১২ আগস্ট সোমবার উদ্যাপিত হবে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দিবেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। এজন্য ঈদের পূর্ব মুহূর্তে কোরবানীর পশু ক্রয়ের লক্ষ্যে মানুষ ছুটছে বিভিন্ন গরু ছাগলের হাটে। নির্দ্ধারিত হাটবাজার ছাড়াও শুধুমাত্র কোরবানীর পশু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে বসছে অস্থায়ী হাট বাজার। প্রায় একমাস আগে থেকেই কোরবানীর পশু বিক্রি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও কেনাবেঁচা ছিল সীমিত। তবে শেষ মুহূর্তে বেড়েছে পশু বিক্রি।
বিগত এক সপ্তাহ কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া, রতনপুর, তারালী, মৌতলা, দেবহাটার পারুলিয়া, শ্যামনগরের নকিপুর হাট ঘুরে জানা গেছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। এসব হাটবাজারে কোরবানীর পশু বিক্রির সাথে জড়িত ব্যবসায়ী ও গৃহপালিত গরু ছাগলের মালিকরা জানান, এবছর সীমান্ত পেরিয়ে বৈধ বা অবৈধ পথে ভারতীয় গরু প্রবেশ না করায় শুধুমাত্র দেশে লালনপালন করা গরুর দেখা মিলছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ যথেষ্ঠ। তবে গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির মূল্য নিয়ে বিক্রেতাদের মধ্যে নানা ধরণের মত পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারও মতে ন্যায্যমূল্যে তারা তাদের পশু বিক্রি করতে পারছেন। অনেকে আবার আশাহত। তাদের মতে, যে পরিমাণ লাভের আশা নিয়ে শ্রম দিয়ে ও খরচ করে তারা কোরবানীর জন্য পশু প্রস্তুত করেছে সে লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ার জন্য তারা মনে করছেন, দেশে এখন গরু ছাগল পালনে মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এজন্য ভারতীয় গরু না এলেও হাটেবাজারে পর্যাপ্ত পশু পাওয়া যাচ্ছে। এসব পশু কোরবানীর জন্য উপযুক্ত। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ঠিক থাকায় উচ্চমূল্য হাকানোর সুযোগ নেই। বিক্রেতারা আরও জানান, প্রথম দিকে দাম কিছুটা উর্দ্ধ ছিল। চাহিদা মোতাবেক দর পেয়ে অনেকে তাদের পশু বিক্রি করে দিয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই শেষ মুহূর্তে বেশী দাম পাবেন মনে করে পশু বিক্রি করেন নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আশা তাদের পূরণ হয়নি। কালিগঞ্জের পানিয়া গ্রামের ভ্যান চালক মুনসুর আলী জানান, তিনি কোরবানীর সময়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে দু’টি গরু পালন করেন। দু’সপ্তাহ আগেও গরু দু’টির দাম হয়েছিল ১ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা। কিন্তু আরও লাভের আশায় তিনি রেখে দেন। শনিবার তিনি ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকায় গরু দু’টি বিক্রি করেছেন। একই অভিমত ব্যক্ত করেন পারুলগাছা গ্রামের আকছেদুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, মাহবুর রহমান গাজী। আকৃতি ভেদে তাদের প্রতিটি গরুর দাম কমেছে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এদিকে গরু ও ছাগলের দাম শেষ মুহূর্তে কিছুটা কমায় স্বস্তির নি:শ^াস ফেলছেন ক্রেতারা। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ম মধ্যবিত্তরা বাজেট অনুযায়ী পশু ক্রয় করতে পারায় তাদের মুখে দেখা যাচ্ছে তৃপ্তির হাসি। তবে ছাগলের দাম কিছুটা বেশী বলে দাবি করেছেন অনেকে।
কালিগঞ্জের বিভিন্ন নিয়মিত হাট ও অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদাররা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য স্বাচ্ছন্দে তাদের পশুর হাটে এসেছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। এবছর কোরবানির পশুর কোন সংকট হয়নি। এ ছাড়া প্রশাসনের সার্বক্ষণিক তদারকি থাকায় সুন্দর পরিবেশে মানুষ পশু বেঁচাকেনা করতে পেরেছেন। উপজেলার সর্ববৃহৎ পশুর হাট খ্যাত কুশুলিয়া’র ইজারাদার কাজী কারমরুজ্জামান (৪৪) ও কাজী আফছারুল ইসলাম (৪৫) জানান, ৩৫ হাজার টাকা শুরু করে দেড় লক্ষ টাকা দামেরও গরু বিক্রি হয়েছে তাদের হাটে। এছাড়াও ছাগলের সরবরাহও ছিল আশানুরূপ। দামও অনেকটা সাধ্যের মধ্যে থাকায় ক্রেতারা সন্তুষ্টচিত্তে তাদের পশু ক্রয় করতে পেরেছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোজিৎ কুমার মন্ডল জানান, এবছর বাজারে ভারতীয় গরু না এলেও কোরবানির পশুর হাটে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়িনি। উপজেলায় প্রায় ৫০০ টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রায় ৭০ হাজার গরু প্রস্তুত হয়েছে। ছাগলের খামার রয়েছে ১১’শ। এতে প্রায় ৪৯ হাজার ছাগল পালিত হয়েছে। উপজেলায় মহিষের কোন খামার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা মহিষ এনে বাজারে বিক্রি করছে।
তিনি আরও জানান, এই অঞ্চলের বাজারে মাঝারি ধরণের গরুর চাহিদা বেশি। যেসব গরুর ওজন ১০০ থেকে ১৩০ কেজি সেসব গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। বড় বড় গরুগুলো ব্যাপারীরা ক্রয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। ছাগল বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভেড়া ও মহিষের তেমন দেখা মেলেনি। প্রতিটি বাজারে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।