মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালিত অনলাইন পরিবহন নেটওয়ার্ক কোম্পানি- উবারে যাত্রা কতটা নিরাপদ ? প্রতিষ্ঠানটি আমেরিকা ভিত্তিক অনলাইন পরিবহন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে যাত্রার পরই ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছিল। যত দিন যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি ততই নানা ধরনের অপরাধের সাথে জড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটির ঝুড়িতে সুনামের পরিবর্তে যোগ হচ্ছে ভরি ভরি দুর্নাম।
চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে বেপরোয়া চালনায় যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এরই মধ্যে। যাত্রীর নিকট চালকের অভিনব আবদার, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, যৌন হয়রানি-ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগেরও সঠিক সমাধান করতে সক্ষম হয়নি এই প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি মিরপুরের দারুস সালাম থানায় জালাল উদ্দিন নামে উবারের এক টেক্সিচালকের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ফরিদপুর- ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম সিরাজুল ইসলাম মৃধা ও রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদা সিরাজের ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম গোলাম শওকত এ অভিযোগ করেন। গোলাম শওকতের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২১ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশান- ২, রোড নং ৫৯ থেকে গাবতলী যাওয়ার উদ্দেশ্যে উবার সফটওয়্যারে ০১৯৪১৮৪১০০১ মোবাইল নম্বরে ফোন করেন। তার ফোন পেয়েই উবারের চালক জালাল উদ্দিন সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-২৭-৪১৭৮) গাড়ী নিয়ে তার বাসার সামনে হাজির হন এবং ০১৩০৫-৬৪৩০১৫ নম্বর থেকে তাকে ফোন করেন। যাবতীয় মালামাল নিয়ে জালালের গাড়ীতে উঠে গাবতলীর উদ্দেশ্যে যাত্রাও করেন শওকত।
গাবতলী পৌঁছে গাড়ীতে থাকা অবস্থায় ভাড়া পরিশোধ করে বাইরে বের হয়ে সব মালামাল গাড়ী থেকে নামিয়েও নেন তিনি। কিন্তু মুল্যবান কাগজপত্রসহ নগদ ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা রক্ষিক ব্রিফকেস চালকের সামনের সিট থেকে নামানোর আগেই চম্পট দেয় চালক জালাল উদ্দিন। ধাওয়া করেও ধরতে না পেরে উবারে ব্যবহৃত চালকের ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও আর রিসিভ করা হয়নি। শুধু তাই নয়- কিছুসময় পর সেই নম্বরটি বন্ধও করে দেয় চালক। বিষয়টি তাৎক্ষনিক উবার কর্তৃপক্ষকে অবগতও করেন গোলাম শওকত। অথচ উবার কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে ঘটনার পরদিনই (২২ আগস্ট ২০১৯) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দারুস সালাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নম্বর- ৯৪৪। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। উবার কিংবা থানা কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই নীরব ভুমিকা পালন করছে। এদিকে সাধারণ ডায়েরীর তদন্তের দায়িত্বে থাকা দারুস সালাম থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুর রহমান জানান, তদন্তের স্বার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই চালকের তথ্যগত সহযোগিতা চেয়ে মেইল করা হলেও উবার কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো ধরণের সহযোগিতা করেনি।
এদিকে উবার চালক জালাল উদ্দিনের ব্যবহৃত বাংলালিংক অপারেটরের দুটি সিম কার্ডের নম্বর রেজিষ্ট্রেশনে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে- কামাল উদ্দিন, পিতা- নাছির উদ্দিন, মাতা- মনোয়ারা বেগম, বাসা- হোল্ডিং- ২৭১, সড়ক- ৯৯৯, ওয়ার্ড নং- ১৬, নিউমার্কেট- ১২০৫, ধানমন্ডি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। গ্রামের বাড়ী ভোলার দৌলতখান থানার চাউলতা তলি। আর গ্রামীণ সিমের নম্বর রেজিষ্ট্রেশন রয়েছে- নুর নাহার বেগম, পিতা- আবদুল গণি, মাতা- আছিয়া বেগম, হোল্ডিং- ৮৪, রাস্তা- ৯৯৯, ওয়ার্ড- ৪, গুলশান- ১২১২, বাড্ডা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। তবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) কার্যালয়ে চালক জালাল উদ্দিনের নাম-পরিচয় ও ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে- জালাল উদ্দিন, পিতা- নাছির উদ্দিন, হাউজ নং- ৩, ব্লক- ডি, ওয়ার্ড- ৭, বাজার রোড।
গোলাম শওকত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উবার মোবাইলে ও থানায় জিডি করার পরও উবার কর্তৃপক্ষ কেন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, তা বুঝতে পারছি না। এরকম হলে- উবার ব্যবহারকারী যাত্রীরা নিরাপদ বোধ করবে কীভাবে। আমার মতো অনেকেই প্রতিনিয়ত এভাবেই প্রতারিত হচ্ছেন। উবার কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব কি? তারা কিভাবে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করছে, এমন প্রশ্ন রেখে প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান সাবেক এ উপজেলা চেয়ারম্যান।
দারুস সালাম থানার এএসআই মাহাবুবুর রহমান বলেন, ঘটনাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। সার্বিক বিষয় অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির ফোন নম্বরটি এখন বন্ধ রয়েছে। উবারের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছেন কিনা এবং কোনো ধরণের সহযোগিতা তারা করেছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ঘটনায় চালকের তথ্য চেয়ে উবার কর্তৃপক্ষককে মেইল করা হলেও এখনো পর্যন্ত উবার থেকে পুলিশকে কিছুই জানানো হয়নি। তবে ভুক্তভোগী ব্যক্তি থানায় চালকের সকল তথ্য জমা দিয়েছেন, সেই তথ্যের ভিত্তিতে চালককে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করতে কোনো অভিযানে গিয়েছেন কী না জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
উবারের গণযোগাযোগ সংস্থা বেঞ্চমার্ক পিআর এর প্রধান পরামর্শদাতা আশরাফ কায়সারের মুঠোফোনে ফোন করে এ ঘটনার বিষয়ে জানাতে এবং ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।