দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবীতে ১৯৯৩ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে গঠিত হয় নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা শীর্ষক একটি সংগঠনের। দীর্ঘ ২২ বছরের পথ পরিক্রমায় আজ এটি একটি মহিরূহ সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশে ও বিদেশে এর ১০০টির বেশী শাখা রয়েছে। সড়ককে নিরাপদ করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা নিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা এগিয়ে চলেছে এবং সমাজের সকল স্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সমর্থ হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা তার কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থনে ধণ্য হয়ে ওঠে। নিসচা তার প্রতিষ্ঠার এই ২২ বছরের মধ্যে জনকল্যাণমূখী সংগঠন হিসেবে ব্যাপক তৎপরতায় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পেয়ে গেছে যথেষ্ট পরিচিতি। ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে “নিসচা ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট”। এই ইনস্টিটিউটে ড্রাইভিং পেশায় আগ্রহী মাধ্যমিক পাশ বেকার যুবকদের বিনামূল্যে ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ট্রেনিং প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষিত ড্রাইভার হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে প্রশিক্ষিতদের যেমন স্ব-কর্মস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে তেমনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তাঁরা সহায়ক ভূমিকা পালনে ভূমিকা রাখছে। কাজেই বিনামূল্যে ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদান নিসচার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের একটি অন্যতম জাতীয় সমস্যা ঃ
সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা প্রতি বছর ৪-৫ হাজার যে সমস্ত লোক শুধুমাত্র দুর্ঘটনাস্থ'লে মারা যায় সেটাই সরকারি হিসেবে গণ্য হয় ।
বে-সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা প্রতি বছর ১০-১২ হাজার।
সরকারি হিসেবে আহতের সংখ্যা প্রতি বছর ১০-১২ হাজার।
বে-সরকারি হিসেবে আহতের সংখ্যা প্রতি বছর ২৫ হাজার।
দুর্ঘটনাজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা প্রতিবছর ১ লক্ষের উপরে, যারা নতুন করে দারিদ্রসীমায় নিমর্জিত হয় দারিদ্র বিমোচন কৌশলপত্রে এদের জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি ।
সরকারি হাসপাতাল গুলোর বাৎসরিক চিকিৎসার বাজেটের ৩০% শুধু মাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ব্যয় হয়।
সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমান প্রতি বছর জিডিপির ২%।
নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা এর পক্ষ থেকে সরকারকে যে ৪২ দফা প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে সরকার অনেক প্রস্তাবকেই বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস সরকারিভাবে ঘোষণা ও পালনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা প্রতি বছর ২২ অক্টোবর ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। হাহাইওয়ে পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে, ট্রমা সেন্টার নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করাসহ আরো অনেক প্রস্তাবনাই সরকার বাস্তবায়ন করেছে। নিসচার ৪২ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে একটি প্রস্তাবনা ছিল প্রত্যেক জেলায় একটি করে ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট তৈরি করে মাধ্যমিক পাশ বেকার যুবকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করে দেশে ও বিদেশে চালকের চাহিদা পূরণ করা। কিন্তু সরকার আজো এই দাবী পূরণ করতে পারেনি। এমনি অবস্থায় নিসচার উদ্যোগে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো ‘নিসচা ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট’।
সূত্রমতে বাংলাদেশে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৪ চাজার হালকা গাড়ি নতুন করে রাস্তায় চালানোর অনুমতি প্রদান করা হয়। অথচ শিক্ষিত ও দক্ষ ড্রাইভারের অভাবে গাড়িগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার হয় না ও অপরিপক্ক চালকদের দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাছাড়াও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচুর চাহিদা থাকা সত্তেও শিক্ষিত ও দক্ষ ড্রাইভার না থাকার কারণে আমাদের দেশ থেকে ড্রাইভার রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। যার ফলে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হই। এদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি মিশন ও অন্যান্য অফিসগুলো শিক্ষিত ও দক্ষ ড্রাইভার খুঁজে পায় না। বিদেশে ছোট গাড়ীর মালিকরাই নিজেদের গাড়ি চালিয়ে থাকেন । ফলে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেন। আর বড় গাড়ির ক্ষেত্রে শিক্ষিত ড্রাইভার ছাড়া কেউ লাইসেন্স পান না। বিদেশে শিক্ষিত ড্রাইভার হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। অথচ বাংলাদেশের ছোট গাড়িগুলোও অদক্ষ ও অশিক্ষিত ড্রাইভার দিয়ে চালানো হয় ও বড় গাড়ির চালকেরা হেলপার থেকেই ড্রাইভারে পরিণত হয়। অশিক্ষিত হওয়ার কারণে আইন-কানুন সিগন্যাল, গতি ও অন্যান্য বিষয়ে ড্রাইভারগণ অজ্ঞ থাকায় আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি হয়।
দেশে প্রতিবছর মাধ্যমিক পাশ করা যুবকদের সকলেই কলেজে ভর্তি হতে পারে না। এদের একাংশ ভাল রেজাল্ট না করায় ও আর্থিক অসঙ্গতির কারণে ঝরে পড়ে। এ সমস্ত যুবকেরা বেকারত্ব অভিশাপ থেকে মুক্তি না পাওয়ায় অনেক সময়েই বিপথে চলে যায়, কেউ কেউ হয় নেশাগ্রস্থ। বাবা-মায়ের জন্য হয়ে যায় সংসারের বোঝা, সামাজের জন্য হয় অবাঞ্চিত। এ সমস্ত বেকার যুবকদের গাড়ি চালনায় দক্ষ করে চাহিদা অনুযায়ী তাদেরকে চাকরির ব্যবস্থা করা হলে তারা বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে দেশও পাবে শিক্ষিত গাড়ি চালক, যা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সহায়ক। এ ধরনের ভাবনা থেকেই নিসচার উদ্যোগে প্রতি জেলায় একটি করে ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ইনস্টিটিউট তৈরি করার প্রস্তাব সরকারের নিকট করা হয়েছিল। হিসেব করে দেখা গেছে প্রাথমিক ভাবে প্রতি জেলা থেকে ৫০০ করে ৬৪টি জেলায় প্রতিবৎসর আনুমানিক ৩২ হাজার দক্ষ চালক তৈরি করে দেশের চাহিদা পূরণ ছাড়াও বিদেশে দক্ষ ও শিক্ষিত ড্রাইভার রপ্তানী করা সম্ভব।
এই প্রথম মাধ্যমিক পাশ শিক্ষিত বেকারদের দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে গড়ে তোলতে প্রতিষ্ঠিত হলো নিসচা ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিখ্যাত ইলেকট্রনিক্স কোম্পানী ওয়ালটন এই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র স্পন্সর। এই ইন্সটিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণে আগ্রহীদের জন্য প্রয়োজন হবেঃ-
কমপক্ষে এসএসসি বা সমমান পাশ হতে হবে।
ইউপি চেয়ারম্যান/ পৌর মেয়র/ কাউন্সিলর এর নিকট থেকে জাতীয়তা সার্টিফিকেট দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি দিতে হবে।
বয়স নুন্যতম ২০ বৎসর হতে হবে।
প্রশিক্ষণের পর গাড়ি চালক হিসেবে চাকরি করবে এ মর্মে মুচলেকা দিতে হবে।
এই ইনষ্টিটিউটের সুবিধাসমূহ ঃ-
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ট্রেনিং প্রদান করা হয়।
মনস্তাত্বিক ট্রেনিং প্রদান করা হয়।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিআরটিএ’র মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/ এনজিও ও বিদেশী মিশনের সাথে যোগাযোগ করে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়।
কর্মসংস্থান ব্যুরোর সাথে যোগাযোগ করে বিদেশের চাহিদা অনুযায়ী পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিক্ষিত মাধ্যমিক পাশ বেকারদের দক্ষ চালক হিসেবে গড়ে তুলে চাকরির ব্যবস্থা করতে এই ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান থেকে ২৬৭জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে চালক হিসেবে দক্ষতার সাথে জীবিকা নির্বাহ করছে। নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা এ মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সকল মহলের সাহায্য ও সহযোগীতা কামনা করছে। সমাজের সকল গণ্য-মাণ্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সকল স্তরের জনগণের যে কোন সাহায্য, সহযোগীতা ও পরামর্শ এ মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে কার্যকরি ভূমিকা রাখবে। তবে এক্ষেত্রে যাদের সহযোগীতা একান্ত প্রয়োজন ১. যোগাযোগ মন্ত্রনালয় ২.স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ৩.স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ৪.বিআরটিএ ৫.বিআরটিসি ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান
মাধ্যমিক পাশ বেকারগণ যারা ড্রাইভিংকে পেশা হিসেবে গ্রহন করতে চান তাদেরকে নিম্ন ঠিকানায় যোগাযোগ করার জন্য নিসচার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
গাড়ির মালিক, প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিদেশী মিশন ও অন্যান্য সকলকে শিক্ষিত ও দক্ষ গাড়ি চালকের প্রয়োজনে নিসচার সাথে নিম্ন ঠিকানায় যোগাযোগ করার জন্য নিসচার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
৭০ কাকরাইল, পাইওনিয়ার রোড রাজস্ব ভবনের বিপরীতে ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ। ফোন ৮৩১৬৩৫২, ফ্যাক্স ঃ ০২-৯৩৬১৯০৯। www.wedemandsaferoadbd.org, e-mail : info@ wedemandsaferoadbd.org