বিদেশী জেলেরা আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে বাংলাদেশের জলসীমায় এসে মাছ শিকার করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতেও তা বন্ধ হচ্ছে না। এমনকি বার বার আটক হওয়া সত্ত্বেও নিষিদ্ধ সময়েও বিদেশীরা এদেশের জলসীমায় মাছ শিকারে প্রবেশ করছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় জেলেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কারণ সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে দেশের জেলেরা প্রায়ই বিদেশী জেলেদের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে বিদেশী জেলো সংঘবদ্ধ হয়ে এদেশের জেলেদের ওপর চড়াও হয়। বাংলাদেশী জেলেরা একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। মৎস্যজীবী এবং মৎস্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভারত ও থাইল্যান্ডের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে। প্রজনন মৌসুমে যখন ইলিশ বা অন্যান্য মাছ ধরা বন্ধ রাখে এদেশের সরকার, তখনো তারা অবৈধভাবে এদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ আহরণ করে নিয়ে যায়। বিদেশী জেলেদের মাছ ধরার ট্রলারগুলো বেশ বড়। তাতে লোকজনও বেশি থাকে। মাঝেমধ্যে নৌবাহিনীর হাতে ভারতীয় জেলেরা আটক হয়। কিন্তু রাতের আঁধারে তারা ঠিকই এদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। বিগত ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আদালত ৩২১ জন ভারতীয় জেলেকে বাগেরহাট কারাগারে পাঠায়। তার মধ্যে বর্তমানে ৩৮ জন বাগেরহাট কারাগারে বন্দি রয়েছে। অন্যরা বিভিন্ন সময় জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে গেছে। নৌবাহিনী গত ১ ও ৪ অক্টোবর সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় তিনটি ট্রলারসহ ৩৮ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করে।
সূত্র জানায়, ভারতে বাংলা বর্ষের পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। আর বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা থাকে ৬ জ্যৈষ্ঠ থেকে ১০ শ্রাবণ। অথচ বঙ্গোপসাগর একটাই। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ সময়ের সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জেলেরা এপার থেকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। ভারতীয় জেলেদের কাছে বড় বড় ট্রলার ও আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকে। কোন এলাকায় বেশি মাছ আছে তারা তা যন্ত্র দিয়ে শনাক্ত করতে পারে। তারপর তারা সংঘবদ্ধভাবে একাধিক ট্রলার নিয়ে মাছ আহরণ শুরু করে। ওই সময় তারা সেখান থেকে বাংলাদেশী জেলেদের সরে যেতে বলে। বিদেশী জেলেদের মাছ ধরার জালের কারণে বঙ্গোপসাগরের ওই অংশে অনেক প্রজাতির মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে জেলেরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার যখন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে, তখন জেলেরা আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখে। কিন্তু ওই সময়ে বিদেশী জেলেরা তাদের ইচ্ছামতো মাছ আহরণ করে। এমন পরিস্থিতিতে মাছ আহরণ বন্ধ রাখার সময় নৌবাহিনীর টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি সারা বছর বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর টহল জোরদার করা জরুরি। তা নাহলে দেশের মৎস্য সম্পদ লুটপাট বন্ধ করা যাবে না।
অন্যদিকে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দপ্তর) সূত্র মতে, বাংলাদেশের জেলেরা সমুদ্রের ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে মাছ ধরতে পারে। আর ভারতীয় জেলেরা প্রায় ১৫০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে। তারা দ্রুতগামী নৌযান ও কারেন্ট জালসহ জিপিএস যন্ত্র ব্যবহার করে।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক জানান, বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে বিদেশী জেলেরা মাছ শিকার করছে। তাতে এদেশের মৎস্যসম্পদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যারা আটক হচ্ছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া দরকার। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে ভিনদেশী জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করলে তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে। তাছাড়া দেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষার জন্য বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা প্রয়োজন।