রোদের হাসিতে প্রানের কারুকাজ ছিল। এই হাসির কারনেই ঘর ছেড়েছে নিয়ন। আজ অনেকদিন ঘর ছাড়া সে। কেবলমাত্র রোদের মায়ায় এই বেরিয়ে আসা। ব্যালকনি থেকে জানালা; জানালা থেকে ছাদ পর্যন্ত ছিল ভালোবাসার দৌড়ঝাপ। দিন বদলের নামে যখন সমবয়সিরা ঘন্টার পর ঘন্টা মুঠোফোনে ডুবে থাকে; তখন রোদ দিয়েছিল হাতে লেখা চিরকুট। তাতে লেখা ছিল সেই ইউসুফ-জুলেখার আদলে অল্পকথায় বিস্তারিত প্রকাশ-
জানেন,
আপনাকে গতকাল স্বপ্নে দেখেছি।
আশ্চর্য হয় নিয়ন। কেননা, সেও স্বপ্নে দেখেছে রোদকে। রোদের আলোর মত করে হাসছিল ঘরে বসে বসে। ইচ্ছে করছিল গিয়ে একটু আদর এঁকে আসতে টোল পড়া গালে।
জীবনের জলছবি এঁকে এঁকে এগিয়ে যাওয়ার এ যাত্রায় একজন সঙ্গী অন্তত পাওয়া গেলো। এই ভরসায় স্বপ্ন বুনেবুনে পথচলা পথিক হয় নিয়ন। নিয়নের চারপাশে এখন রোদের মুগ্ধ করা আলো। এই আলোতে ¯œান করে নিয়ন। নিয়নের ঘুম আসে না। স্বপ্ন দেখে সারারাত। আজও দেখছিল। এমন সময় ইসমাঈল এসে ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে দেয়।
ঘুম ভাঙ্গার পর আর রোদের আলোমাখা মুখটা দেখতে পারছে না। হারিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে। অজানা এই মেঘের ঠিকানায় চিঠি লেখে নিয়ন। মেঘকে বলে সরে যেতে। কিন্তু মেঘ সরে না। সরে না, বাস্তবতার বয়ে চলা সময় থেকে।
নতুন একটা অস্তিত্ব খুঁজে পায়; সেখানে সাজগোজ করে দাঁড়িয়ে থাকে রোদ। রোদের সাজগোজ বলতে বোঝায়, একটা কালো টিপ; মাঝখানে সিঁথি করা চুল আর ছিমছাম সালোয়ার কামিজ পড়া। এই সাজগোজের সৌন্দর্য্য নিয়ে প্রচন্ড সুখি নিয়ন। নিয়নের এই সুখের পেছনে আছে বিনিদ্র চোখ। চোখের পাতায় পাতায় পেম; প্রেমজ আভা। তারপরও শান্তি পায় না। কারন, আগামীকাল ঈদ। ঈদদিন হলেও আনন্দকে সাথী করে সামনে যেতে পারবে না...
২.
আপনাকে আমার কাছে দেখে আশ্চর্য লাগছে। বলতে পারেন অবাক হয়ে আছে আমার মন; আমি। অনেক উৎফুল্ল লাগছে নিজেকে।
কথাগুলো শেষ হতেই রোদ হেসে ফেলে। একগাল হাসি দিয়ে বলে-
আমার কিন্তু অবাক লাগছে না; কারন আপনাকে আমি ভালোবেসেছি। আমার ভালোবাসার পাল তুলে এগিয়ে এসেছি...
রোদ আর কথা শেষ করতে পারেনি। এর আগেই ঘুমটা ভেঙ্গে দেয় ইসমাঈল...
৩.
ঘুম ভেঙ্গে সেই আগের আফসোস গায়ে জড়িয়ে ভাবছিল রোদের কথা। দীর্ঘ এক সপ্তাহ জামা কাপড় ধোয়া হয়নি। প্রতিটা জামা-প্যান্ট তেল চিটচিটে হয়ে আছে; তার উপর আবার কাল ঈদ। অনেক আগপাশতলা ভেবে চিন্তে জামা কাপড় ধুতে যায়। ব্যাচলর জীবনের ইতি ঘটানোর সুদীর্ঘ স্বপ্ন নিয়ে জামাকাপড় ধোয় নিয়ন। ছাদে যায় ধোয়া পোশাকগুলো শুকানোর জন্য মেলে দিতে। আর তখনই আসে রোদেও চিঠি। বড়বড় অক্ষরে সুন্দর করে লেখা- আপনাকে আমি সত্যি ভালোবাসি;ভালোবাসার মালাগাঁখি...