মাছের বাজারে ইলিশে ভরপুর। সবেমাত্র নিষেধাজ্ঞার সময় পেড়িয়েছে। বাজারে ভরপুর ইলিশ থাকাটা কোনো খবর নয়! খবর হলো, ইলিশের পেটে কেন এত ডিম! পেটে ডিমে ভরপুর এসব ইলিশ যদি নিষেধাজ্ঞার পর ধরা হয়, তাহলে প্রশ্ন থাকে, মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞার সঠিক সময় নির্ধারণ হয়েছে কিনা? আর যদি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই এসব মা ইলিশ ধরা হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন থাকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইলিশ ধরা হয়েছিল। সেগুলো বাজারে আসেনি। সে ইলিশই এখন আসছে। যার জন্য বাজার ডিমওয়ালা ইলিশে সয়লাব।’
আমরা জানি, কতিপয় অসৎ জেলেরা নিষেধাজ্ঞা চলাকালে চুরি করে ইলিশ ধরার ধান্ধায় থাকে। কিন্তু তখন প্রকাশ্যে বিক্রি করার সুযোগ কম থাকায় গ্রামের কিছু ব্যবসায়ী মৎস্যশিকারিদের কাছ থেকে খুব কম দামে ইলিশ কিনে ফ্রিজ করে রেখে দেয়। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে, তাই তাদের মজুত ইলিশ বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সরকারি নানামুখী উদ্যোগের কারণেই মা ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। ঘরে ঘরেই এখন মিলছে ইলিশ। ইলিশ উৎপাদনে সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর সরকারও। সে আলোকেই গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। তবে এ উদ্যোগ আশানুরূপভাবে বাস্তবায়ন করা গেল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে। কারণ দেখা যাচ্ছে, বাজারে আসা বেশির ভাগ ইলিশের পেট ডিমে ভরা। তা ছাড়া নিষেধাজ্ঞা শেষে রাত না পোহাতেই অল্প সময়ে এত ইলিশ হাট-বাজারে কীভাবে এল, তা ভেবে ক্রেতারাও অবাক।
মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার সঠিক সময় নির্ধারণ হয়নি বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন জেলে ও ইলিশ ব্যবসায়ীরা। যদিও মৎস্য বিভাগ বলছে, মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম সফল হয়েছে। ইলিশ গবেষক, মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলেন, একটি বড় আকারের ইলিশ মাছ একবারে ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়তে পারে। এ ডিম ছাড়া নির্বিঘœ করতেই মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে আসছে সরকার।
আমরা আশা করছি সঠিকভাবে পর্যালোচনা ও ইলিশ প্রজননের মূল সময়টা চিহ্নিত করে প্রজনন সময় নির্ধারণের। কারণ, মা ইলিশ ডিম ছাড়তে না পারলে ভবিষ্যতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য মাছের তুলনায় ইলিশ উৎপাদনে কোনো খরচ নেই। শুধু পরিবেশ রক্ষা ও কিছু নিয়মকানুন মানলেই চলে। এসব ইলিশ যদি এখন ধরা না পড়তো তাহলে হয়তো আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়তো। মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রমকে যথাযথাভাবে সফল করা গেলে, সামনের মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন তিনগুণ থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করি।