সাত সকালেই হাকডাক। কে নিবেন গো সবজি। এরপর ঘরের দরজা খুললেই দেখা মেলে বয়োবৃদ্ধ আরশেদ চাচা না হলে গফুর চাচার। এভাবে চলছে প্রায় ৪০ বছরেরও অধিক সময়। তাই তারা শহরের ছোট বড় সবারই সবজি চাচা।উভই বয়স ৮০’র কোঠা পার করেছেন। আর দুজনই সবজির বোঝা কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন শহরের মানুষের যোগান দিচ্ছেন সতেজ পেঁপে, কুমড়া, লাউ, কলার মোচা ও থোড়, ডাটা, সজনে, কচু শাক, লাল শাকসহ গ্রামীন বিভিন্ন শাক সবজি। আরশেদ আলীর বাড়ি উপজেলার নিয়ামতপুর ইউপির নিয়ামতপুর গ্রামে। আবদুল গফুরের বাড়ি জামাল ইউপির তৈলকুপ গ্রামে।
বৃদ্ধ বয়সেও কাজ করার কারণ জানতে চাইলে আরশেদ আলী জানান, এ বয়সে কেউ শখ করে পরিশ্রম করে না। কপালে ছিল তাই করছি। আবার সাধারন মানুষ ও তরতাজা সবজি খেতে পারছে এ কারণে আমি অনেক খুশি।তিনি আরো জানান, ছেলেরা বিয়ে করে সবাই আলাদা সংসার করছেন। তাই সংসার চালাতে অল্প কিছু চাষযোগ্য জমিতে ফসল ফলান তিনি। আর সারা বছর বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিভিন্ন শাক-সবজি কিনে শহরে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। এতে কোনো মতে চলে যায় তার সংসার। এভাবে চলছে প্রায় ৪৫ বছর।আরশেদ আলী দাবি করে বলেন, পরিশ্রমের কারনেই এখনো সুস্থ আছি। গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষ হিসেবে বেঁচে আছি।
আব্দুল গফুর বলেন, বসত ভিটের পাশে অল্প কিছু জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ করি। আর বাকি সময় মাঠে, নদীর কিনার থেকে বা বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বাজারের দুর্লভ কিছু শাক কিনে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করি। চাষযোগ্য কোনো জমি না থাকায় ছেলেরা পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করে তাদের সংসার সামলায়। আর এ বয়সে কাঁধে বোঝা টেনে আমাকে সামলাতে হয় আমাদের বুড়ো-বুড়ির সংসার। তিনি বলেন, বছর দুয়েক আগে কালীগঞ্জে ইউএনওর বাসায় বিভিন্ন ধরনের শাক বিক্রি করতাম। তিনি আমার কষ্ট দেখে আমাকে বয়ষ্কভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যা এখন আমার সংসার চালাতে খুব কাজে আসছে। তার এ উপকারের কথা আমি কোনো দিন ভুলব না।
তারা দুজনেই বলেন, যে জিনিস মানুষের শারীরিক ভাবে উপকারে আসে সেগুলোই আমরা ৪০-৪২ বছর ধরে বিক্রি করে আসছি। তাছাড়া মানুষ সার ছাড়া উৎপাদিত টাটকা ও বাজারের দুর্লভ শাক-সবজি আমাদের কাছে পায় বলেই শহরের বিভিন্ন মহল্লার অনেকে পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমাদের কাছ থেকেই নিয়মিত শাক-সবজি নিয়ে থাকেন। যে কারণে শহরে বেশি সময় ঘুরতে হয় না।
আরশেদ আলীর ছেলে ইক্রাহিম হোসেন বলেন, এ বয়সে এমন পরিশ্রম করতে আমরা অনেক নিষেধ করেছি। কয়েক বার বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু কাজ বন্ধ করলেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে এখন আর তার কাজে বাধা দেই না।গৃহিণী কল্যাণী রানী বিশ্বাস জানান, ভোর হলেই তারা বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি নিয়ে চলে আসেন মহল্লায়। তাদের আনা টাটকা শাক-সবজি পেতে মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকেন অনেকেই।