চট্টগ্রাম মেট্রো আদালতের হাজতখানায় নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির এবার প্রমাণ পেয়েছেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তদন্ত কমিটিও। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে মেট্রো আদালতের হাজতখানায় দীর্ঘদিন যাবত দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের নির্দিষ্ট সময়ের পর বদলির সুপারিশও করা হয়েছে। গত ১আগষ্ট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে ওই প্রতিবেদন জমা দেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি। ওদিকে এমন ধরণের অনিয়মের ঘটনাটি অনেকেরই জানা থাকলেও নানা কারণে এতদিন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়, এই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- হাজতখানায় কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য অর্থের বিনিময়ে হাজতিদের সঙ্গে দর্শনার্থীদের দেখা করতে দেয়। আবার খাবার সরবরাহ করা, কম হাজতি বিশিষ্ট কক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় হাজতি রাখা, ফোনে কথা বলার বিশেষ সুযোগ দেয়া। আদালত ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার খালি কক্ষে বিশেষ সুবিধা দিয়ে কোনো কোনো হাজতিকে দর্শণার্থীদের সাথে দেখা করতে দেয়ার ঘটনার সাথে জড়িত। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে- ভুক্তভোগীরা কোনো নির্দিষ্ট পুলিশ সদস্যের নাম উল্লেখ না করায় এবং দায়িত্বপালনকালে অর্থগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যরা তাদের বুকে থাকা নাম সম্বলিত ব্যাজ পরিধান না করায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা যায়নি।
কমিটির দেওয়া এই তদন্ত প্রতিবেদনে মেট্রো আদালতের হাজতখানায় অনিয়ম এবং দুর্নীতি বন্ধে ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- দীর্ঘদিন যাবত যে সকল পুলিশ সদস্য হাজতখানায় দায়িত্ব পালন করছেন; তাদের নির্দিষ্ট সময়ের পরে বদলি করা, হাজতখানার ভেতর ও বাহির সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসা, হাজতখানায় নিবন্ধিত আইনজীবী ছাড়া দর্শণার্থীর প্রবেশ বন্ধ করা, হাজতখানা কেন্দ্রিক টাউট চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা, পুরুষ হাজতখানার কক্ষ বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি কক্ষে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, হাজতখানায় পয়:নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, হাজতখানায় দায়িত্বরত সকল পুলিশ সদস্যদের বুকে নাম সম্বলিত ব্যাজ পরা নিশ্চিত করা, কারাগার থেকে যেসব আসামিকে আদালতে আনা হয়; তাদের দুপুরের খাবার কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা ও হাজতিদের আবশ্যিকভাবে হাজতখানা থেকে সংশ্লিষ্ট আদালতে প্রেরণ করা।
এই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. আবুল কালাম আজাদ। প্রসঙ্গত; গত ১০ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতের নিচতলায় মেট্রোপলিটন পুলিশের হাজতখানার অনিয়ম নিয়ে একটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর একইদিন বিকালে চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখার হাজতখানায় কর্মরত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এসআই শাহজাহান ও কনস্টেবল হান্নানকে ক্লোজড করেন সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবর রহমান। এছাড়াও এ ঘটনা তদন্তে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান।