ভোলার মনপুরার হাজীর হাট ঘাট থেকে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তজুমদ্দিনের উদ্দেশ্যে ৬০ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাওয়া ট্রলারটির ইঞ্জিন মাঝ নদীতে বিকল হয়ে যায়। প্রায় ৫ ঘন্টা নদীতে ভেসে থাকার পর তজুমদ্দিন থেকে অন্য একটি ট্রলার এসে যাত্রীবাহী ট্রলারটিকে টেনে নিয়ে তজুমদ্দিন পৌছায়।
মনপুরা-তজুমুদ্দিন নৌরুটে যাত্রীবাহি সীট্রাক শহীদ এস.টি শেখ কামাল গত দুই দিন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকায় ট্রলারে করে যাত্রী পারাপার করছে তজুমদ্দিনের কালু মাঝির ছেলে শাহজাহান মাঝি।
মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় মনপুরা থেকে ওই ট্রলারে করে কমপক্ষে ৬০ যাত্রী নিয়ে তজুমুদ্দিনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলে মেঘনার মাঝপথে ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে প্রায় ৫ ঘন্টা ধরে মেঘনায় যাত্রী নিয়ে ভাসছিল মাছ ধরার ট্রলারটি।
এই সময় বৈরী আবহাওয়া ও প্রচন্ড বৃষ্টিতে যাত্রীরা ভিজে একাকার হয়ে যায়। সব যাত্রীদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। পরে তজুমুদ্দিন থেকে আরেকটি ট্রলার এসে দড়ি বেঁধে নষ্ট ট্রলারটি টেনে তজুদ্দিনের দিকে রওয়ান হয়েছেন বলে মুঠোফোনে জানান ওই ট্রলারের যাত্রী মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষক মোঃ ছালাহ উদ্দিন।
ওই শিক্ষক নষ্ট হওয়া ট্রলারের থাকা যাত্রী ও উদ্ধারে আরেকটি ট্রলার দড়ি দিয়ে বেঁধে নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেইসবুকে) দিলে ছবিটি ভাইরাল হয়ে মনপুরার স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই খোঁজ নিতে শুরু করে ওই ট্রলারে থাকা আতœীয়স্বজনদের।
ওই ট্রলারে যাত্রী মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজের শিক্ষক ছালাহউদ্দিন মুঠোফোনে বিকেল ৪ টায় জানান, ভাই ৫ ঘন্টা ধরে মেঘনায় ভাসছি। এই মাত্র আরেকটি ট্রলার উদ্ধারে এসেছে। উত্তাল মেঘনা। সব যাত্রী ভিজে একাকার। সবাই আল্লাহ ডাকা ছাড়া উপায় নাই। মনে করেছি আজ জীবনের শেষ দিন।
মনপুরা হাজিরহাট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্রেসক্লাব সভাপতি জানান, ডেঞ্জারজোনে সীট্রাকের পরিবর্তে কিভাবে ট্রলারে করে, কারা যাত্রী পারাপার করছে সেই বিষয়টি প্রশাসনের খতিয়ে দেখার দরকার। তা নাহলে যে কোন সময় ট্রলার ডুবে প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে।
মনপুরা থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি ) সাংবাদিকদেও জানান, ট্রলার করে যাত্রী পারপার করছে বিষয়টি জানিনা। তবে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বিআইডব্লিটিএর ভোলা জোনের উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান সাংবাদিকদেও জানান, ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মনপুরার মেঘনায় সি-সার্ভে সনদ ছাড়া যাত্রী পারাপার করা যাবে না। ওই ট্রলারটির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, মনপুরার সাথে জেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মনপুরা-তজুমুদ্দিন নৌরুটটি। এইরুটে সীট্রাক শহীদি এস.টি শেখ কামাল যাত্রী পারাপার করে। যান্ত্রীক ত্রুটির কারণে সীট্রাকটি বন্ধ রয়েছে।
এদিকে এই রির্পোট (বিকেল সাড়ে ৪ টা) লেখা পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে বিকল হওয়া ট্রলারটিকে উদ্ধারে আসা অপর ট্রলারটি উদ্ধার করে তজুমুদ্দিনের ঘাটে পৌছেনি।
ক্যাপসন ঃ পিক-১.২.৩
মনপুরা-তজুমুদ্দিনের নৌ-রুটে ৬০ যাত্রী নিয়ে বিকল হওয়া ট্রলারটি ভাসছে মেঘনায়। আতঙ্কিত মহিলা যাত্রীরা ট্রলারের পাটাতনে শুয়ে পড়েছেন।
মনপুরা-তজুমুদ্দিনের নৌ-রুটে ৬০ যাত্রী নিয়ে বিকল হওয়া ট্রলারটি উদ্ধারে আরেকটি ট্রলারে চেষ্টা।