বোরো চাষীদের বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশকসহ যাবতীয় কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও বিনাসুদে কৃষিঋণ প্রদান, সঠিকভাবে কাজ সম্পাদনকারী পিআইসদের চুড়ান্ত বিল পরিশোধ, প্রকৃত বোরো চাষিদের তালিকা প্রনয়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’। শনিবার দুপুর ১২ টায় শহীদ মুক্তিযুদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৭ সালের অকাল বন্যায় হাওরের বাঁধ ভেঙে শতভাগ কৃষকের বোরো ফসল তলিয়ে যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কৃষকবান্ধব নীতিমালা প্রনয়নসহ নানা মুখি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করে। যার কৃষকরা পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদন করতে পারলেও ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। ফলে আগামি বোরো মৌসুমে জেলার প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর বোরো জমি আবাদ করার সমার্থ নেই বোরো প্রধান জেলা সুনামগঞ্জের বোরো চাষীদের। তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্রদানের দাবি জানানো হয়। বোরো মৌসুমে ধান চাষের জন্য সার, বীজ, কীটনাশকসহ যাবতীয় কৃষি উপকরণ বোরোচাষীদের বিনামূল্যে সরবরাহ ও বিনাসুদে কৃষিঋণ প্রদানের জন্য কৃষকদের পক্ষে আমরা জোরদাবি জানাচ্ছি। গত মৌসুমে বোরো ফসলের সুরক্ষার জন্য ৫৭২ টি প্রকল্প বাস্তবায়ান কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তাদের মধ্যে অনেক পিআইসি সরকারি নীতিমালার মধ্যে থেকে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু কাজ সম্পন্ন করার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও তাদেরকে শেষ কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হয়নি। টাকা পরিশোধ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। ফলে আগামীতে বাঁধ নির্মাণে পিআইসির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের অনেকই অনিহা প্রকাশ করবে। এতে কৃষকদের ক্ষতিগগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ১৫ হাজার কৃষকের অনুকূলে কৃষি সহায়তা কার্ড প্রদান করেছে সরকার। এই কার্ডধারীদের বড় অংশ অকৃষক ও ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। সরকার কর্তৃক কৃষকদের প্রদত্ত প্রনোধনা মূলক কর্মসূচির সুফলভূগি তালিকাভূক্ত অকৃষকরা। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ঘটছে। আবার, বোরো ধান কাটার পর এইসব অকৃষক ও ভিন্ন পেশার লোকজন তাদের কার্ড প্রদর্শন করে সরকারি খাদ্যগোদামে ধান সরবরাহ করেন। এতে বঞ্চিত হন প্রকৃত বোরো চাষীরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত বোরো চাষী ও বর্গাচাষীদের আলাদা কার্ড প্রদান করে বোরো মৌসুমে কেবলমাত্র তাদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের দাবি জানাচ্ছি।
দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির গতি অব্যাহত রাখতে, হাওরের বোরো ফসল রক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাই সুনামগঞ্জের বোরো চাষীদের বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, উপদেষ্টা রনেন্দ্র তালুকদার মিন্টু, সহসভাপতি চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, সদস্য অধ্যক্ষ মো. রবিউল ইসলাম, ইয়াকুক বখত বহলুল, মুর্শেদ আলম, যুগ্ম সম্পাদক সালেহিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) এমরানুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক (দিরাই-শাল্লা) একে কুদরত পাশা প্রমূখ, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক দুলাল মিয়া।