প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভারত সফর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের উদ্দেশ্যে ছিল না, বরং তিনি গিয়েছিলেন সেখানে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের বৈঠকে অংশ নিতে। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে সব মহলেই ব্যাপক আগ্রহ ছিল। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকটি হয়েছে মূলত ভারতের আগ্রহেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা থাকলেও সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি মেলেনি, অন্যদিকে ফেনী নদীর পানি ভারতের ত্রিপুরায় সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। যদিও ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরায় নেওয়ার ব্যাপারে আরো আগে থেকেই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা ছিল, এবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে তা আনুষ্ঠানিকতা পেল।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘২০১১ সালে দুই সরকারের সম্মতি অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানি বণ্টনে ফ্রেমওয়ার্ক অব ইন্টেরিম এগ্রিমেন্ট আশু স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নে’ বাংলাদেশের মানুষের অপেক্ষার কথা তুলে ধরেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে’ এই চুক্তি নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে ভারতের সব অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে তার সরকার। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে চুক্তি আটকে যাওয়ার পর থেকেই এই কথা বলে আসছে নয়া দিল্লি। অপরদিকে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের যে কোনো বৈঠকেই এই চুক্তি নিয়ে অগ্রগতির আশা থাকে বাংলাদেশে। কিন্তু এবারও প্রধানমন্ত্রীর সফরে সেই আশা দ্রুত পূরণের ব্যাপারে কোনও সম্ভাবনা দেখা গেল না। তিস্তার বিষয়ে অগ্রগতি না হলেও ভারতকে ফেনী নদীর পানি দেওয়ার জন্য সমঝোতাকে অনেকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ‘মানবিক কারণে’ ভারতকে নদীর পানি দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছেন, দুই প্রধানমন্ত্রী এখন অভিন্ন অপর ছয়টি নদীর পানি বণ্টনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বণ্টনে খসড়া ফ্রেমওয়ার্ক অব ইন্টেরিম এগ্রিমেন্ট সুনির্দিষ্ট করতে তারা যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি পর্যায়ের কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়। সচিব জানান, ভারত-বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠকে পানি বণ্টন ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট, এনআরসি, ব্লু ইকোনোমি, যোগাযোগ, ব্যবসা ও বাণিজ্য, শিক্ষা, যুব উন্নয়ন ও সংস্কৃতি বিনিময় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা একটি ইস্যু। বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দু’দেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরাও প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখতে চাই। কিন্তু সেটি কেবল একপক্ষীয় নয়, পারস্পরিক সুবিধার দেওয়া-নেওয়ার ওপর নির্ভর করে। তিস্তার পানি না পেয়ে ফেনীর পানি দেওয়ার বিষয়টি সরকারের মানবিক আর কৌশলগত যে কারণই হোক না কেন, এটি দুই দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে। ভারতের উচিৎ এখান থেকে মানবতাকে অনুধাবন করা এবং প্রতিবেশি দেশের সমস্যাকে গুরুত্বসহকারে দেখে তা সমাধানে আন্তরিক হওয়া।