কচুয়ার গজালিয়া ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে গত ১৫দিন ধরে মূল্যবান অর্জুন গাছ কেটে নিধন যজ্ঞ শুরু করেছে সামাজিক বন বিভাগ। স্থানীয় মানুষেরা গাছের মালিকানায় অংশীদার থাকা সত্বেও জানেনা হঠাৎ প্রায় ১৩শ অর্জুন গাছ কেটে নেয়ার কারণ কি? স্থানীয় মানুষের দাবী, গ্রামে অন্তত কিছু অর্জুন গাছ যাতে থাকে সেই ব্যবস্থা করা হোক। এদিকে, গাছের মালিকানায় অংশীদার স্থানীয় মানুষ-যাঁরা গত ২০ বছর ধরে গাছগুলোর পরিচর্যা করেছেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ এখনো তাদের ন্যায্য পাওনা পায়নি। ভবিষ্যতে পাবে কি-না তাও নিশ্চিত নয়। এ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শকালে গজালিয়া গ্রামের চুন্নু শেখ, জাকির শিকদার, আবদুল হান্নানসহ বিভিন্ন পেশাজীবির সাথে কথা হয়। তারা জানান, হঠাৎ করে সরকারি লোকেরা এই গাছ কেটে নিচ্ছে। বাধা দিলে মামলার ভয় আছে! যে রাস্তার দুই পাশ হতে এই মূল্যবান গাছগুলো কাঁটা হচ্ছে সেই রাস্তা ভালভাবে সচল আছে এবং রাস্তাটি বড় করার কোন উদ্যোগ নেই। তারপরেও কেন এই ক্ষতি তা তাদের বোধগম্য নয়। গাছগুলো কেটে নেয়ায় রাস্তাটি খা খা করছে!
গজালিয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন জানান, ‘হঠাৎ করে এই গাছগুলো বন বিভাগের লোক কাটছে। ওই সামাজিক বনায়নে ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ ভাগ অংশীদারিত্ব মালিকানা রয়েছে। যা এখনো পরিশোধ হয়নি!’
সামাজিক বনায়নের গজালিয়া সমিতির সভাপতি ছানাউল্লাহ বাচ্চু বলেন, ‘২০০০ সালের দিকে অর্জুন গাছগুলো লাগানো হয়। সমিতির ৯০ জন সদস্য প্রত্যেকের বাড়ির সামনের গাছগুলো পরিচর্যা ও রক্ষণা বেক্ষণ করেন। গজালিয়া বাসস্ট্যান্ড হতে বিষেরখোলা সেন্টার ভায়া আলিয়া মাদ্রাসা ও মোচন শেখের বাড়ি হতে আবদার মাতবরের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশ জুড়ে ছিল অর্জুন গাছ। প্রায় ৪৫-৫০ ফুট লম্বা নয়নাভিরাম গাছগুলো হঠাৎ করে কাঁটা শুরু হয়েছে। তাদের প্রত্যেক সদস্যকে গাছের মালিকানা অংশের ৫৫ ভাগ টাকা দেয়ার কথা। গাছ কাটতে বাধা দিলে বন বিভাগের কর্মকর্তা চিন্ময় মধু তার অফিসে প্রত্যেকের ছবি, মালিকানা দলিলের কপি ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে বলেন।’
বাগেরহাট সামাজিক বন বিভাগের বন কর্মকর্তা চিন্ময় মধু জানান, তিনটি লটে প্রায় ১৩শ’ গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে কাঁটা হচ্ছে। এটা গত অর্থ বছরের বরাদ্দে ছিল। গাছের মালিকানায় যাদের অধিকার আছে তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।
কচুয়ার সরকারী শহীদ শেখ আবু নাসের মহিলা ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক যমুনা গোলদার বলেন, ‘মহামূল্যবান ঔষধি গাছ অর্জুন লোব্লাডপ্রেসার, রক্ত আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানীসহ অন্তত ১৪টি রোগের চিকিৎসায় অর্জুন গাছের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অর্জুনকে রক্ষায় সবাই আন্তরিক থাকতে উচিৎ।