কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাটার কারনে আবাদি ফসল কম হয়ে যাচ্ছে। ধানে ভরপুর উপজেলার নাম কালীগঞ্জ। কথাটিতেই লুকিয়ে আছে কালীগঞ্জের মাটির উর্বরতা। শুধু ধান নয়, একই জমিতে বছরে তিন রকমের ফসলের আবাদ হয় এই অঞ্চলে। কিন্তু উর্বর এই তিন ফসলি জমির ওপরের অংশ (টপ সয়েল) কেটে নিয়ে ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। ফলে মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি, কমে যাচ্ছে উৎপাদন ক্ষমতা। ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে পরিবেশ।বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটা শত শত বিঘা জমির উপরিভাগ আধা ফুট থেকে এক ফুট, অনেকাংশে তার চেয়েও বেশি গভীরতায় মাটি কেটে ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ইট ভাটা গুলোতে।
ভাটায় ক্রয়কৃত বিশাল বড় বড় মাটির ঢিবি। ইট ভাটার কর্মরতদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে মাটি কিনি না। গাড়ির মালিক কোথা থেকে মাটি নিয়ে আসে, আমরা তাও জানি না। প্রতি ট্রলিতে ৭০-৭৫ ঘনফুট মাটি আসে। ট্রলি প্রতি গাড়ির মালিককে ৫০০ ৭০০ টাকা দেওয়া হয়।’
ট্রলির মালিকরা বলেন, ‘আমরা নিজে থেকে কৃষকদেরকে মাটি বিক্রি করতে বলি না, তারা নিজেরাই আমাদের খুঁজে নেয়। উঁচু জমিতে, পানি থাকে না, এ জন্য মাটি কেটে খাল করে নেয় জমির মালিকেরা।’ তিনি আরও জানান, প্রতি বিঘায় তিন ফুট গভীরতায় মাটি কাটার জন্য জমির মালিককে দেওয়া হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা এবং এক ফুট গভীরতায় মাটি কাটলে দেওয়া হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। এক ফুট গভীরতায় এক বিঘা মাটিতে ১২০-১৫০ ট্রলি পর্যন্ত মাটি সংগ্রহ করে বলেও জানান তিনি। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে তা ব্যবহার করতে পারবে না। এই আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদ- বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধানও রয়েছে সেই আইনে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, ‘যেকোনো উদ্ভিদের মৌলিক খাদ্য উপাদান মোট ১৬টি। যার তিনটি উপাদান উদ্ভিদ বাতাস থেকে সংগ্রহ করে এবং ১৩টি উপাদান সংগ্রহ করে মাটি থেকে। আর এই ১৩টি উপাদান সঞ্চিত থাকে মাটির উপরি ভাগের ১-৬ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটিতে ইতিমধ্যে ১৩টি উপাদানের মধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, জিংক, বোরন, ম্যাগনেশিয়াম, জৈব পদার্থসহ মোট ৯টি উপাদানের সংকট দেখা যাচ্ছে বলেও জানান তাঁরা। তাঁরা বলছেন, জমির উপরিভাগের মাটি এভাবে কেটে নেওয়ার ফলে সেই জমি আগের অবস্থায় ফিরে আসতে ২০ বছরের অধিক সময় লাগে। ভবিষ্যতে ২০-৩০ শতাংশ হারে ফসল উৎপাদন কমে যায়।