চট্টগ্রামে মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড কর্তৃক গ্রাহক হয়রানি চলছেই। ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামে অন্তত ৪টি শাখা চালু করেছে। এসব শাখায় ঋণ দেয়ার নামে প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের চরমভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মামলার ভয়ে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কয়েক হাজার ঋণগ্রহীতা বসতভিটা ছেড়েছেন। স্বপরিবারে পালিয়ে যাযাবরের মত দিনযাপন করছেন অন্যত্র। তাদের স্কুল-কলেজ পড়-য়া সন্তানরাও শিক্ষা এবং চিকিৎসা থেকে বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছেন।
একাধিক সূত্রে জানাগেছে, জামায়াত-বিএনপির সক্রিয় রাজনীতির সাথে যুক্ত এমন ব্যক্তিরাই ওই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে সীতাকু- অফিসের অনেকেই বিগত সময়ে সরকার বিরোধী জ¦ালাও-পোড়াও আন্দোলনের সময় দায়ের হওয়া মামলার আসামী। মাইডাস কর্তৃপক্ষ বিগত ৭বছরে ১০হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অন্তত ১০কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে চট্টগ্রামে। ওই ঋণ দেয়ার সময় ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে চাপ দিয়ে প্রতি বছরে ব্যাংকের ১২টি স্বাক্ষরিত সাদা চেক নেওয়া হয়। পরে ঋণগ্রহীতা ব্যাংকে মাসিক কিস্তির টাকা জমা দিলে কর্তৃপক্ষ এই টাকা উত্তোলন করেন। এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি দুই কিংবা সাত কিস্তির টাকা জমা না দিলে পরবর্তীতে পূর্বালী ও এবি ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে পূর্বে আদায়কৃত চেকে মাইডাস কর্তৃপক্ষ মনগড়া টাকা লিখে ব্যাংকে চেক ডিজঅনার করেন। এতে ১লক্ষ পাওনা হলে ৫ লক্ষ, ৫ লক্ষ হলে ২০ লক্ষ এবং ২০ লক্ষ হলে ৮০লক্ষ টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে আদায় করার লক্ষ্যে চেকে লিখে নেন তারা।
ঋণগ্রহীতারা জানায়, পরে ওই টাকা আদায় করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক চেক প্রতারণা মামলা করেন কর্তৃপক্ষ। প্রকৃতপক্ষে এটি পাওনা টাকার বিষয়। ফলে টাকা দিতে না পেরে ভয়ে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের কয়েক হাজার ঋণগ্রহীতা বসতভিটা ছেড়েছেন। স্বপরিবারে পালিয়ে যাযাবরের মত দিনযাপন করছেন অন্যত্র। তাদের স্কুল-কলেজ পড়-য়া সন্তানরাও শিক্ষা এবং চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরাবরেই। এভাবে শতশত দরিদ্র পরিবার স্বাবলম্বী হওয়ার পরিবর্তে পথের ভিখারী হয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দেশের নানাপ্রান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দিশেহারা এসব মানুষেরা মাঝে মাঝে চট্টগ্রামের আদালতে চেক ডিজঅনার মামলায় হাজিরা দিতে আসেন। তখন তাদের এসব পরিণতির কথা শুণে আগত বিচার প্রার্থীরাও হতবাক হয়ে যান। এমন ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা তাদের চরম দুর্দশার চিত্র গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন।
সূত্র জানায়, হালিশহরের সবজি ব্যবসায়ী আবদুর রব ও পাহাড়তলীর কাপড় ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ সওদাঘরও ওই কারণে এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। স্বাক্ষরিত কারও কাছ থেকে সাদা চেক নেয়া বেআইনী হলেও এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমন ধরণের ন্যাক্কারজনক এবং হয়রানিমূলক চেক নিচ্ছেন। গ্রাহকদের কারও কারও কাছ থেকে ঋণের কিস্তি বাবদ এবি ব্যাংকের চেক নিয়ে পূর্বালী ব্যাংকে চেক ডিজঅনার করেন। গ্রাহকদেরকে বাংলাদেশে ব্যাংকের আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে স্বাক্ষরিত এসব চেক আদায় করায় জনমনেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বর্তমান সরকার গরীব এবং দুস্থ্যদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। অসহায়দের পেছনে শতশত কোটি টাকা ব্যয় করছেন। সেখানে মাইডাসের মত একটি প্রতিষ্ঠানের কারণে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। ঋণ ফরমে মাইডাসের প্রধান কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, মাইডাস সেন্টার(১০-ও ১১তলা), বাড়ী-৫, রোড-১৬, ধানমন্ডি, ঢাকা। এই বিষয়ে শীর্ষ অনলাইন সংবাদ সংস্থা এফএনএসের মাধ্যমে বর্তমান সফল প্রধান মন্ত্রী ও গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাব মহাপরিচালক, পুলিশের আইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এবং চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্তপূর্বক আইনগত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।