রাজবাড়ীতে পানির অভাবে সোনালি আঁশ পাট জাগ দেওয়া ও পাটের বাজার দর কম থাকায় কৃষকেরা চরম ভাবে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এ বছরের প্রথমে বৃষ্টিপাতের পরিমান যথেষ্ট থাকলেও জুলাই ও আগষ্টে এর পরিমান কমে যাওয়ার কারণে রাজবাড়ীতে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। পানি না থাকার কারণে পাটের রং ও মান ভালো হচ্ছেনা। এদিকে পাটের বাজার দর কম থাকায় আর্থিক ভাবেও লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষকেরা পাট চাষ করে সব ধরনের খরচ মিলিয়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা লোকসান গুনছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের পাটের আবাদ ৪ শত হেক্টর কম হলেও হেক্টও প্রতি উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। সরকারের কাছে পাটের বাজার দর বাড়ানোর দাবী জানান কৃষকেরা।
রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলা, পাংশা ,বালিয়াকান্দি,গোয়ালন্দ ও কালুখালী সহ ৫টি উপজেলাতেই প্রচুর পরিমানে পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে সদর ও বালিয়াকান্দিতে পাটের আবাদ বেশি হয়। এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলার যেসব স্থানে পাট জাগ দেওয়া হত সে সব স্থানে পানি না থাকায় পাট ভেজানো নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। এতে করে এক স্থান থেকে পাট কেটে অন্য স্থানে নিয়ে পাট জাগ দিতে তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি পরিবহন খরচ। অন্যদিকে পাটের বাজার দর কম এবং দৈনিক মজুরের দাম বেশি হওয়াতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুন। এতে করে কৃষকরা আর্থিক ভাভে পাট চাষ করে চরম লোকসানের মধ্যে দিন পার করছেন।
এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে - চাষ থেকে শুরু করে পাটের বীজ ,কীটনাশক, মজুরী, পাট কাটা, ধোয়া ও শুকানো সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। অথচ বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৬ মণ পাট উৎপাদন হয়। যার প্রতি মণ পাটের বর্তমান বাজার দর ১ হাজার ২ শত টাকা থেকে ১ হাজার ৮ শত টাকার মধ্যে। বিঘা প্রতি পাট বিক্রি করে কৃষকেরা পাচ্ছেন ৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা। এতে করে প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষকদের লোকসান হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। অনেক কৃষক পানি না থাকায় পাট কাটছেন না। কোথায় তারা পাট জাগ দিবেন পাচ্ছেননা সে রকম স্থান।
পাট চাষিরা বলেন, একদিকে পানি নাই, অন্যদিকে পাটের বাজার দর কম। যে কারণে তারা পাট চাষ করে লোকসান গুনছেন। বিঘা প্রতি কৃষকদের ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু প্রতি মণ পাটের বাজার দর মান ভেদে ১ হাজার ২ শত টাকা থেক ১ হাজার ৮শত টাকা পাচ্ছেন। এদিকে মজুরের খরচ বেড়ে ৬শত টাকা থেকে ৭ শত টাকা হওয়ায় অন্যদিকে পানি না থাকায় বহন খরচ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় চরম লোকসান গুনছেন তারা। কৃষকদের দাবী সরকার যেন তাদের প্রতি মণ পাটের বাজার বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকায় নির্ধারন করে। তা হলে তারা খরচ কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারন অধি-দপ্তরের উপ-পরিচালম মোঃ ফজলুর রহমান বলেন- রাজবাড়ীতে এবছর ৪৭ হাজার ১শত বিশ হেক্টর পাট আবাদ হয়েছে। আর গত বছর আবাদ হয়েছিল ৪৭ হাজার ৫ শত হেক্টর। আবাদি সব পাটই তোষা পাট। গত বছরের তুলনায় এবছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কৃষকেরা পাট পচানো ও একস্থান থেকে অন্য স্থানে পাট জাগ দিতে বহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং একই স্থানে পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাটের মান ভালো না হওয়ায় বাজার দরও কম পাচ্ছেন। এবছর রাজবাড়ীতে ১ লক্ষ মেঃ টন পাট উৎপাদনের আশা করছেন।