দেশের ২১টি মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও বড় বড় মহাসড়কে টোলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, টোলের মাধ্যমে আদায় করা টাকা রাখার জন্য একটি আলাদা অ্যাকাউন্ট হবে। সেই টাকা দিয়ে মহাসড়কগুলো সংস্কার করা হবে।’
এটা ভালো উদ্যোগ ও পরিকল্পনা। দেশের মহাসড়কগুলোয় যেভাবে যানজট ও ভাঙা-চোরা অবস্থায় রয়েছে, তার যদি সমাধান হয় ভালো। কেননা, একটা গাড়ির মালিককে ভাঙা-চোরা রাস্তায় চলার কারণে বছরে কয়েকবারে সার্ভিসিংয়ে যে টাকা খরচ করতে হয়, টোল তার চেয়ে বেশী হবে না নিশ্চয়ই। কিন্তু মহসড়কগুলোতে হাওয়ায়ি পুলিশের চাঁদাবাজি হবে, বিভিন্ন মোড়ে এলাকাওয়ারী দলীয় লোক ও পুলিশের চাঁদাবাজি চলবে, আর ওই দিকে রাস্তারও কোনো উন্নয়ন যদি না হয় তাহলে অবস্থা কি হবে। টোল আদায়ে বিদেশী উন্নত দেশের উদাহরণ, কিন্তু সেবা দেওয়ার সময়? উন্নতদেশগুলোতেও কি মহাসড়কের বিভিন্ন মোড়ে ও চৌরাস্তায় নানা সঙ্ঘ, সমিতি, পুলিশ ছাড়াও ক্ষমতাবানদের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা নেয়ার ‘সেবা’ আছে কী? উন্নত দেশের আদলে টোল নেয়া হবে, কিন্তু উন্নত দেশের আদলে রাস্তাতো দুরের কথা বাতাসও আমরা পাই কী? একথা ঠিক যে, এতে যানবাহনের ভাড়া বেড়ে যাবে। এই টোলভার চাপবে শিল্প ও কৃষি উৎপাদনের উপর।
দেশের মহাসড়কগুলোর মান উন্নত দেশের মতো করা হোক। চাঁদাবাজি মুক্ত করা হোক। তারপর অন্যদেশের মত টোলও নির্ধারণ করা হোক। যে সড়কে ২০০ কিলোমিটার যেতে ১০/১২ ঘন্টা লাগে, সেখানে টোল আদায় করার চিন্তা করাটাও স্বপ্নবিলাশ। বিদেশে এক্সপ্রেস হাইওয়েতে টোল আদায় করা হয়। আমাদের দেশে এক্সপ্রেস হাইওয়ে কোথায়?
মহাসড়কগুলোয় টোলের নামে পাবলিকের পকেটের টাকা নেয়া হবে। যা দিয়ে মহাসড়কগুলো সংস্কার করা হবে। কিন্তু যখন উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজ পছন্দের লোকদের দেয়া হবে। অতপর তারা ১০০ টাকার কাজে ৭৫ টাকা মেরে দিয়ে নিজেদের পেট ফুলাবে। যেমন- গতকাল (৫ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন সংবামাধ্যমে দেখা দেখে টাঙ্গাইলের বাসাইলে করটিয়া-জশিহাটী ভায়া দেউলী সড়কের মেরামত চলাকালেই কার্পেটিং উঠে যাওয়ার প্রতিবাদ করেছেন এলাকাবাসী।
মহাসড়কগুলোয় উন্নয়ন বা সংস্কারের নামে টোল হিসেবে কয়টা টাকা নেয়া কোনো বড় বিষয়ই নয়। সারা দেশে রাস্তায়, বাসস্ট্যান্ডে আজকে ‘শ্রমিক লীগ’ কালকে ‘শ্রমিক দল’ নামে যে চাঁদা আদায় হয়, তা বন্ধ করতে হবে। কেননা, ঘুষ, চাঁদাবাজি, বিআরটিএর ট্যাক্স আর টোলের বোঝা জনগণ বহন করতে পারবে না। ‘এক মোরগ কয়বার জবাই করা যায়!’ সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, নানা কিসিমের চাঁদা পরিবহন মালিকরা নিজের পকেট থেকে দেন না, যাত্রীদের কাছ থেকেই নেয়া হয়ে থাকে।