বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পথে। কয়রার কোন মানষের নজরে পড়ছেনা দেশীয় প্রজাতির মাছ। কালের গর্ভে যেন হারিয়ে যাচ্ছে মাছে-ভাতে বাঙালী প্রবাদ বাক্যটি। একটা সময় ছিল যখন বাঙালী মাছ ছাড়া ভাত খাওয়া কল্পনা করতে পারতো না। সেই বাঙালির সব সাজে এখন মাছ খাওয়াটা যেন অনেকটা কল্পনার মতোই। বাড়ছে জনসংখ্যা, বাড়ছে চাহিদা। কিন্তু চাহিদার অনুপাতে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে প্রাকৃতিক উৎসের মাছের আবাস স্থল। জলবায়ু পরির্বতন, নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবা, হাওড়-বাওড় ভরাটের ফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে প্রাকৃতিক উৎসের মাছ। প্রাকৃতিক উৎসের মাছ যেমন পুষ্টিগুণ তেমনি খেতেও সু-সাধু। প্রায় এক দশক আগেও প্রাকৃিতক উৎসের মাছ প্রচুর পাওয়া যেত এ এলাকায়। র্বতমানে তা এখন আর পাওয়া যায় না বলেলও চলে। বাজারে যা অল্প কিছু পাওয়া যায় তার আবার দাম অত্যন্ত চড়া। ফলে মাছে-ভাতে বাঙালী মানুষেরা অনেকটা বাধ্য হয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে খাচ্ছে চাষকৃত মাছ।
প্রাকৃতিক মাছের জন্মস্থল ভরাট ও জলবায়ু পরির্বতনের ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে প্রাকৃিতক উৎসের দেশী প্রজাতির মাছ। অথচ একসময় প্রাকৃিতক উৎস গুলো দেশীয় মাছে ভরপুর থাকতো। এর মধ্যে শিং, পুটি, টেংরা, মলা, ঢলো, পাবদা, চাঁন্দা, খলিশা, কাঁচকী কৈ, শৈল, টাকি, বেলে, বাইন, গুলশা, বাতাশি, কাজরি, চাপিলা, কাকিলা, কুচো চিংড়ি, পোয়া, মাগুরসহ আরো অনেক জাতের মাছ। যা আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। আর এ কারণে এখন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে নির্ভর করতে হচ্ছে চাষের মাছের উপর।
তথ্যানুসন্ধানে কয়রার শাকবাড়িয়া,কয়রা-সহ অসংখ্য নদী মরে প্রাকৃতিক উৎসের মাছ প্রায় শূণ্য। যা দু’একটি জলাশয় ও খাল রয়েছে তা অপরিকল্পিত ব্যবহার, র্দীঘদনি সংস্কার না করায় শীত ও খরা মওসুমে এসব জলাশয় শুকিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
বিশ্লেষকদের মতে, জনসংখ্যার চাপের কারণে অতিরিক্ত মাছ আহরণ, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ আহরণ, অবাধে কীটনাশক ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে মাছের উৎপাদন হারিয়ে যাচ্ছে। মিঠা পানির ৫৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৩২ প্রজাতিই ছোট যার ৫ টি চরম বিপন্ন, ১৮টি বিপন্ন ও ৯ টি সংকটাপন্ন বলে মনে করা হ”ছে। এ ছাড়া শুষ্ক মওসুমে নদ-নদীতে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত জনসংখ্যা বৃিদ্ধ, বেশি পরিমাণ মৎস্য আহরণ, জলাশয়ে র্পযাপ্ত পানি না থাকা, জলাশয় ভরাট, অপরকিল্পতি বাঁধ, নদ-নদীতে অপরিকল্পতি অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি। চাষকৃত মাছ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য দেওয়া হচ্ছে রাসয়ানিক উপাদানসহ নোংরা খাবার। প্রাকৃতিক উৎসের দেশীয় প্রজাতির মাছ না পাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে খেতে হচ্ছে চাষকৃত মাছ।
কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য র্কমর্কতা এস এম আলাউদ্দীন আহমেদ জানান, জমি ও জলাশয়ে কীটনাশক প্রয়োগ, মা মাছ ধরা দেশীয় মাছ হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া জলবায়ু পরর্বিতন-তাপমাত্রা বৃিদ্ধর কারণেও এমনটা হচ্ছে। তবে আমরা গবষেণার মধ্য দিয়ে কয়েকটা প্রজাতির দেশীয় মাছ সংরক্ষণের চেষ্টা করছি বলে তিনি জানান।