বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ ভাবে প্রতিষ্ঠত কসবা তারাপুর সীমান্ত হাট থেকে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার মালামাল পাচার করছে একটি ব্যবসায়ী চক্র। গত রোববার পুলিশ অবৈধভাবে পাচার করা মালামালসহ ১৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় দুইটি মাইক্রোবাসও জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিবি গত চার সপ্তাহে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল জব্দ করেছে। এতে করে সীমান্ত হাটের উদ্দেশ্য ব্যহৃত হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, ফেনীর ছাগলনাইয়া থানার বাঁশপাড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়া , পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি থানার পার্টিকেল বাড়ি গ্রামের শামিম মিয়া, নারায়নগঞ্জের সদরের নন্দীপাড়া এলাকার মো. সেলিম রানা চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সামনেরপাড়া এলাকার মাসুদ রানা, সাতপাড়া গ্রামের মো. রাসেল মিয়া , সোনারকানিয়া গ্রামের মো. আরিফ, চাদঁপুরের কচুয়া থানার সাহারপাড় গ্রামের মো. আবু বক্কর, ঢাকার সাভার থানার জয়নাবাড়ী এলাকার মো. মোশাররফ হোসেন, মো. আসলাম মিয়া, মো. জহিরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের সিংগাইড় থানার সুদখিড়া গ্রামের মো. আরিফুল ইসলাম, নোয়াখালীর সুধারামপুর থানার কদমতলা এলাকার মো. মোহন, নোয়াখালীর সেনবাগ থানার ছাতারপাইয়া তানবির আলম। গ্রেপ্তারকৃতদের সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠিয়েছেন পুলিশ। আদালত তাদেরকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়; ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ২০৩৯ পিলারের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌর এলাকার তারাপুর এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর এলাকায় দুই দেশের সমপরিমাণ এক একর ৫০ শতক জায়গাজুড়ে সীমান্ত হাট বসে। প্রত্যেক রোববার এ হাটের সাপ্তাহিক দিন। এতে ভারতের ৫০ টি এবং বাংলাদেশের ৫০টি দোকান বসে। হাটে তৈরি পোশাক, প্রশাসধনী সামগ্রী, সাবান, শ্যাম্পু, বিভিন্ন জাতের তেল, হরলিক্স, পাউডার, চাপাতা, চকলেট, গুড়ো দুধ, বিস্কুট, মেহেদী, শাড়ী-লুঙ্গী, ফল, সবজি এ হাটে ক্রয়-বিক্রয় হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সীমান্ত হাট থেকে অবৈধভাবে মালামাল ক্রয় করে পাচার করার সময় কসবা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে দুটি মাইক্রোবাসহ ১৩জনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় দুইটি মাইক্রোবাসসহ বিপুল পরিমাণে প্রশাসধনী সামগ্রী সাবান, শ্যাম্পু, বিভিন্ন জাতের তেল, পাউডার, চাপাতা, চকলেট, গুড়ো দুধ, বিস্কুট ও মেহেদী জব্দ করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছেন জব্দকৃত মালামালের আনুমানিক মূল্য দুই লক্ষাধিক টাকা। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত হাটে একজন ব্যক্তি দুইশ ডলারের মালামাল ক্রয় করতে পারেন। একটি ব্যবসায়ী চক্র কয়েকজনকে সাজিয়ে এনে মালামাল ক্রয় করে পাচার করতে থাকেন।
বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে; প্রত্যেক রোববার যথারীতি এ হাট বসে। বাৎসরিক কার্ডছাড়াও ৫ কিলোমিটারের বাহিরের ক্রেতাদের কেনা কাঁটা করার জন্য প্রত্যেক দেশের ১ হাজার ব্যক্তিকে একদিনের অতিথি পাস দেয়া হত। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সদস্যরা গত বছরের ২৯ জুলাই সীমান্ত হাটে ভারতীয় কোন ক্রেতাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা কোন মালামাল বিক্রি করতে পারেননি। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা গত বছর ৫ আগস্ট সীমান্ত হাটে দোকান না বসিয়ে হাটের বাইরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন বলেন, অবৈধভাবে মালামাল পাচারের সময় দুইটি মাইক্রোবাসসহ প্রশাধনী সামগ্রীসহ ১৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
৬০ বিজিবির অধিনায়ক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সীমান্ত হাটে একজন ব্যক্তি দুইশ ডলার মালামাল ক্রয় করতে পারবেন। একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র কয়েকজনকে এনে হাট থেকে মালামাল ক্রয় করতে এক সাথে জমিয়ে পাচার করেন। বিজিবি গত চার সপ্তাহে ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকার মালামাল জব্দ করা হয়েছে।
সীমান্ত হাট পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম বলেন, সীমান্ত হাটে প্রতি রোববার এক হাজার পাস বিতরণ করা হয়। এ ছাড়াও ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাসিন্দাদের বাৎসরিক কার্ডধারীরা এ হাটে যেতে পারেন।