সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরধরে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের নির্মাণাধীন ভবন ভাংচুরের চেষ্টার ঘটনায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা অনতিবিলম্বে সাংবাদিক নেতা এসএম জাকির হোসেনের বাসভবন ভাংচুরের অপচেষ্টাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটি মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও প্রবীন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, কোন কর্মকর্তা ছাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালানো সম্পূর্ণ অবৈধ। এটি আরও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত। সভাপতি কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল বলেন, কেহই আইনের উর্ধ্বে নয়। কিন্তু আইন প্রয়োগ করাটা নিয়ম মাফিক হওয়া উচিত। নিয়ম মেনে নোটিশ দিয়ে ভবন ভাঙ্গার প্রক্রিয়ায় এগোলে দৃষ্টি কটু হতোনা। কিন্তু নিয়ম না মেনে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের বাসা ভাঙ্গার চেষ্টা অত্যান্ত গর্হিত কাজ।
সাংবাদিক নেতা পুলক চ্যাটাজী বলেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের ভবনের বর্ধিতাংশ যদি সড়কের ওপর পরে তাহলে তাকে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা উচিত ছিল। তাছাড়া বলা যেত যেন নিজ দায়িত্বে ভেঙ্গে ফেলেন। তারপরও যদি বর্ধিতাংশ না ভাঙ্গত তখন সিটি করপোরেশন ভাঙ্গতে পারতো। কিন্তু তা না করে যে চেষ্টা চালানো হয়েছে তাতে নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে।
সাংবাদিক নেতা গোপাল সরকার বলেন, সাংবাদিকদের ওপর এমন আচরণ লজ্জাজনক। যেকারও বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হতে পারে যদি অভিযোগ থাকে। কিন্তু কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা যাবেনা এমন বিধানতো কোথাও নেই। সংবাদ প্রকাশ হলে অবৈধভাবে ভবন ভেঙ্গে প্রতিশোধ নিতে হবে-এমন চেষ্টা যারা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
নিউজ এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, সাংবাদিক নেতার বাসায় উচ্ছেদ অভিযানের তকমা দিয়ে কাউন্সিলরের ভাংচুরের চেষ্টা ঘৃন্য অপরাধ। বিসিসি’র মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নগরীর অভিভাবক; তার অনুমতি ছাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের বাসা ভাংচুর করার যে অপচেষ্টা তার বিচার হওয়া উচিত। তিনি বিষয়টিতে মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সূত্রমতে, সোমবার বিকেল চারটার দিকে হঠাৎ করেই সিটি কর্পোরেশনের দুটি ময়লা বহনের গাড়ি ও একটি বুলডোজার কলেজ রো-তে প্রবেশ করে মানুষ চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়। পরে রোড ইন্সপেক্টর অনিক ও সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে সাংবাদিক নেতা এসএম জাকির হোসেনের বাসা ভাঙ্গার প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে এসে রোড ইন্সপেক্টরদের কাছে উচ্ছেদের নির্দেশপত্র দেখতে চান। তিনি কোন ধরণের উচ্ছেদের নির্দেশপত্র দেখাতে পারেননি। একপর্যায়ে রোড ইন্সপেক্টররা উত্তেজিত হয়ে দফায় দফায় ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাঈদ আহম্মেদ মান্নার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে থাকেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মোঃ আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশ কর্মকর্তারা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের কাছে উচ্ছেদের নির্দেশনামা দেখতে চান। সিটি কর্পোরেশনের রোড ইন্সপেক্টররা নির্দেশপত্র দেখাতে না পেরে জানান, বিষয়টি কাউন্সিলর মান্না জানেন। তখন বিধানমত নোটিশ দিয়ে ভবন ভাঙ্গার কথা বলে পুলিশ কর্মকর্তারা সবাইকে চলে যেতে বলেন। একপর্যায়ে সবাই চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাঈদ আহম্মেদ মান্না। তিনি অকথ্য ভাষায় সাংবাদিক নেতা জাকির হোসেনকে গালিগালাজ করতে থাকেন।
পরবর্তীতে কাউন্সিলর মান্না মোবাইল ফোনে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল, স্টেট কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধা ও বিভিন্ন পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। একইসাথে আরও দুটি বুলডোজার, ময়লা বহনের চারটি গাড়ি আনা হয়। উত্তেজিত কাউন্সিলর মান্নার বুলডোজারের ওপর দাঁড়িয়ে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের নির্মাণাধীন ভবন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিক জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে না থাকলেও তার ভাই হায়দার মিয়া, স্ত্রী ও সন্তানরা সিটি মেয়রের নির্দেশ ছাড়া ভবন ভাংচুর না করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও মান্না শান্ত না হয়ে উল্টো দ্রুত ভবন ভাঙ্গার জন্য বলেন। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আবারও উপস্থিত হন পুলিশের কর্মকর্তারা। তারা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে নির্দেশপত্র থাকলে ভবন ভাঙ্গতে বলেন। তাতে পুলিশ সহায়তা করার কথাও বলেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মান্না তখনও বারবার বুলডোজার চালু করে ভবন ভাংচুরের নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল রোড ইন্সপেক্টরদের কাছ থেকে জেনে নিশ্চিত হন, অভিযান চালাতে আসা ভবনটি ভাঙ্গার জন্য মেয়র নির্দেশ দেননি বা রোড ইন্সপেক্টরদের কাছেও কোন নির্দেশপত্র নেই। শেষে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে কোন বক্তব্যও দিতে রাজি হননি।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু, প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের মৎস্য ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তারা সড়কে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টাকারীদের দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার জন্য বলেন। এরপর রাত পৌনে নয়টার দিকে সড়ক ছেড়ে বুলডোজার, ময়লা বহনের গাড়ি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা চলে যান।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, আমার নির্মাণাধীন ভবন ভাংচুরের যে চেষ্টা চালানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ব্যাক্তি আক্রোশে। আমি নিয়ম মেনেই ভবন নির্মাণ করেছি। তারপরেও কোথাও সমস্যা হলে বিধানমত লিখিতভাবে জানাতে পারতো। কিন্তু তা না করে একজন কাউন্সিলর আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে এই কাজ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে ২৫০০ পিস ইয়াবা ও নগদ এক লাখ টাকাসহ দুইজনকে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার বাসার চতুর্থ তলা থেকে আটক করা হয়। ওই সংবাদ ১৪ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এ সংবাদের জন্য কাউন্সিলর সাঈদ আহম্মেদ মান্না সাংবাদিক নেতা জাকির হোসেনের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়। সেই ক্ষোভ থেকে সাংবাদিক নেতার ভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালান মান্না।