লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের স্কুল পড়-য়া মেয়েকে জবরদস্তি করে ধর্ষণের চেষ্টায় বিবস্ত্র করার অভিযোগ উঠেছে এক প্রতিবেশী লম্পট হামিদুল ইসলামের (২২) বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করে বিপাকে পড়েছে ঐ ভিক্ষুক পরিবারটি। থানা থেকে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার পশ্চিম নওদাবাস (কালীবাড়ি) এলাকায় ঘটনার তদন্তে সাংবাদিক গেলে শতশত নারী-পুরুষ লম্পট হামিদুল ইসলামের কঠিন বিচার চেয়ে তার কু-কির্ত্তির বর্ণনা দেয়। এর আগে (২৭ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার বিকাল ৫টায় ঐ এলাকার প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আলম শেখের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
লম্পট হামিদুল ইসলাম ঐ এলাকার মেছের আলীর ছেলে। মেয়েটি একই এলাকার প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আলম শেখের মেয়ে ও স্থানীয় নওদাবাস কালীমোহন তফশীলি উচ্চবিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী।
অভিযোগ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা ঐ এলাকার প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আলম শেখ ভিক্ষাবৃত্তি করে তার সংসার চালায়। তার স্ত্রী মোহছেনা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ঐ ভিক্ষুক দম্পতি (২৭ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার তাদের স্কুল পড়ুয়া মেয়েটিকে বাড়িতে একা রেখে তাদের স্বস্ব কাজে চলে যান। জেএসসির টেস্ট পরীক্ষা চলার কারণে মেয়েটি বাড়ির টুকিটাকি কাজ শেষে বিকাল ৫টার দিকে পড়ার টেবিলে পড়তে বসে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে প্রতিবেশী মেছের আলীর ছেলে লম্পট হামিদুল ইসলাম ঘরে ঢুকে মেয়েটির মুখ চেপে ধরে তাকে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় স্কুল ছাত্রির চিৎকারে তার মা ও বড় ভাই ছুটে এসে লম্পট হামিদুলকে আটক করে তার বাবা-মাকে খবর দেয়। খবর পেয়ে লম্পট হামিদুলের বাবা-মা ও বোন এসে ছেলের বিচার না করে উল্টো মেয়েটিসহ তার মা ও বড় ভাইকে বেধড়ক মারধর করে তার ছেলেকে নিয়ে যায়। এতে মেয়েটিসহ তার মা ও ভাই গুরুতর আহত হয়।
পরে তাদেও চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এসে হামিদুল ইসলাম ও তার বাবা মেছের আলীর এহেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তারা এলাকাবাসীকে চরম অপমান করেন। পরে এলাকাবাসী মেয়েটিসহ তার মা ও ভাইকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করান। এ ঘটনায় মেয়েটির মা মোহছেনা বেগম বাদী হয়ে হামিদুল ইসলামসহ ৪ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
থানায় অভিযোগ করেই বিপাকে পড়েছেন ওই ভিক্ষুক পরিবারটি। থানা থেকে অভিযোগ তুলে না নিলে ভিক্ষুক পরিবারটিকে প্রাণের হুমকিসহ এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে হামিদুলের পরিবার।
এবিষয়ে লম্পট হামিদুল ইসলাম ও তার বাবা মেছের আলীর সাথে কথা বলার জন্য তার বাড়িতে গেলে তাদেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে হামিদুলের মা হনুফা বেগম বলেন, এসব মিথ্যা কথা, তারা উল্টো আমার মেয়ের নামে বদনাম ছড়াচ্ছে।
তবে এলাকাবাসীরা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিবন্ধী আলম শেখ ভিক্ষাবৃত্তি করে বলে কি তারা এর বিচার পাবে না। লম্পট হামিদুল ইসলাম কর্তৃক জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করাসহ তার মা-ভাইকে মারধোরের সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। প্রয়োজনে তারা সভাসমাবেশ ও মিছিল করে প্রধানমন্ত্রীর নিকট এর সুষ্ঠু বিচার চাইবেন।
উপজেলার নওদাবাস ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নরেশ মেম্বারের সাথে কথা হলে, তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে যাতে আর বারাবাড়ি না হয় সেজন্য এলাকার মুরুব্বিদের নিয়ে সুষ্ঠ বিচার করার চেষ্টা চলছে। এজন্য দুই পক্ষের সাথে কথা বলা হয়েছে।
হাতীবান্ধা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) উমর ফারুক বলেন, এবিষয় আমি একটি লিখিত অভিযোগ পত্র পেয়েছি। তদন্তপুর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।