বরিশালে জমে উঠেছে পক্ষকালব্যাপী বিভাগীয় বৃক্ষমেলা। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মাত্র তিনদিনেই মুখরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গন। মেলার বিভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা দুর্লভ ফলজ, বনজ ও ফুলের নানাগাছের মধ্যে রয়েছে ভিন্নতা ও নতুনত্ব। ভিন্নতার সূত্র ধরেই মেলায় একটি গাছের দাম হাকা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অবাক করার মতো দাম হলেও গাছটিকে ঘিরে ক্রেতাদের কৌতূহলের শেষ নেই।
ছোট ছোট পাতার মাঝারি আকারের নৌকার মতো করে সাজানো হয়েছে মালফুজিয়া নামের বৃক্ষটি। বৃক্ষমেলার সবচেয়ে দামি এ গাছটি মেসার্স নেছারাবাদ নার্সারির স্টলে শোভা পেয়েছে। স্টলের কর্মী আবুল হোসেন বলেন, মেলায় সবার দৃষ্টি মালফুজিয়া গাছটির দিকে। গাছটি পরিচর্যার মাধ্যমে এ রূপে আনতে আমাদের প্রায় আট বছর সময় লেগেছে। ওই নার্সারির স্বত্ত্বাধিকারী মানিক হোসেন বাহাদুর বলেন, গাছটি আমার খুব শখের। এর রূপ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতিক নৌকার অবয়বে।
‘শিক্ষায় বন প্রতিবেশ, আধুনিক বাংলাদেশ’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বরিশালে ১৫ দিনব্যাপী বিভাগীয় বৃক্ষমেলার উদ্বোধণ করা হয়েছে গত ২৫ জুলাই। বরিশাল জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সামাজিক বন বিভাগ, কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং উপকূলীয় অঞ্চল আয়োজিত এ বৃক্ষমেলা চলবে আগামি ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে শুরু হওয়া এ মেলায় বসেছে ২৪টি স্টল। এরমধ্যে সরকারী পাঁচটি দফতরের উদ্যোগে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে তথ্য সরবারহ, তথ্য গাইড প্রদান ও বৃক্ষের বীজ থেকে পূর্ণতার প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বাকি ১৯টি স্টল ব্যক্তি মালিকানাধীন। যারমধ্যে বরিশাল নগরীর ছয়টি নার্সারী রয়েছে। আর ১৩টি নার্সারীর মধ্যে একটি উজিরপুরের ও ১২টি এসেছে নেছারাবাদ এবং স্বরূপকাঠী উপজেলা থেকে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত আট পর্যন্ত চলে মেলার কার্যক্রম।
সামাজিক বন বিভাগের মুলাদী উপজেলার বন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, বিগত বছরের চেয়ে এ বছর মেলায় দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটছে বেশি। বিকেল নামলেই মানুষের ঢল নামে। অনেকেই তথ্য জানতে আসেন। আবার অনেকে নিজের জন্য কেউবা প্রিয়জনকে মেলা থেকে গাছ ক্রয় করে উপহার দিচ্ছেন। মালিকানাধীন নার্সারীর মালিকরা এবারের মেলায় বেশ কিছু বিরল ও দুর্লভ প্রজাতির গাছ এনেছেন। এরমধ্যে ড্রাগন, ম্যানফুজিয়া, ক্যাকটাস উল্লেখযোগ্য। ছোট আকৃতির প্রতিটি ড্রাগন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর ফলসহ ড্রাগন গাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে তিন হাজার টাকায়। এ ছাড়া ইনডোর প্লান্টের অনেক গাছ রয়েছে বিভিন্ন স্টলে। মেলায় এখন পর্যন্ত আট বছর বয়সের পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের বনসাই এনেছে ক্যাকটাস ভ্যালী নামের নার্সারী। আগামি ২/৩দিনের মধ্যে দেড় লাখ টাকা দামের বনসাই মেলায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ওই নার্সারীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
অপরদিকে রবিবার পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের নৌকা আকৃতির মালফুজিয়া বৃক্ষ দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন নির্ধারিত অংকের টাকার গাছ বিক্রি হচ্ছে এমনটা নয়। তবে প্রথম দিনে যা বিক্রি হয়েছে তার তিনগুন বিক্রি হয়েছে গত দুইদিনে। প্রতিদিনই বিক্রির হার বেড়ে চলেছে। এভাবে বিক্রির ধারাবাহিকতা থাকলে ১৫দিনের মেলায় সার্বিক খরচ দিয়েও তাদের বেশ ভালো ব্যবসা হবে বলেও ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেন।
বন গবেষণা ইনিস্টিটিউটের রূপাতলী অফিসের কর্মকর্তা বিএম আবদুর রাজ্জাক বলেন, বন গবেষণা ইনিস্টিটিউটের স্টল থেকে সরাসরি তথ্য সহায়ক বই প্রদান করা হচ্ছে। দর্শনার্থীরা ম্যানগ্রোভ নার্সারী সর্ম্পকে জানছেন। মানুষের আগ্রহ সন্তোষজনক উল্লেখ করে আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, দিন যতোই গড়াবে দর্শনার্থীদের ভীড়ও ততো বৃদ্ধি পাবে এবং বিক্রিও বেশি হবে। তবে মেলার দর্শনার্থী ও মালিকাধীন স্টলের মালিকরা সার্বিক বিষয়ে মেলার আয়োজকদের আরও দায়িত্বশীল ও সচেতন হওয়ার আহবান করেছেন।