জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দাবাড়ি সড়কের প্রায় ৩৬কিলো পাকা সড়ক চলতি বছর স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যায় অসংখ্য খানাখন্দে ভরপুর হয়ে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে বন্যার পানি নেমে গেলেও দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ী সড়কের অনেকাংশে খাদ ও ডোবার সৃষ্টি হওয়ায় এমনকি বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় যান চলাচল,যাতায়াত প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দাবাড়ি সড়কের বাহাদুরাবাদ থেকে কাঠারবিল ও তারাটিয়া হয়ে সানন্দাবাড়ি পর্যন্ত পাকা সড়কটির খানা খন্দের উপর এলাকাবাসী দীর্ঘ ৩৬কিলো রাস্তা অন্তত: ১০টি বাঁশের সাঁকো তৈরি করছেন। এসব বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে পথচারিরা কোন মতে পায়ে হেঁটে উপজেলা সদরে এমনকি রাজধানী ঢাকায় অতিকষ্টে যাতায়াত করে আসছেন। এ ছাড়া দেওয়ানগঞ্জের-সানন্দাবাড়ি থেকে মৌলভীরচর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পাকা সড়ক এবং ঝালোরচর থেকে কাদেরের মোড় হয়ে গোপালপুর পর্যন্ত অন্তত: ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও প্রায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখাগেছে, দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দাবাড়ি সড়কটি বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কান্দিরগ্রাম এলাকায় পাকা সড়ক ভেঙ্গে কয়েকটি স্থানে খানা খন্দে ভরপুর হয়ে একটি ছোট খাল বেড়িয়েছে। কান্দিরগ্রাম বটতলায় নতুন খালের উপর অস্থায়ী ভাবে স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকো নির্মান করেছেন। সাঁকো নির্মাণারীরা সেখানে পথচারীদের কাছে পারাপারের জন্য ৫টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। কান্দিরগ্রাম সাঁকোর পাশে বটতলায় রাস্তার উপর সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল কমপক্ষে ৩০টি ব্যটারী চালিত অটো রিক্সা। ওইসব ভাঙ্গা রাস্তার ছবি তুলতেই অটো রিক্সা চালক আলামিন,আবুল হোসেন, শাহীন ও সোহেল রানা জানায়, উপজেলার কান্দির গ্রাম ও কাঠারবিল এলাকায় তাদের বাড়ী। তারা দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দাবাড়ি সড়কে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্স্রা চালিয়ে প্রতিনিয়ত প্রায় হাজার টাকার উপরে দৈনিক আয় করতেন। এখন পুুরো রাস্তাই ভাঙ্গা। তাই তারা যাতায়াত করতে পারছেন না। ঈদ উপলক্ষে যতটুকু গাড়ী চালানো যায়,ততটুকু চালাচ্ছেন,তাতে গাড়ী চালিয়ে কোন রকমে দৈনিক দুইশ থেকে তিনশ টাকা আয় করে পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে কোন মতে দুবিসহ জীবন যাপন করে আসছেন।
তারাটিয়া বাজার এলাকার অটো রিক্সা চালাক দুলাল মিয়া জানান, দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দাবাড়ি সড়কের কাঠারবিল, ঝালোরচর, সবুজপুর, মিতালি বাজার, তারাটিয়া বাজারসহ জলব্রীজ পর্যন্ত রয়েছে ৪টি বাঁশের সাঁকো এবং অসংখ্য ভাঙ্গা আর খানা খন্দে ভরা পাকা রাস্তা। এসব খানা খন্দক ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে কোন যানবাহন চলেনা। তাই তারা তাদের অটো রিক্সা গুলি কান্দির গ্রাম এনেছেন। এই স্বল্প দৈঘ সড়কে চাহিদার তোলনায় বেশী পরিমাণ অটো রিক্সা চালিয়ে যা আয় করেন তাই দিয়ে বর্তমানে জীবন বাঁচান।
পথচারী সুমন মিয়া, আবদুর রহিম,শ্রী গোবিন্দ লাল, পঞ্চাশ উর্ধ্ব আয়মনা খাতুন বলেন, সানন্দবাড়ী থেকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা সদরে আসার একমাত্র উপায় পায়ে হেঁটে যাতাযাত। তারা কাঠারবিল এবং তারাটিয়া বাজার এলাকা থেকে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে আবার কোথাও কোথাও অটো রিক্সায় চেপে এসেছেন। এলাকার মানুষ এ পথে পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবস্থায়ী কিংবা দোকানীরা ভাড়া করা লোকজন নিয়ে মাথায়, কিংবা কাঁদে মালামাল পরিবহণ করে নিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাসিদের উদ্যোগে জলব্রীজ এলাকার ভাঙ্গা সড়কের ইতোমধ্যে কিছুটা বালির বস্তা আবার কোথাও বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত সচল করতে কাজ শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হাসান জানান, এ বারের বন্যায় দেওয়ানগঞ্জের মোট ৮টি ইউনিয়নসহ ১টি পৌরসভার ১৬৩টি গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক জরিপে এ উপজেলায় প্রায় ১৫০ কিলোটিার পাকা সড়ক এবং ৫০টি ব্রীজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও যমুনা নদী ভাংগনে ২৮০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
অপরদিকে এ ব্যপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী মো.আরিফ হোসেন জানান,দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছর বন্যায় ১৩৩ কিলো মিটার পাকা রাস্তা এবং ১৫০কিলো মিটার কাঁচা রাস্তা,৬৫টি ব্রিজ কালভার্ট,বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব কিছু মিলে প্রায় দেড় শত কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।