চট্টগ্রামে বৈধ রিক্সার মালিক-চালকদের রীতিমত ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বার বার আবেদন-নিবেদন করেও বন্ধ করা যায়নি অবৈধ রিক্সা। এতে পথের ভিখারী হচ্ছেন বৈধ রিক্সার মালিকরা। আর অবৈধ রিক্সার মালিক-চালকদের চলছে এখন পৌষ মাস। সারা দেশে বর্তমান সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চলছে। এরইমধ্যে বহু দুর্নীতিবাজ আত্মগোপনে যাচ্ছেন। আবার প্রভাবশালীদের কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হচ্ছেন। কিন্তু ক্যাসিনোর চেয়েও খারাপ এই অবৈধ রিক্সা বন্ধে নেয়া হয়নি এখনো বাস্তব পদক্ষেপ। পুলিশ টাকার বিনিময়ে এই অবৈধ রিক্সা সড়কে চলতে সহযোগিতা করছেন। মাননীয় হাইকোটের বিজ্ঞ বিচারকরাও ইতঃপূর্বে ওই অবৈধ রিক্সাগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এরপরেও পুলিশ, মালিক-চালকরা আইনের প্রতি তোয়াক্কা করছেন না। এই যেন আলোর নিচে আরেক অন্ধকার।
শনিবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি রিক্সা শ্রমিকলীগের উদ্যোগে শহরের খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে এক জরুরী সভায় শ্রমিকলীগ নেতৃবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন। এ সময় সংগঠনের সভাপতি মো. সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিকলীগ নেতা মহিউদ্দিন গাফফার, রফিক কোম্পানী, আবদুর রহিম কোম্পানী, আলী আজগর, নুরুল আলম, মো. সবুজ, মো. হান্নান ও মো. কাদের প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সভা শেষে শীর্ষ অনলাইন সংবাদ সংস্থা এফএনএসকে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকারে চট্টগ্রাম সিটি রিক্সা শ্রমিকলীগের সভাপতি মো. সেলিম আক্ষেপ করে বলেন, একটি ধনী পরিবারের দুইটি গাড়ী হলেই চলে। কিন্তু দেখা যায়; ধনীদের পরিবারের সদস্যরা ৫-৬টি গাড়ী নিয়েই প্রতিদিন রাস্তায় বের হচ্ছেন। স্টার লাইন, এস.আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, ড্রীমলাইন, লন্ডন, টি আর ট্রাভেলস, জোনাকী, শাহী, বিলাস, স্কাইনিয়া, হানিফ পরিবহনের মালিকরা ১০-১১টি বাসের রুট পারমিট পাওয়ার কথা। অথচ তারা মালিকরা ধনী হওয়ার কারণে প্রতিটি কোম্পানি ৫০-৯০টা বাস রাস্তায় নামিয়ে কোটি কোটি টাকা চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। ব্যক্তিগত গাড়ী এবং যত্রতত্র বাস মালিকদের রুট পারমিট দেয়ার কারণে সড়কে মূলত: যানজট লেগেই আছে। আর আমরা বৈধভাবে কয়েকটি রিক্সার লাইসেন্স নিয়েও ব্যবসা করতে পারছিনা। তৃণমূলে এভাবে আমরা চরম কষ্ট এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, আমাদের কোন রিক্সাই ফ্লাইওভারে উঠতে পারেনা। সেই ফ্লাইওভারে ধনীদের গাড়ীই চলে। চট্টগ্রাম শহরের ৪১ওয়ার্ডে আমার সংগঠনের কার্যক্রম আছে। আমরা জননেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাজার হাজার আদর্শের সৈনিক। কষ্ট করি সংগঠন তথা দলের জন্য। লালদীঘিতে আওয়ামী লীগের যে কোন সমাবেশ হলে আমার সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত সবাই পায়ে হেঁটেই সমাবেশে ছুটে যাই। আমরা শ্রমিক মানুষ। আমাদেরও পেট-পিঠ আছে। আমরাতো কারো কিছু চুরি করছিনা। দুর্র্নীতি করছিনা। আমরা বৈধভাবে রিক্সার ব্যবসা করে দু’বেলা ভাত খেতে চাই। অথচ আজ সেই ভাত খাওয়াও হচ্ছেনা। পকেটে টাকা নেই। রিক্সা বন্ধ। প্যান্ডেল চালিত রিক্সা চালকরা চালাতে চায়না। কারণ, অবৈধ রিক্সার দাপটে এগুলোতে যাত্রীরা উঠতে চায়না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, রিক্সার ব্যবসা খারাপের কারণে ঘরভাড়া এবং ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচও চালাতে পারছিনা। বার বার পুলিশ ব্যাটারী চালিত অবৈধ রিক্সা টাকার বিনিময়ে রাস্তায় চলাচলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। পুলিশ এভাবে বড় দুর্নীতি করলেও তাদের বিরুদ্ধে ওপরের মহল কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। আমি দ্রুত অবৈধ রিক্সাগুলো বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চাই। দীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে নিজ দল আওয়ামীগকে দিয়েই আসছি। অভাবে থাকলেও দলের পক্ষ থেকে কেউ এক কাপ রং চা পর্যন্ত খাওয়ায় নি। কিন্তু অভাবী কোন রিক্সার চালক আমার কাছে এলে তাকে অন্তত এক বেলা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করি। এটি শুধু দলকে এবং নেত্রীকে ভালবাসার কারণেই করছি। আশাকরি- একদিন না একদিন দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আমার মত একজন ক্ষুদ্র কর্র্মীর পাশে দাঁড়াবেন; সেই বিশ্বাস আমার আছে।
প্রসঙ্গত, প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম শহরে অন্তত এক লক্ষ রিক্সা চলাচল করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ রিক্সাই ব্যাটারী চালিত (মোটা এবং চিকন চাকার)। এসব রিক্সা প্রতিদিন প্রচুর বিদ্যুৎ অপচয় করছে। জামায়াত-বিএনপির কথিত শ্রমিক নেতারা হালিশহর থানা পুলিশকে দৈনিক হারে চাঁদা নিয়ে এ সকল রিক্সা সড়কে চলতে সাহায্য করছেন। এই রিক্সা যারা চালাচ্ছেন তারা শিশু-কিশোর। রিক্সার নেই লাইসেন্সও। এ ধরণের রিক্সা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাও চালায়। ওদিকে বৈধ পন্থায় ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে রিক্সা গ্যারেজের ব্যবসা করে আজ পথের ভিখারী হয়েছেন অনেকেই। গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে লেখালেখি হলে পুলিশ মাঝে মাঝে অবৈধ রিক্সার বিরুদ্ধে লোক দেখানো অভিযান চালায়। তাছাড়া অধিকাংশ রিক্সা গ্যারেজের ট্রেড লাইসেন্সও নেই। সরকার এতে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব লাইসেন্স বিহীন অবৈধ রিক্সা গ্যারেজ গুলোতে অসামাজিক কাজও চলে। বিএনপি-জামায়াতের কথিত শ্রমিক নেতারা এসকল গ্যারেজ থেকে মাসে মাসে মোটা অংকের চাঁদাও আদায় করছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও এসকল অবৈধ গ্যারেজে অভিযান নেই। বৈধ রিক্সার মালিকরা ওই অবৈধ রিক্সা বন্ধের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গত সপ্তাহে লিখিত অভিযোগ ডাকযোগে পাঠিয়েও কোন প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এই খবরে বৈধ রিক্সার মালিকদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।