প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রতিশ্রুত যে কোনো প্রকল্প আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্থ হতে পারে না। ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল লাখো জনতার মাঝে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর স্বপ্নের রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ‘মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ ও নদী খনন’ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংকে (আইডাব্লিউএম)।
ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার, বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা পানিশূন্য থাকে বছরের বেশির ভাগ সময়। এ কারণে অঞ্চলটির কৃষিকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে নদীতে পানিপ্রবাহ ও সেচকাজে পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে মহানন্দার নদীর ওপর রাবার ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল দীর্ঘ দিনের। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে প্রায় ১৫১ কোটি টাকার একটি খসড়া নকশা প্রণয়ন করে আইডাব্লিউএম। পরবর্তীতে গত ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। গত বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনও দেয়া হয়।
অনুমোদনের পর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি কাজ। প্রকল্প অনুযায়ী, রাবার ড্যাম নির্মাণের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ রেহাইচর এলাকায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর আধা কিলোমিটার ভাটিতে স্থান নির্বাচন করে আইডাব্লিউএম। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটাই হবে দেশের সবচেয়ে বড় রাবার ড্যাম। এর ফলে নদী তীরবর্তী ৮ হাজার হেক্টর জমিসহ বেসরকারী হিসেবে টোটাল ১৫ হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে। উপকৃত হবে শহর ও শহরতলী এবং সংলগ্ন এলাকার কয়েক লাখ হেক্টর আম বাগান। শহর সংলগ্ন নদীর ৩২৬ মিটার রাবার ড্যামের বদৌলতে নদীর উজান ও ভাটি মিলিয়ে ৯৫ কিলোমিটারে ফিরে আসবে নাব্য। উৎপন্ন হবে অতিরিক্ত দুইশত কোটি টাকার ফসল। পাশাপাশি রাবার ড্যামের কারণে নদীর উজানে শতাধিক বিল, ঝিল পুকুরে সারা বছর পানি ধরে রাখার কারণে মাছ চাষে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর পুরোপুরিভাবে এবং রাজশাহী মহানগরও আংশিকভাবে উপকৃত হবে।
বেশ কয়েকবার নকশার ছোটখাটো পরিবর্তন শেষে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে অনুমোদন পায় রাবার ড্যাম প্রকল্প। এর মধ্যে প্রকল্প পরিচালক, ডিজাইন পরিবর্তনসহ নানা কারণে শুরু করা যায়নি কাজ। জানা যায়, ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নদী ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে। ওই অঞ্চলের মানুষের অনেক আশার, আকাঙ্খার ও স্বপ্নের প্রকল্প এটি। সব জটিলতা কাটিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত রাবার ড্যাম নির্মাণের মূল কাজ খুব শিগগিরই দৃশ্যমান হবে বলে আমরা আশা করছি।