লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন হয়রানি ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জনকল্যান বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় বহিস্কৃত অফিস সহকারি তাবারক হোসেন আজাদ’কে জেলা হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। বুধবার তাকে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতের বিচারক তারেক আজিজ দু’পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে তাকে জেলা হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। এ ঘটনায় ১৬ এপ্রিল তাকে জনকল্যান বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারি পদ থেকে বহিস্কৃতকৃত করা হয়। আর ২৭ এপ্রিল তাবারক হোসেন আজাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করেন যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীর ফুফু।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মৃধা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পরে তিনি জানান,তাবারক হোসেন আজাদ জনকল্যান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারি চাকুরী নিয়ে অভাব পরিবর্তণ করলেও স্বভাব দোশে চাকুরীচূত হয়ে নিজেকে শোধরাতে পেরে প্রতারনা ও স্বভাব দোশে জেল হাজতে রয়েছেন।
তা না হয়ে তিনি ভালভাবেই জীবন যাপন করতে পারতেন। তার মক্কেল অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন হয়রানি ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী শিক্ষার্থীর ফুফুকে হত্যার হুমকিসহ তার নিকট অলিক্ষিত স্ট্যাম্পে এফিডেভিট মিথ্যা কাগজপত্র তৈরি করে প্রতারণার আশ্রয় নেয় তাবারক হোসেন আজাদ। বুধবার বাদীসহ ভ্যাকটিম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতের বিচারক তারেক আজিজ এর আদালতে হাজির হয়ে ন্যায় বিচার ও ঘটনা খুলে বল্লে তাকে দু’পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে তাকে জেলা হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। এ ছাড়া একই ঘটনায় তাকে রায়পুর প্রেসক্লাবের সদস্য পদ থেকে বহিস্কার এবং যুগান্তর পত্রিকা থেকে রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি পদের চাকুরী থেকেও অব্যাহিত দেয়া হয়।
জনকল্যান বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়,অভিযুক্ত বহিস্কৃত অফিস সহকারি তাবারক হোসেন আজাদের বিরুদ্ধে চলতি বছর এপ্রিল মাসের ১৬ তারিখেও তাদের প্রধান শিক্ষকের নিকট লিখিত অভিযোগও দিয়ে এ পর্যন্ত বিচার পায়নি তারা। এজন্য তারেদ পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার ব্যাপারের সিদান্তে তার ফুফু বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে তাবারক হোসেন আজাদ কে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
যৌন হয়রানি ঘটনায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলেন, তাবারক আজাদ ক্লাসে ছাত্রীদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করেন। জীবনে রক্ত থাকা পর্যন্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাবো। মামলার পর থেকে তাবারক আজাদ তাকে হুমকি ধমকী বলছেন তাকে যৌন হয়রানি নয়, এবার ধর্ষণ করা হবে এমনকি হত্যার হুমকি দিয়ে ছিলেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে জিডি করা হয়।
এদিকে তাবারক আজাদকে আদালত জেলা হাজতে প্রেরণ করায় মামলার বাদী শিক্ষার্থী ফুফু ন্যায় বিচার পাওয়ার স্বু পথ দেখছেন বলে মনে করেছেন।
জানাগেছে,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন হয়রানির ঘটনায় ২৫ এপ্রিল রায়পুর উপজেলা সন্মনয় সভায় তাবারক হোসেন আজাদের বিরুদ্ধে একাধিক চেয়ারম্যান ও উপজেলা পর্যায়ের অফিসাররা নিন্দা জানায় এবং শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন হয়রানির ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদান্ত গৃহীত হয়।
এর আগে বহিস্কৃত অফিস সহকারী তাবারক হোসেন আজাদের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ১৬ এপ্রিল ওই শিক্ষার্থী এবং তার আগে আরো স্কুলের ১০ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত একটি অভিযোগ দেন। সম্প্রতি এক ছাত্রীর সঙ্গে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপর থেকে এলাকাজুড়ে তার বিচারের দাবি উঠলেও অভিযুক্তের বক্তব্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, যদি তাই হয়- তাহলে তিনি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির সেই ছাত্রীকে অশালীনভাবে জড়িয়ে ধরেছিলেন কেন? ওই দিন অভিযুক্ত তাবারক আজাদের দ্রুত অপসারণ এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
রায়পুর থানা সূত্রে জানাগেছে, এর আগেও ২০০৫ সালে তাবারক হোসেন আজাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ধমন আইনে মামলা হয় (মামলা নং ৪১,২০০৫/তারিখ ১৫/০৬/২০০৫)। ওই মামলায় তিনি জেল হাজত খেটে জামিন নিয়ে কয়েক বছর পর জনকল্যান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারির চাকুরি নেয় আজাদ। এরপর শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত হন তিনি। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ইতঃপূর্বে নারী নির্যাতনসহ চাঁদাবাজি,দাঙ্গাহাঙ্গামা,স্ত্রী নির্যানত,নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় ১৮ মামলা ও ৬ জিডি ও টিনটি অভিযোগ রয়েছে। তবে সেসব মামলায় কয়েক বার কারাভোগ করে বর্তমানে তিনি জামিনের পর এখন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন হয়রানি ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আজাদ’কে জেলা হাজতে।