নাম ইউসুফ নবি। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসারে বাবা-মাকে সহযোগীতার পাশাপাশি নিজের লেখাপড়াটাও চালিয়ে গেছেন। দারিদ্র পরিবারে জন্ম হলেও লেখাপড়াটা অনেক কষ্ট করে চালিয়েছেন। তার মূল পেশা রাজমিস্ত্রীর কাজ পাশাপাশি পড়ালেখা করেও করেন ইউসুফ নবি। জীর্ণশীর্ণ কুঠিরে জন্ম নিয়েও স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরনে রয়েছে সংশয় ও নানা বাধা।
ইউসুফ নবি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের দিন মজুর লুৎফর রহমান ও নয়ন তারা দম্পত্তির দ্বিতীয় সন্তান। সে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারী কলেজ থেকে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে জেএসসিতে ও এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ইউসুফ নবির পিতা দিনমজুর লুৎফর রহমান ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, আমি দিনমজুরের কাজ করি। এই সামান্য আয়ে ৬ সদস্যের পরিবার চালাতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। এর মধ্যে আমার ৪ ছেলেই লেখাপড়া করে। তাদের মধ্যে বড় ছেলে অনার্স ২য় বর্ষে, ইউসুফ এবার এইচএসি পাশ করলো আর ছোট দুই ছেলে ১০ম শ্রেনী ও ২য় শ্রেনীতে পড়ে। তাদের লেখাপড়ার খরচ আমি বহন করা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। যার কারণে তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি দিন মুজুরীর অন্যান্য কাজও করে। আমার দ্বিতীয় সন্তান ইউসুফ নবি অত্যান্ত মেধাবী। তার ইচ্ছে সে ডাক্তার হবে। কিন্তু তার সে ইচ্ছে আমার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই তাকে বলেছি নিজের পড়ার খরচ জোগার করতে পারলে পড়াশুনা কর। না পারলে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ কর।
ইউসুফ নবি ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল আমি বড় হয়ে ডাক্তার হব। গরীব অসহায় লোকজনকে বিনা টাকায় চিকিৎসা সেবা দেয়ার ইচ্ছে ছোট বেলা থেকেই। তাই বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই লেখাপড়া করেছি। কিন্তু এখন মনে হয় আমার সেই ইচ্ছে আর পূরন হবে না। আমার পড়া লেখা মনে হয় এ পর্যন্তই, আর মনে হয় পড়তে পারবো না। বাবাও বলে দিয়েছেন নিজে যদি উপার্জন করে পড়া লেখা করতে পারি তাহলে করতে। গরিবের ঘরে জন্ম নেয়াই কি আমার অপরাধ? শুনেছি সমাজের অনেক বিত্তবানদের সহযোগীতায় অনেকেই লেখাপড়া করছে। অনেক বেসরকারী ব্যাংক থেকে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে তারা লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। আমি কি কখনো কারো সহযোগীতা পাবো না। আমার কপালে কি সেটাও জুটবে না?
হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামসুল হক ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, ইউসুফ নিঃসন্দেহে অত্যান্ত মেধাবী একজন ছাত্র। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট তার লেখাপড়ায় একমাত্র বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগীতা পেলে ইউসুফ তার স্বপ্ন পূরন করে দেশের সম্পদ তৈরী হতে পারে।