প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের চাল (ভিজিএফ) ঈদের আগেই গরীব ও দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের কথা। কিন্তু সাবেক ও বর্তমান দুই ইউপি সদস্যের পক্ষের লোকজনের রেষারেষিতে যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের তিনটি গ্রামের ৮শ’ ৩০টি পরিবার তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ঈদের আগেই ভিজিএফ কার্ডধারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে ১৫ কেজি করে এই চাল দেয়ার নিয়ম রয়েছে। এখন কবে এই তিন গ্রামের কার্ডধারীরা চাল পাবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। দ্রুত বিতরণ না করা হলে দুঃস্থ ব্যক্তিদের ৮৩০টি কার্ডের বিপরীতে বরাদ্দকৃত এই সাড়ে বার মেট্রিকটন চাল ইউনিয়ন পরিষদে অরক্ষিত অবস্থায় নষ্ঠ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওয়ার্ডের সচেতন নাগরিকরা।
জানাগেছে উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ইলিশমারী, নারায়ণপুর ও ভগবানপুর গ্রাম নিয়ে গঠিত ৭নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য কিছুদিন আগে মারা যান। গত ২৫ জুলাই ওই ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপ-নির্বাচনে বিজয়ী সদস্য ইউসূফ আলী এখনো শপথ নিতে পারেন নি। তবুও ঈদ উল আযহার আগে ওয়ার্ডটির জন্য ৮৩০টি কার্ডের বিপরীতে বরাদ্দকৃত ১২ হাজার ৪৫০ কেজি অর্থাৎ ১২.৪৫ মেট্ট্রিকটন চাল বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সদ্য প্রয়াত মেম্বারের সময়ে করা তালিকা নায্যতার ভিত্তিতে হয়নি অভিযোগ করে কার্ডের বাইরের ব্যক্তিদের মধ্যেও চাল বিতরণের উদ্যোগ নেন। এ অবস্থায় নারায়ণপুর গ্রামের কিছু ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম নিজে গিয়ে ওই ওয়ার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন।
নব-নির্বাচিত ইউপি সদস্য ইউসূফ আলী বলেন আগে যে তালিকা করা হয়েছিল সেখানে অনেক গরীব মানুষ বাদ পড়েছেন। একই পরিবারের চার-পাঁচ ভাইও তালিকাভূক্ত হয়েছেন। আমি প্রকৃত গরীব মানুষের তালিকা করে ৮৩০ জনের মাস্টাররোল করে চাল বিতরণের উদ্যোগ নিই। কিছু ব্যক্তি এ বিষয়ে অভিযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন। তার দাবি, আমি বলেছি প্রশাসনের লোকজন প্রত্যক্ষভাবে থেকে দেখুন আমি গরীবদের মধ্যে চাল বিতরণ করছি কিনা। বা আগের তালিকায় নাম থাকা ধনীদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখে যেসব গরীব মানুষ বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে এই চাল বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হোক।
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মনিরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, আগের ইউপি সদস্যের সময়ে করা তালিকার বিষয়ে নব-নির্বাচিত ইউপি সদস্য এবং গ্রামের মুরব্বীরা আপত্তি দেয়ায় ওই ওয়ার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেন, ভিজিএফ কার্ডের তালিকা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিল। এজন্য সেসময় চাল বিতরণ করা হয় নি। আমি অসুস্থ ছিলাম। বর্তমানে সুস্থ্য। এখন কাগজপত্র ঠিক করা হয়েছে। দ্রুত চাল বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, দাখিলকৃত তালিকার বাইরে চাল বিতরণের অভিযোগে বিতরণ বন্ধ করা হয়েছিল। পূর্বে দাখিলকৃত তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণের জন্য বলা হয়েছে এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন পূর্বের তালিকায় কোন অসংগতির অভিযোগ থাকলে সেগুলো তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে।