কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বিভিন্ন কামার পল্লিতে কর্ম ব্যস্ততা বেড়েছে। এই ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন কামার-পাড়া চিত্র অনেক পাল্টে গেছে। তারা ভাঁতির মাধ্যমে কয়লার আগুনে বাতাস দিয়ে লোহার খন্ডকে দগদগে লাল করছেন। সেই আগুনে লাল হওয়া লোহার খন্ডকে শরীরের সবটুকু জোড় একত্র করে হাতুড়ি দিয়ে একের পর এক ঠ্যাং ঠ্যাং করে আঘাত করছেন কামারেরা। সবারই হাত, পা, মুখ কালিতে ভরা। তাদের বেশি ভাগেই কাপড় অর্ধাঙ্গ জুড়ে আর পরনের লুঙ্গি ও গেঞ্জি ময়লা দেখা যাচ্ছে। অসহনীয় উত্তাপে তাদের শরীর দরদর করে বইছে ঘাম। তীব্র ব্যস্ততার চাপে ক্লান্ত কারও কাছে ঠাই পাচ্ছিল না। তাদের একটাই লক্ষ সামনে কোরবানির ঈদ। আর এই ঈদের কোরবানিদাতাদের জন্য পশু জবাই করা, চামড়া-ছাড়ানো, মাংস ও হাড় কাঁটার জন্য নানা ধরণের বাহারি আকারে লৌহজাত সামগ্রী তারা তৈরী করছেন। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে তাদের কর্ম ব্যস্ততা ততই বারছে। বর্তমান তারা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরেজমিনে দেখে গেছে, কালাই উপজেলার কামার পল্লিতে লোহার তৈরী সামগ্রীর চাহিদা থাকে সারা বছরই।। কিন্তু মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কামারদের এখন কর্ম ব্যস্ততা সময় পার করছেন। এই কোরবানির ঈদের পশু জবাই করাসহ চামড়া-ছাড়ানো, মাংস ও হাড় কাঁটার জন্য নানা আকারে লৌহজাত সামগ্রী বানাচ্ছেন। কেউ দিচ্ছেন পুরাপুর-নতুন লৌহজাত সামগ্রীকে শান। কেউ সাহায্য করছেন অন্য সহকর্মীকে। আরাম-আয়েশ, ডুব-গোসল, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, সময়মত খাদ্য গ্রহণ এবং সহকর্মীদের সঙ্গে গল্পগুজব প্রায় সবই বন্ধ। কেবল সহকর্মীর সঙ্গেই চলছে একটু আকটু কথা, তাও সংশ্লিষ্ট কাজের আর কিছু কথা হচ্ছে ক্রেতার সঙ্গে। কেউ ওইসব লৌহজাত সামগ্রী তৈরী শেষে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করছেন। কেউ দোকান বসিয়ে তাদের নাম দেওয়া লৌহজাত সামগ্রীগুলো আকার ভেদে বিভিন্ন দামে ছুরি, দা, পাগলু-দা, চাপাতি, বটি বিক্রি করছেন। আর কোরবানি দাতারা পশু জবাইয়ের জন্য আকারের ভেদে ওই সব লৌহজাত সামগ্রী কিনতে ভিড় করছেন।
কালাই উপজেলার কর্মকারপাড়া শ্রী ভজোহরী কর্মকার ও শ্রী নারায়ন চন্দ্র কর্মকার বলেন, সারা বছর খুব একটা হাতে কাজ জমে না। তবে কোরবানির ঈদকে ঘিরে বেড়ে গেছে আমাদের ব্যস্ততা। আর আগামি প্রায় এক সপ্তাহ এই কর্মতৎপরতা থাকবে।
উপজেলার পুনটহাটের লৌহজাত তৈরী সামগ্রী পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা শ্রী বিমল কর্মকার ও শ্রী অনিল কর্মকার বলেন, আমরা ওই সব লৌহজাত সামগ্রী তৈরী করে নিজ এলাকায় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি জন্য সরবরাহ করছি। পশু জবাইয়ের জন্য আকারের ভেদে ছুরি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, চামড়া ছাড়ানো ছোট ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, দা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, হাড় কাঁটা পাগলু-দা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা এবং গোস্ত কাঁটা বটি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৩০ টাকা। তবে কোরবানির প্রায় ৪ দিন আগে থেকে বিক্রি হয়। বর্তমানেও ভালো বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার মাত্রাইহাটে পশু জবাই করা কাজে ব্যাবহৃত সরঞ্জাম কিনতে আসা কোরবানিদাতা ডেন্টিস্ট আতিকুর রহমান তালুকদার, ব্যসায়িক মো.মিলন তালুকদার ও ডাঃ রিজু তালুকদার জানান, এই ঈদে নামাজের শেষে আমরা নিজেরাই পশু জবাই করে গোস্ত বানাই। তাই ছুরি, দা ও চাকু কিনেনিচ্ছি। তবে গতবারের চেয়ে এবার দাম একটু বেশি।