নওগাঁর মহাদেবপুরে দুই সাংবাদিক প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনাটি কি পূর্ব পরিকল্পিত হামলা, নাকি শ্রেফ দূর্ঘটনা, তা নিয়ে এলাকার জনমনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক ইউসুফ আলী সুমন ও আমিনুর রহমান খোকন অভিযোগ করেন যে, তারা চার মাস আগে গত ৩ এপ্রিল কয়েকটি মুদ্রিত ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে ‘মহাদেবপুরে নীতিমালা উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন’ শিরোণামে সংবাদ প্রকাশ করলে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এছাড়া গত ৩০ জুলাই তারা উপজেলার আত্রাই নদীর মহিষবাথান ঘাট এলাকায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের খবর সংগ্রহ করতে গেলে সেখানকার শ্রমিকরা তাদেরকে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দেয়। গত ৫ আগষ্ট রাত সাড়ে ৭ টায় তারা দুজন মোটরসাইকেলযোগে পতœীতলা থানায় যাবার সময় মহাদেবপুর-নজিপুর পাকা সড়কের মহিষবাথান মোড় এলাকায় পৌঁছলে পিছন দিক থেকে অপর একটি মোটরসাইকেলের চালক তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এতে পিছনে বসে থাকা সুমন পায়ে মারাত্মক আঘাত পায়। খোকন ওই মোটরসাইকেলের চালককে পালিয়ে যেতে বাধা দিলে তাদের মধ্যে বচসার সূত্রপাত ঘটে। এক পর্যায়ে মহিষবাথান ঘাটের বালু ব্যবসায়ী হেলাল সরদার, মতিন ও রাসেল এবং আরো ৫ থেকে ৭ জন সেখানে এসে তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাদেরকে ৪ দফায় বেদম মারপিট করে দুইটি ক্যামেরা ও একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। হামলাকারীরা সাংবাদিকদেরকে কখনো ছিনতাইকারী, কখনো ছেলেধরা, আবার কখনো কল্লা কাটা বলে স্থানীয় সাধারণ মানুষদেরকে তাদের উপর চড়াও হতে উদ্বুদ্ধ করে। পরে তাদেরকে সেখানে একটি দোকানের ভীতর ঢুকিয়ে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ২ ঘন্টা আটক করে রাখে। শেষে একটি আপসনামায় জোড়করে স্বাক্ষর নিয়ে রাত সাড়ে ১১ টায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তাদের মোবাইলফোন ফেরৎ দেয়া হলেও দুইটি ক্যামেরা ফেরৎ দেয়া হয়নি। আটক অবস্থা থেকে ছাড়া পেয়ে রাতেই তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
সাংবাদিকেরা এ ব্যাপারে মহিষবাথান ঘাটের বালু ব্যবসায়ী হেলাল সরদার, মতিন ও রাসেল এবং আরো ৫ থেকে ৭ জনকে আসামী করে মহাদেবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। মহাদেবপুর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
থানায় অভিযোগ দেবার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃৃৃষ্টি হয়। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বললে তারা ওই দুই সাংবাদিকের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রকৃত ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, এলাকার একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতা, সম্প্রতি যিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্করণ করেছেন, তার পিতা যিনি নিজেও এলাকার জনপ্রিয় নেতা, ৫ আগষ্ট রাতে তিনি মহিষবাথান মোড়ের হাটে বাজার করে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ী ফেরার সময় অসাবধানতা বশত: তার মোটরসাইকেলের পিছনে ঝুলিয়ে রাখা বাজারের ব্যাগ সাংবাদিক সুমনের পায়ে লাগে। এতে দুই মোটরসাইকেলই পড়ে যায়, বাজারের ব্যাগও ছিটকে পড়ে। এটি শ্রেফ একটি দূর্ঘটনা বলে তিনি দাবী করেন। কিন্তু সাংবাদিক খোকন এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নেতার মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেয় এবং তারা দুজন ওই নেতাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং বেদম মারপিট করতে থাকে। তাদের প্রিয় নেতাকে মারপিট করা হচ্ছে এই ঘটনা দেখে মোড়ের লোকজন ছুটে এসে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়। ওই নেতার পরামর্শে সাংবাদিকদের স্থানীয় একটি দোকানে ঢুকিয়ে সার্টার গেট লাগিয়ে গণরোষ থেকে তাদের প্রাণ রক্ষা করা হয়। পরে উপজেলা সদরের সিনিয়র সাংবাদিকদের, রাজনৈতিক নেতাদের ও স্থানীয় ইউপি চেয়াম্যানকে খবর দিলে সেখানে দুজন সিনিয়র সাংবাদিক, ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান সেখানে উপস্থিত হন।
মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেয়ায় এলাকার লোকজন তাদেরকে ছিনতাইকারী বলে অভিহিত করে।
সিনিয়র সাংবাদিকরা জানান, সুমন ও খোকন মহাদেবপুর উপজেলায় কর্মরত। তারা রাতে কেন পতœীতলা যাচ্ছিল তা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে। দূর্ঘটনা মানুষ ইচ্ছা করে ঘটায় না। তাদেরকে হত্যা বা আঘাত দেয়ার জন্য মোটরসাইকেল দিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এটি ঘটালে সাংবাদিকের পায়ে না লাগিয়ে আরো মারাত্মক আহত করা যেত।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন হাটুরে এক্সিডেন্টের পর একজন বয়স্ক মুরুব্বীর গায়ে হাত তোলায় সাংবাদিকদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের একজন নেতা প্রশ্ন করেন, আপনার পিতার গায়ে অন্যায়ভাবে কেউ হাত তুললে আপনি কি আপনার সর্বশক্তি দিয়ে তার প্রতিবাদ জানাবেন না ? কিন্তু আমাদের নেতা ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোন মামলা না দিয়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিকেরা তাদের ক্ষমতাকে অবৈধভাবে কাজে লাগিয়ে ঘটনার মিথ্যা বিবরণ দিয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছে।
এনায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিঞা জানান, তিনি শ্রেফ একটি সাদা কাগজে আপসনামা লিখে সাংবাদিকদের ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ঘটনাস্থল মহিষবাথানের মোড় থেকে মহিষবাথান ঘাট বালু মহালের দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার। সুতরাং বালু সংক্রান্ত কোন ঘটনার জের এটা নয়।