মানুষ যখন নির্জনতার শান্তি খোঁজে ঠিক তখনই ব্যস্ত শহরকে পিছনে ফেলে ছোটে পাহাড়ের নেশায়৷ আর সেই চাহিদা পূরণের আদর্শ ঠিকানা সিকিম যা শিলিগুড়ি থেকে ১৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সিকিমের দক্ষিণে এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম আপনার অশান্ত মনকে দেবে ক্ষণিকের শান্তির ঠাঁই৷ গ্রামের পাশেই একেবেঁকে চলেছে খরস্রােতা রংগিত নদী৷ রয়েছে ‘রিভার রাফ্টিং’ এর ব্যবস্থা৷ অলস সময় কাটাতে চাইলে ‘রাফ্টিং’ বাদ দিয়ে ক্যাম্প খাটিয়ে পাহাড়ি নদীতে মাছ ধরার সাধপূরণ করতে পারেন৷ জনপ্রিয় জোরেথাং এর দূরত্বও সিকিপ থেকে এমন কিছু দূরে নয়৷ আর রংগিত নদীররসধমবউপরে সুন্দর ব্রিজটি দেখতে ভুলবেন না৷ চাইলে পাহাড়ি গ্রামটিও ঘুরে দেখে আসতে পারেন৷ ছোট-ছোট ঝরনা, বৌদ্ধ নিদর্শন, অর্কিডের সারি আপনার মনে ধরতে বাধ্য৷
লাচুং : ভারতের নর্থ সিকিমের একটা গ্রাম যা গ্যাংটক শহর হতে ৯ হাজার ৬০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। প্রকৃতির নৈসঃর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্যে নিঃসন্দেহে খুব উপরের দিকেই জায়গা করে নেবে। এত সুন্দর, নিরালা ছবির মত পাহাড়ি গ্রাম সিকিম এ খুব কমই পাবেন।গ্যাংটক থেকে লাচুং পর্যন্ত আপনার সঙ্গী হয়ে থাকবে প্রকৃতির অপরূপ শোভা, আর অসংখ্য পাহাড়ি ঝর্না যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লাচুং আসার পথের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে। প্রকৃতির কোলে ছবির মতো সেজে আছে লাচুং নামের এই পাহাড়ি গ্রাম। জনবসতি খুবই কম। পাহাড় ও বনভূমি নিঝুম।পাশে বয়ে চলেছে তিস্তা। এই তিস্তারই শাখা প্রশাখা নদী লাচুং ও লাচেন ।
রাতটা লাচুং এ কাটিয়ে পর দিন সকালে যাত্রা শুরু করুন ইয়ুমথাং ভ্যালীর দিকে। লাচুং থেকে দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। ১১,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ইউমথাং উপত্যকা শীতকালে পুরোপুরি ঢেকে যায় শ্বেতশুভ্র বরফচাদরে, তখন তার এক অন্য রূপ। বাকি সময় সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়া এই উপত্যকা, আর নীলরঙা নদীর বয়ে চলা মুগ্ধ করবে ভ্রমণপিপাসু মানুষজনকে। উপত্যকার শুরুতেই রয়েছে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ। ইউমথাং উপত্যকা দেখে এ বার শিবমন্দির পেরিয়ে পৌঁছে যান ইয়ুমেসামডং বা জিরো পয়েন্ট।
ইয়ুমথাং থেকে জিরো পয়েন্টের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। চীন সীমান্ত কাছাকাছি বলে সাধারণ পর্যটকদের এই পর্যন্তই যাওয়ার অনুমতি মেলে না সহজে ।এর জন্য আগে তেকে পারমিট নিতে হয় । ১৫০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ইয়ুমেসামডং-এর অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নজর কাড়বেই। লাচুং থেকে অন্য একটি রাস্তা (নদীর উপর ব্রিজ পেরিয়ে) ধরে পৌঁছনো যায় বরফের রাজ্য কাটাও যা লাচুং থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যদিও পর্যটকদের জন্যে অফিসিয়ালি এটি বন্ধ কিন্তু স্থানীয় ড্রাইভার এবং ট্যুর এজেন্টরা পারমিট ম্যানেজ করে দিতে পারে।
লাচুং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়ঃ
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অত্যধিক বরফের জন্য আবার বর্ষাকালে (জুন-অগস্ট) রাস্তা প্রায়শই ভেঙে যাওয়ার কারণে লাচুং ভ্রমণ কিছুটা অনিশ্চিত হলেও বছরের বাকি যেকোন সময় লাচুং ভ্রমণে যাওয়া যায়। এপ্রিল-মে মাসে ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার’ ইউমথাং উপত্যকা ভরে থাকে বিভিন্ন রঙের রডোডেনড্রনে, সঙ্গে প্রিমুলা ও অন্য নানান প্রজাতির ফুলও শোভা বাড়ায় সেই অসাধারণ সৌন্দর্যে।