বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে শরীরটা। শরীরের চামড়া কুচকে গেছে। চুল সাদা হয়েছে। হাটার শক্তি নেই শরীরে। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদে খাবারের সন্ধানে প্রতিদিনই বাড়ি থেকে বের হতে হন। ভিক্ষা করেন না তিনি। তবে তাকে রাস্তায় দেখলে এলাকার পরিচিত লোকেরা কিছু কিছু পয়সা দেন। তাতেই চলে সখিনা বিবির।
হ্যা এতক্ষন যার কথা বলছি, তার নাম সখিনা বিবি। বয়স ১০৪ বছর। চার সন্তানের জনক সখিনার বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী ইউনিয়নের উত্তর সুতালড়ী গ্রামে। স্বামী আফেল উদ্দিন মারা গেছেন ১৯৭৩ সালে। তারপর থেকে মানুষের বাড়িতে কাজ করে পেটের ভাত যোগাতো সখিনা। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে কর্মক্ষমতা শেষ হয় তার। তারপর থেকে এলাকার মানুষের কাছে চেয়ে চিন্তে চলে তার দিন।
কারণ তার ৩ ছেলে ১ মেয়ে বড় ছেলে আ. হামিদ শেখ খুলনায় শ্রমীকের কাজ করেন। মেঝো ছেলে আব্বাস আলী শেখ মানুষিক রোগী ১ বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছে। ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর আলী শেখ শহরে ভ্যান চালিয়ে জীবনযাপন করেছে মাঝের মধ্যে মা ছখিনা বেগমকে ভরন পোষনের জন্য ৩-৪ শ’ টাকা পাঠিয়ে দেন।বড় ছেলেও মাকে মাঝে মধ্যে ৫শ’ টাকা পাঠিয়ে দেন।আর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েরও স্বামী মারা গেছে বেশ কয়েখ বছর হল। খুলনা শহরে মানুষের বাসায় কাজ করে পেট চলে তার মেয়ের। তারপরও মাঝে মাঝে মায়ের জন্য কিছু টাকা দেন, আসলে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য। তাই ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন এলাকায় অন্যর বাড়িতে তার আশ্রয় স্থল।
এত নিদারূণ আর্থিক কষ্টে থাকলে সরকারি কোন সহযোগিতা জোটেনি সখিনার কপালে। এলাকায় বাইরে থাকার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি সখিনার। জাতীয় পরিচয়পত্র নেই সে অজুহাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাকে কোন প্রকার সহযোগিতা না করেন নাই কখনও।
শুক্রবার সকালে উত্তর সুতালড়ী গ্রামের রাস্তায় বসে কথা হয় সখিনা বিবির সাথে। সখিনা বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করিনা। ভিক্ষা করা পাপ। তবে হাটার পথে পরিচিতজনেরা খুশি হয়ে কিছু দেয়, তাই দিয়ে চলি। বেশী হাটতে পারিনা। মাথা ঘুরায়’।
সখিনা আরও বলেন, ‘সরকারি সাহায্য কোনদিন পাইনাই। সরকারতো অনেক দেয় শুনি। আর কত দিবে। আমার কপালে নাই’।
সাহায্যের প্রয়োজন কিনা জানতে চাইলে বৃদ্ধা সখিনা বিবি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা যা দিবে তাতেই আমি খুশি। তয়, একখান ঘর আর একটু ভাওতা (ভাতা) পাইলে ভালো হয়’।
বারইখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান লাল বলেন, সখিনা বিবি বহুদিন এলাকায় ছিলনা। তার আইডি কার্ড নেই। তাই তাকে বিধবা ভাতা দেওয়া যায়নি। তবে পরিষদে গেলে তাকে চাল দেওয়া হয়।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। সখিনা বিবিকে খুজে বের করা হবে। আইডি কার্ড না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থায় তাকে সাহায্যের আওতায় আনা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বারইখালী ইউনিয়নের বার্ধক্য সখিনা বেগমের বিধবা ভাতা বয়স্ক ভাতা ভিজিডি ভিজিএফ কার্ড না পাওয়ার বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। তকে শুধু বয়স্ক ভাতা নয় সকল সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা হবে।