বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই মেঘনার ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। অব্যাহত ভাঙ্গনের কারণে গত দেড় মাসে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে অনেকে এখন রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। এভাবে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নদী গর্ভে বিলীন হবে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলায় ৯৬ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ বেড়ি বাঁধ রয়েছে। মেঘনার ভয়ঙ্কর থাবায় প্রায় ৩৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ৪৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত কমলনগরের মাতাব্বরহাট এলাকায় নদীর তীর রক্ষা বাঁধ বেশ কয়েক বার নদীতে ধ্বসে পড়েছে। যার কারণে উপকুলীয় এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটছেন।
উপজেলা পরিষদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট, পাটওয়ারীরহাট, চরফলকন, মাতব্বরহাট, লুধুয়া, রামগতি উপজেলার বাংলা বাজার, আসলপাড়া, গাবতলী, বড়খেরী ও রায়পুর উপজেলার চরকাচিয়াসহ ১০টি এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন করে আবারও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এ ৫ বছরে দুই উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া চরকালকিনি, মাতাব্বরহাট ও লুধূয়াসহ অন্তত ৩০টি হাট-বাজার, ২০টির ও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১৫টি মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে দাবী করছেন স্থানীয়রা।
সাহেবের হাট ও মাতাব্বার হাট এলাকার রফিক মাঝি ও আবুল বাশার জানান, মেঘনা তাঁদের সব কেঁড়ে নিয়েছে। বসতভিটা হারিয়ে বর্তমানে রাস্তার পাশে খুপড়ি ঘর তুলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখনো সরকারীভাবে কোন পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি তাদেরকে। তাই সরকারের কাছে নদীভাঙ্গা মানুষের পূনর্বাসনের দাবী জানান তারা।
কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ান জানান, গত তিন বছর ধরে মেঘনায় কমলনগর ও রামগতির ব্যাপক এলাকা মেঘনায় ভেঙ্গে গেছে। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমলনগর-রামগতিকে রক্ষার জন্য নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে কমলনগরে ১কিলোমিটার ও রামগতি উপজেলায় ৪ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অনিয়মের কারণে বাঁধের কিছু অংশে নদীতে ভেঙ্গে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে কমলনগর-রামগিত বাঁচাও মঞ্চের উদ্যোগে মেঘনার ভাঙ্গন রক্ষার দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মেঘনার ভাঙ্গন থেকে দুই উপজেলার মানুষকে রক্ষার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন তাঁরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা গৃহহীনের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের বরাদ্ধ না পেলে এ বর্ষায় অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ১৭শ ৮কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।