কাকডাকা ভোরে সানাই, ঢাক, বাইজ-করকা খোনজ্জনিসহ বাদ্যযন্ত্রের ঝনঝনানিতে পুরো এলাকা মুখরিত। পাড়ার লোকজন আনাগোনা করছে, পরশু মঙ্গলবার ভারত চন্দ্রের বাড়ীতে বাঁশের বিয়ে। তাই আজ ১১আগষ্ট রোববার বাঁশের গায়ে হলুদ দিয়ে অধিবাসের জন্য আয়োজন চলছে। বাঁশের বিয়ে নিয়ে চলছে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য। শুরু হয়েছে বিয়ের বাড়ীতে ক্ষণে ক্ষণে উলুধ্বনি ও বিয়ের গীত। বিয়ে সম্পন্ন করতে দুর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে পারদর্শী পুরোহিত। যিনি ইতোমধ্যে প্রায় ৩০টি বাঁশের বিয়ে সম্পন্ন করেছেন। এলাকাবাসী পরেশ, দুলাল, সুকমল, লংক্ষেশ্বর চন্দ্রসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বনির্ধারিত অলৌকিক অদ্ভুত প্রকৃতি একটি বাঁশ বাগান থেকে কেঁটে নিয়ে বাড়ীর উঠানে রাখা হয়েছে। সেটির একটি অংশে কনে মনে করে বিয়ের লাল শাড়ী ও অপর অংশটিতে বর সেজে সাদা ধূতি পরানো হয়েছে। রাঙ্গিয়ে তোলা হয়েছে বাঁশের বর-কনেকে। যা পরবর্তীতে হিন্দু রীতিতে ১১আগষ্ট রবিরার গায়ে হলুদ দিয়ে অদিবাস করানো হয়। পুরো গ্রামে এই বাঁশের বিয়ে নিয়ে হৈ চৈ ধুম পড়ে যায়। দুর-দুরান্ত থেকে প্রায় সহ¯্রাধিক দর্শনার্থী ছুটে আসে এ বিয়ের দৃশ্য অবলোকন করার জন্য। পর দিন পান-সুপারী কাঁটা(খাওয়া) হয়ে গেলে নির্ধারিত ১৩আগষ্ট মঙ্গলবার শুভ দিবাগত রাতের শুভ লগ্নে বিয়ের পীঁড়িতে বসানো হয় বর-কনেকে। শত শত উৎসুক দর্শনার্থীর সামনে বরের পিতা ভারত চন্দ্র(৫০) ও কনের পিতা তারই আপন ভাই কনক চন্দ্র (৪২) যদিতং হৃদয়ম তম, তদিতং হৃদয়ম মম বলে সম্প্রদান করেন বর-কনেকে। এ সময় ঢাক-ঢোল, বাইজ-করকা, সানাই ও খনজ্জনির শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। চলে বাঁশের লাঠি খেলা। চলতে থাকে গাঁয়ের বধুদের উলুধ্বনি। আয়োজক ভারতের বাড়ীতে চলছে গ্রামবাসী ও দর্শনার্থীদের ভূড়িভোজ। যাকে বৌভাত বলে। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চাকিরশার ইউনিয়নের রতিরাম কমলওঝাঁ শিমুলতলা গ্রামে। বিয়ের আয়োজক ভারত চন্দ্র (৫০) বলেন, আমার বাঁশ বাগানে একটি অলৌকিকভাবে অদ্ভুত প্রকৃতির বাঁশ জন্মে। একটি বাঁশের মধ্যে থেকেই দু’টি বাঁশ জম্ম। এটিকে গাজীর বাঁশ বলে। কিছুদিন পর ওই বাঁশটির বিয়ে দেয়ার জন্য আমাকে স্বপ্ন দেখায়। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। যার ফলে ১বছর আগে আমার পেটে পাথর হয়। সেটি অপারেশনের মাধ্যমে বের করি। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার পাথর হয়। তার পর আবার স্বপ্নায়। পরে স্বপ্নে দেয়া কবিরাজের গাছ গাছানির ওষুধ খেলে এটি প্রসাবের সাথে বের হয়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাঁশটির বিয়ে দেয়ার। বাড়ীতে আলোচনা করে শুভলগ্ন দেখে ১৩ আগণ্ট মঙ্গলবার রাতে বিয়ের দিন ধার্য্য করি। লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার শিবরাম বলাইয়েরহাট গ্রাম থেকে বিয়ের পুরোহিত লেবু চন্দ্র বর্ম্মণ সহ তিস্তা এলাকার আরো ৪জন পারদর্শীকে নিয়ে আসা হয়েছে। পুরোহিত লেবু চন্দ্র বর্ম্মণ বলেন, সবার বাড়ীতে এ বাঁশ জন্মায় না। যার বাড়ীতে গাজীর বাঁশ আসে সেখানে বাঁশের বিয়ে দেয়ার রেয়াজ আছে। আমি এ যাবত ৩০টি বাঁশের বিয়ে দিয়েছি। আমাদের এলাকায় অনেকের বাড়ীতে বাঁশের বিয়ে হয়েছে। এ বিয়েতে যে মানত করে গাজী বাবা তার মনের বাসনা পূর্ণ করে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের রাজারহাট শাখার আহবায়ক সূর্য্যকমল মিশ্র বলেন, শাস্ত্রে বাঁশের বিয়ের প্রথা নেই। তবে সনাতন ধর্মীয় রীতিতে সামাজিক প্রথা হিসেবে এ বিয়ে দেয়া যায়। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের রাজারহাট উপজেলা শাখার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ কর্মকার বলেন, বাঁশের বিয়ে মানুষের ভ্রান্ত ধারনা। ব্যাপারে রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ কৃষ্ণ কুমার সরকার বলেন, বিষয়টি লোক মুখে শুনেছি। উল্লেখ্য, উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের আমতলী এলাকায় কয়েক বছর ধরে বট-পাইকরের বিয়ে দিয়ে আসছে। এরপর গত বছর বৃষ্টির জন্য ওই ইউনিয়নের চাকিরপশার তালুকের জোলাপাড়া এলাকায় ব্যাঙের বিয়ে এবং গত ১৩আগষ্ট মঙ্গলবার রাতে রতিরাম কমলওঝাঁ শিমুলতলা গ্রামে বাঁশের বিয়ে সম্পন্ন করলো সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।