কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষকের ফসল রক্ষায় পশু পাখিকে ভয় দেখানোর জন্য মানুষের প্রকৃতিকে বিশেষ কাকতাড়ুয়া তৈরী করে জমিতে রাখা হতো। কালের আবর্তে তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে আধুনিকতার ছোয়ায় ফসল রক্ষায় কৃষক আর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে জমিতে রাখে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুর ইসলাম জানান কাকতাড়ুয়া যার অর্ত হচ্ছে কাক কিংবা অন্যান্য পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্যে জমিতে রক্ষিত মানুষের প্রতিকৃতি বিশেষ। এর মাধ্যমে পশু-পাখিকে ক্ষেতের ফসল কিংবা বীজের রক্ষণা বেক্ষনের লক্ষ্যে নিরুৎসাহিত করা হয়। ফসলের জন্য ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যেই মূলতঃ মাঠে কাকতাড়ুয়া দাঁড় করানো অবস্থায় রাখা হয়।
কালগিঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান একসময় জমির ফসল রক্ষায় কাকদের ভয় দেখানোর জন্য অন্য একটা কাক মেরে উঁচু জায়গায় ঝুঁলিয়ে রাখা হতো। সাধারণত ফাঁদ হিসেবে ও ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে কাকতাড়ুয়া তৈরী করা হয়। সনাতনী ধারায় এটি মানুষের দেহের গড়নের সাথে মিল রেখে পুরাতন, পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে কিম্ভু তকিমাকার ন্যায় সাজানো হয়। তারপর কৃষক ফষলি জমির মাঝামাঝি স্থানে গর্ত খুঁড়ে খুঁটি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখে। এর মাধ্যমে বাতাসের দোলায় কাপড় হাল্কা দুলতে থাকে এবং কাক অথবা চড়ুইজাতীয় পাখির উৎপাত ও সাম্প্রতিক সময়ে বীজ বপনের ফলে তাদের খাদ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখার জন্যই এই প্রয়াস চালানো হয়।
পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক সাখাওয়াত হোসেন জানান, বসন্তকালে বাগানে কাকের উৎপাতজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাছাকাছি অবস্থান করে এ পাখিটি রোপিত বীজ মাঠে নেমে খেয়ে ফেলে। তা থেকে রক্ষা পেতে আগের দিনে কাকতাড়ুয়া হিসেবে সচরাচর ফাঁদ মানবাকৃতির প্রতিকৃতির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সবজি জাতীয় ফসলে এটা ব্যবহার হতো। এখন আর তেমন দেখা যায় না। কাকতাড়ুয়ার সহজ যে চেহারা দেখা যায়, তা হলো একটা খাড়া লম্বাকৃতির দন্ডের উপরের এক-তৃতীয়াংশে ভূমি সমান্তরালে আড়াআড়ি করে আরেকটি দন্ড বেঁধে দুপাশে হাত ছড়িয়ে দাঁড়ানো মানুষের আকৃতি তৈরি করা হয়, তারপর এই আকৃতির গায়ে জড়িয়ে দেয়া হয়, পুরোন পাঞ্জাবি, কিংবা শার্ট- লুঙ্গি। লম্বাকৃতি দন্ডের উপরের মাথায় রেখে দেয়া হয় মাটির পাতিল। এতে পাতিলের তলা বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকে আর একটা মানুষের মখের মতো করে কালি দিয়ে চেহারা তৈরী করা হয় পাতিলের তলায়। নরেন্দ্রপুর গ্রামের রুহুল আমিন জানায়, বেগুন থেতে দেখা মেলে একটি কাকতাড়ুয়া। তার সাথে কথা বলে জানাগেছে পাখিদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে তিনি সনাতনি পদ্ধতি কাকতাড়ুয়া তৈরী করে জমিতে দিয়েছেন। এতে ফলও ভাল পেয়েছেন।