নিজের অদম্য ইচ্ছে ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেয় অনেকেই অর্থাভাবে উন্নত পরিবেশে শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ বঞ্চিত হন। তাই সাধ্যের মধ্যে উন্নত পরিবেশে সুশিক্ষা নিশ্চিত করে সগৌরবে এগিয়ে চলছে লালমনিরহাট পুলিশ লাইন স্কুল ও কলেজ (ফাকল)।
জানা গেছে, অভাবের সাথে নিত্য লড়াই করে বেঁচে থাকা লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা চরাঞ্চলের ছেলে মেয়েরা নিজেদের অদম্য ইচ্ছে ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেয় উন্নত পরিবেশে আধুনিক শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ বঞ্চিত। তাই ২০০৫ সালে তৎকালীন পুলিশ সুপার মেজবাহ উদ্দিন পিপিএম লালমনিরহাট পুলিশ লাইন স্কুল (ফাকল) প্রতিষ্ঠা করেন। পরে প্রতিষ্ঠানটিতে লেখা পড়ার মান উন্নত হওয়ায় কলেজে রুপান্তরিত হয়। জেলা পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় এসপি পদাধিকারবলে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হবেন।
১৩ জন শিক্ষক ও মাত্র ৩শত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ ফাকলে বর্তমানে এক হাজার ১৩২জন শিক্ষার্থীর পাঠদানে শিক্ষক রয়েছেন ৩২জন। স্বল্প সময়ে সাফল্যে জেলার শীর্ষে থাকা ফাকল প্রাথমিক শাখা থেকে উচ্চমাধ্যমিকতথা কলেজ শাখায় উন্নীত হয়েছে। বর্তমান পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক পিপিএম সেবা ২০১৬ সালে এ জেলায় যোগদান করেই একাদশ শ্রেণির ক্লাস চালু করেন। সেই সাথে তিনি সমাজের বিত্তবানদের সাহায্যে ও ব্যাক্তিগত তহবিলে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৫ হাজার বর্গফুটের একটি চার-তলা ভিত্তি বিশিষ্ট তিন-তলা আধুনিক ভবন নির্মাণ করেন।
নতুন ভবনেই চলছে আধুনিক শিক্ষার পাঠদান। শ্রেণীর শ্রেণীকক্ষ ছাড়াও লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, শিক্ষকদের কমনরুম, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের অফিস কক্ষ, ডিজিটাল ওয়াশরুম, জিমনেশিয়াম, সেমিনার কক্ষ, অভিভাবকদের বসার স্থানও নির্মাণ করা হয়। শ্রেণিকক্ষসহ পুরো প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হয়। সফটওয়ারের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষামুলক তথ্য আদান প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইডি কার্ড প্রদার্শন করে শিক্ষক শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত করন। দুর্বল শিক্ষার্থীদের সহায়ক পাঠদানের ব্যবস্থা থাকায় গৃহশিক্ষকের প্রয়োজন হয় না। সব মিলে ফাকল এখন তিস্তা ধরলার পাড়ের অবহেলিত জনপদের আধুনিক শিক্ষার একটি সুতিকাগার।
কয়েক বছর ধরে জেলার শীর্ষে অবস্থান করা ফাকলের শিক্ষার্থীদের গত ২০১৮ সালের ফলাফলে দেখা যায়, এসএসসিতে শতভাগ পাশ করে ৮ জন গোল্ডেন এ প্লাস সহ ৭৩ জন এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়, জেএসসিতে শতভাগ কৃতকার্য করে ৫৩ জন এ প্রাস অর্জন করে এবং পিএসসিতে ৬৫ জন অংশ নিয়ে ৬২ জনই এ প্লাস পায় এবং বাকী তিনজন এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। শুধু অ্যাকাডেমিক শিক্ষায় নয়, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় একাধিকবার দেশ সেরা ক্রেস্ট ও সনদ অর্জন করে অবহেলিত এ জেলাকে দেশবাসীর কাছে পরিচিত করেন ফাকলের শিক্ষার্থীরা। শুধু ২০১৮ সালের পুরুস্কারের মধ্যে রয়েছে, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কাউট গ্রুপে চতুর্থ বার্ষিক ক্যাম্পে ও ক্রাইম প্রিভেনশন-২ (অস্ত্রবিহীন-আত্মরক্ষা) কোর্সে জাতীয় চ্যাম্পিয়ান, দ্বিতীয় আঞ্চলিক স্কাউট সমাবেশ এ চ্যালেঞ্জ-২ আমার বাড়ি দেশ সেরা পুরুস্কার, জাতীয় শিশু-কিশোর প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে ‘ক’ গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে লালমনিরহাট (ফাকল) পুলিশ লাইন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সবমিলে ফাকল পুলিশ লাইন স্কুলটি আধুনিক এবং মানসম্মত স্কুল হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করে চলেছে। এটি একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা ছাত্রদের পরবর্তীকালে আরও উন্নত, দক্ষ এবং ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থী হতে সহায়তা করছে বলে অভিভাবক ও স্থানীয়রা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ফাকল পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক পরিবেশে পাঠাদান আবশ্যক। যেখানে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্কে শিক্ষকদের পাঠদান গ্রহন করবে। আমরা সাধ্যের মধ্যে সেই উন্নত পরিবেশ দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। তাই ফলাফলে আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক পিপিএম সেবা বলেন, সকলের সাধ্যের মধ্যে আধুনিক ও যুগোপযোগি শিক্ষার সকল সুযোগ সুবিধা দেয়ায় সকল পেশার মানুষ তাদের সন্তানদের ফাকলে পাঠাচ্ছেন। শুধু পুথিগত বিদ্যাই নয়, প্রতিযোগিতার এ বিশ্বে যোগ্যতার প্রমান দিতে সকল বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে ফাকল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ফাকলের সাফল্যের ধারা অব্যহত রাখতে জেলার সকল শিক্ষানুরাগী ও অভিভাবকদের সহায়তা কামনা করেন তিনি।