গত ১৯ মার্চ সকালে ঢাকার প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেটে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় প্রাণ হারান ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী (২০)। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভে দুই দিন রাজধানীর রাজপথ কার্যত অচল থাকে। আবরারের মৃত্যুর পর তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই বাসটি আবরারকে চাপা দেওয়ার আগে গুলশানের শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় সিনথিয়া সুলতানা মুক্তা নামে এক তরুণীকে চাপা দিয়েছিল, মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী এতে আহত হন। এঘটনায় বিচার কার্যক্রম এখনও চলমান।
এরপর গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ (২১) নামে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এঘটনাতেও সারাদেশে আলোড়ন বয়ে যায়। আন্দোলন, সমালোচনা ও দাবির মুখে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয় এবং বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হয়।
এই দুই আবরারের পর আরও এক আবরারকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। গত ১ নভেম্বর বিকালে দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর একটি অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার (১৫)। আয়োজকরা তাকে কাছের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে না নিয়ে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই হাসপাতালটি ওই অনুষ্ঠান আয়োজনের অংশীদার বা স্পন্সর ছিল।
আবরারের মৃত্যুর সংবাদ জানার পরও বিষয়টি দর্শকদের কাছে চেপে রেখে অনুষ্ঠান চালিয়ে গেছেন আয়োজকরা। এমনকি মহাখালীর বেসরকারি ইউনিভার্সেল হাসপাতাল থেকে যখন আবরারের মৃত্যুর সংবাদ আসে তখন মঞ্চে গান চলছিল। আবরার যখন বিদ্যুস্পর্শে আহত হলো তখন কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা উপস্থিত সবাইকে জানাতে কিংবা বৈদ্যুতিক তারের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক পর্যন্ত করেননি। অনুষ্ঠান আয়োজক ও কলেজ কর্তৃপক্ষের এ দায়িত্বজ্ঞানহীনতা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আবরারের মৃত্যু দৃশ্যত দুর্ঘটনা হলেও এটি আসলে একপ্রকার হত্যাকা-। আয়োজকদের অবহেলা এবং একজন ছাত্রের জীবনকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিৎ। এঘটনায় রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।