বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব, টানা ৩০ বছর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, অবিভক্ত ঢাকা সিটির সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়র, সফল ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ মরহুম মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন যখন মেয়র হয়ে এসেছেন, তিনি জনগণের হয়ে কাজ করতে পারবেন এ রকম একটা আস্থা ছিলো সবার। সর্বসাধারণের প্রত্যাশা ছিলো ঢাকাকে একটি নান্দনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন। কিন্তু সাঈদ খোকন সেটি পারেননি। এমনকি বিভিন্ন সময় কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শাস্তিও দিয়েছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ অত্যন্ত সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন, সাঈদ খোকনের মতো আয়েশী ও রাজকীয়ভাবে চলতেন না। মরহুম মেয়র হানিফের প্রতি সকলের অফুরন্ত ভালোবাসার আবেগে, তার সন্তান হিসেবে সাঈদ খোকনের প্রতি জনগণের আশা-আকাঙ্খা ও সমাজ কল্যাণসহ নাগরিক সুবিধাসম্বলিত সেবাধর্মী কাজের ব্যাপক চাহিদা ছিলো। এক্ষেত্রে সাঈন খোকন কিছু সেবামূলক কর্মকা- করতে পারলেও বেশিরভাগ সেবাই বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
ইতোমধ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক বার্তা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও উত্তর সিটির মেয়র নগরবাসীকে সেবা দিতে খুব বেশি সময় পাননি। কিন্তু দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সাঈদ খোকন বলেছিলেন, এক সময়ের ঐতিহ্য আর বর্তমানের ঘিঞ্জি-আতঙ্কের পুরনো ঢাকাকে ‘স্বপ্নের ঢাকা’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। সরু অলিগলির পুরান ঢাকাসহ রাজধানীবাসীকে নিত্যদিন যানজটের যে বিড়ম্বনা পোহাতে হয় তা থেকে উত্তরণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন। সাঈদ খোকন নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলেন- যানজট নিরসন, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করা, দূষণমুক্ত বুড়িগঙ্গা, পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর মহানগরী প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবেন। তার এসব প্রতিশ্রুতির কয়টি তিনি বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন, তা তারও বোঝার বাকী থাকার কথা নয়। পরিচ্ছন্নতার মতো সাধারণ একটি বিষয়, যা তার সাধ্যের বাইরে ছিলো বলে আমরা মনে করি না। অথচ বর্তমানে দক্ষিণ সিটির নাগরিকরা চরম অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করছেন।
বরাবরই আমরা দেখছি, নির্বাচনি ইশতেহার একটি গৎবাঁধা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আমাদের দেশের জনগণও হয়েছেন অতি রাজনীতি পরায়ণ। জনগণ যোগ্য প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে পছন্দের দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেন। সর্বসাধারণের এ বিবেচনা আসতে হবে, দল থেকে দেশ বড়। যতদিন জনগণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ভোট না দিতে চাইবেন ততদিন পর্যন্ত প্রতারণার শিকার হতে হবে বলে আমরা মনে করি। জাতীয় জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে দুর্বৃত্তায়ন চলছে। যে যত বড় মাপের দুর্বৃত্ত, সে তত বড় ক্ষমতাবান। বর্তমানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি চলছে। নির্বাচনের ইশতেহার দিলেও নির্বাচিত হওয়ার পর সেটি বাস্তবায়ন না করলেও কোনো জবাবদিহিতা নেই দেশে। এজন্য রাজনীতি পরিবর্তন ও নীতি-আদর্শ ঠিক করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।