কুড়িগ্রামের গোটা চিলমারী উপজেলা বন্যার পানিতে ভাসছে। লক্ষাধিক মানুষ দেড় সপ্তাহ ব্যাপি পানিতে বন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যার্ত মানুষের দুঃখ দুর্দশা চরমে উঠেছে। সপ্তাহ ব্যাপি বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় বন্যার্তদের দুরাবস্থা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বন্যার্ত মানুষেরা ঘরবাড়ি ছেড়ে কুড়িগ্রাম, রংপুর ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শরণার্তীদের ন্যায় পাড়ি জমাচ্ছেন। উপজেলার এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে বন্যার পানি উঠেনি। জীবন বাঁচানোর জন্য অনেকেই ঘরের চালে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দোতলায় ও উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। বাড়ি ঘরে পানি উঠার ফলে ধনী গরিব একাকার হয়ে পড়ছে। বিশুদ্ধ পানি ও গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার গবাদি পশু মারা গেছে। উপজেলার রমনা এলাকায় রেললাইন ভেঙ্গে গিয়ে রেল যোগাযোগ ও উপজেলার প্রধান সড়কসহ সকল রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। পুটিমারী এলাকার আলী হোসেন (৮০) জানান, আমার বয়সে ৮৮ এর বন্যাসহ অনেক বন্যা দেখেছি, এবারের মত ভয়াবহ বন্যা দেখিনি। প্রতিটি ঘরে কোমর পরিমাণ পানি হয়েছে। মনের দুঃখে উলিপুরে জামাই বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য চলে যাচ্ছি। উপজেলা সদরের আবদুল হাকিম (৭৫) জানান, আমি চিলমারী হাসপাতাল ও ওসি এল এস ডি মোড় পর্যন্ত কখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে দেখিনি। এটি আমার জীবনের একটি স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যা। পরিবার পরিজন নিয়ে থানাহাট প্রাইমারি স্কুলের দোতলায় অবস্থান নিয়েছি। রান্নাবান্না করতে না পারায় অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছি। সমস্ত নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির কষ্টে রয়েছি। চিলমারী উপজেলা পরিষদ, মডেল থানা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার পানিতে তলিয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৫ সে. মি. পানি কমিয়ে এখনো ৮৭ সে. মি. উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে উপজেলা সদরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিঃদাঃ) জানান, বন্যা মোকাবেলায় আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। ১শ ১০ মে.ট. চাল ও ১হাজার প্যাকেট শুকনা খাবারের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। চাল বিতরণ শেষ হয়েছে। আরো বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে।