পাবনার চাটমোহরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে উপজেলার হান্ডিয়াল,নিমাইচড়া,ছাইকোলা,বিলচলন ও হরিপুর ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বানের পানিতে উপজেলার ৫ শতাধিক হেক্টর জমির বোনা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ অবশ্য বলছে ২২০ হেক্টর জমির বোনা আমন ধান আক্রান্ত হয়েছে বন্যার পানিতে। বন্যায় উপজেলার অন্তঃ ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডুবছে জনপদ,ফসলের মাঠ।
এদিকে দীর্ঘ ৩০ বছর পর চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদীতে পানি এসেছে। বইছে ¯্রােত। যা কিছুদিন আগেও কেউ কল্পনা করতে পারেনি। ভাবেনি কচুরিপানায় পরিপূর্ণ,বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হওয়া এই বড়াল নদীতে পানি আসবে,¯্রােত বইবে। সেই বড়ালে এবার বানের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বড়াল পাড়ের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বড়াল নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মাছ ধরার জন্য পাতা হয়েছে খড়া জাল। কচুরিপানা ¯্রােতে ভেসে যাচ্ছে। পরিস্কার পানি এখন বড়ালে। বড়ালের কচুরিপানা অপসারণ করতে ও পানি প্রবাহ বাড়াতে পৌর মেয়র মির্জা রেজাউল করিম দুলাল নিজ উদ্যোগে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন। বাঁশের সাঁকো তুলে দিয়ে কচুরিপানা অপসারণ করা হচ্ছে। বাড়ছে পানির ¯্রােত। বড়াল ফিরে পাচ্ছে তার যৌবন। বড়াল পাড়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেলো,তারা অনেক বছর পর এই নদীর ¯্রােত দেখলেন। উৎফুল্ল এখন বড়াল পাড়ের মানুষ।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদী রক্ষায় আন্দোলন শুরু হয়। এরপর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে,নদীর মাঝের আড়াআড়ি বাঁধ অপসারণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ২০০৮ সালে বড়াল রক্ষায় তৈরি হয় আন্দোলন কমিটি। সহায়তা করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা),পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা),এএলআরডিসহ বিভিন্ন সংগঠণ। বড়া রক্ষা আন্দোলন কমিটির নিয়মিত সভা,সমাবেশ,মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে বেলার দায়ের করা রিট মামলায় উচ্চ আদালত বড়াল থেকে সব বাঁধ ও জলকপাট অপসারণের নির্দেশ দেন সরকারকে। সে অনুযায়ী বাঁধ অপসারণ করে সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে স্বস্তি ফিরতে থাকে বড়ালপাড়ের বাসিন্দাদের।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,১৯৮০ সাল পর্যন্ত বড়াল নদে পানিপ্রবাহ ছিল। ১৯৮১ সালে রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা থেকে বড়ালের উৎসমুখে ও পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা দহপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দুটি জলকপাট নির্মাণ করে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে নৌযান চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন নদী পারাপারের জন্য সেতু তৈরির দাবি তোলেন। কিন্তু সেতু না করে বড়ালে চারটি আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে বড়ালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। দিনে দিনে দখল-দূষণে ২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বড়াল পরিণত হয় মরা খালে। পানি না পেয়ে ব্যাহত হতে থাকে বিস্তীর্ণ চলনবিলের চাষাবাদ। এখন সেই বড়ালে পানি প্রবেশ করেছে। সৃষ্টি হয়েছে ¯্রােতের। আন্দোলকারীদের সফলতা এসেছে অনেকটাই।
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির নেতারা জানান,বড়ালের পানিপ্রবাহ সচল রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বড়ালে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। বাড়ছে দূষনও। চলছে দখল। এর স্থায়ী প্রতিকার দরকার। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,বড়াল নদী প্রবাহমান হোক-এটা সর্বস্তরের মানুষের দাবি।
চাটমোহর পৌরসভার মেয়র মির্জা রেজাউল করিম দুলাল বলেন,‘অনেকদিন পর বড়ালে ¯্রােতের দেখা মিললো। বড়ালের কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনা ¯্রােতে ভেসে গেলে আমরা পৌরবাসীও উপকৃত হবো। তাই কচুরিপানা অপসারণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন,বড়ালের এই পানি প্রবাহ আমাদের অন্দোলনের ফসল। আশা করছি সরকার দ্রুত বড়াল মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিবে।