইকারী বাজারে বিক্রি করেছেন।
কালাই উপজেলার ঘোশালপুর-নওপাড়া গ্রামের সফল চেরি-টমেটো চাষী শাহরিয়ার রহমান সাগর বলেন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে এমএসএস ডিগ্রী অর্জন করে ভালো বেতনে একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকুরি করি। সেই চাকুরি ভালো না লাগায় তা ছেড়ে দিয়ে এই বছরে মার্চ মাসে ময়মনসিংহ এগ্রিকালচার থেকে কিছু বীজ সংগ্রহ করে এপ্রিল মাসে ৩৩ শতক জমিতে বিদেশী জাতের গ্রীস্মকালীন চেরি-টমেটো বাণিজ্যিক ভাবে রোপন করি। ৩৩শতক জমিতে চেরি-টমেটো চাষ করে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন খুব ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি চেরি-টমেটো ২শ ৮০ থেকে ৩শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যে হারে চেরি টমেটো বিক্রি হচ্ছে তাতে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার লাভ হবে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। আশা রাখি আগামীতে আরও ৬বিঘা জমিতে এই চেরি-টমেটো রোপন করবো।
সেখানে দেখভাল দায়ীত্বে থাকা আলাউদ্দিন বলেন, এখানে আমি প্রায় তিন মাস যাবত কাজ করছি। এখানে কাজ করে আমি অনেক তৃপ্তি-বোধ পাচ্ছি। এই বিদেশী জাতের চেরি-টমেটো ক্ষেত এক নজর দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা আসেন।
সাগরের চেরি-টমেটো ক্ষেত দেখতে আসা একই গ্রামের শিক্ষিত বেকার তরুন-যুবক ফিরোজ হোসেন বলেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, আমাদের গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত শাহরিয়ার রহমান সাগর চেরি-টমেটো চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। আগামীতে আমিও বাণিজ্যিক ভাবে চেরি-টমেটো চাষ করবো।
কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মো.আসাদুজ্জামান বলেন, চেরি-টমেটো আর্থিক ভাবে লাভবানসহ পরিবেশ বান্ধব ফসল। আর সাগর এই জেলার একমাত্র চেরি-টমেটো চাষী। তিনি এলাকায় একটি আধুনিক চেরি-টমেটো ক্ষেত সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া তিনি এই চেরি-টমেটো চাষ করে অনেক সুফল পেয়েছেন। আমাদের কৃষি বিভাগ থেকে সাগরকে সব ধরনের সু-পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।